ভাটপাড়া, 11 ডিসেম্বর: ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সাংসদ-বিধায়কের তরজা থামার যেন বিরাম নেই ! দুই তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং এবং সোমনাথ শ্যামের সংঘাত দিনদিন বেড়েই চলেছে । অর্জুন-সোমনাথের এই খেয়োখেয়ির জেরে অস্বস্তিও বেড়েছে তৃণমূলের অন্দরে । এসবের মধ্যেই এবার সাংসদ অর্জুন সিং-কে 'ডিভোর্সি নেতা' (তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার প্রসঙ্গে) বলে কটাক্ষ করলেন জগদ্দলের বিধায়ক তৃণমূলের সোমনাথ শ্যাম । বললেন, ‘‘উনি তো এক সংসার ছেড়ে অন্য সংসারে গিয়ে হাত ধরেছিলেন । সেখানে দু-চার বছর সংসারও করে ফেললেন । আবার কি ভাবছেন, পুরনো সংসারে ফিরে আগের মতো মর্যাদা পাবেন !"
প্রসঙ্গত, তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব খুনে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের আত্মীয় পাপ্পু সিং জড়িত বলে এর আগে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম । সাংসদের প্রভাবের কারণেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করছে না বলেও দাবি করেছিলেন তিনি । সেই সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন খুনিদের আশ্রয়স্থল মেঘনা জুটমিলের নামও । এছাড়াও সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগ তুলেছিলেন ৷
24 ঘণ্টার মধ্যেই বিধায়কের অভিযোগের পালটা জবাবও দেন ব্যারাকপুরের সাংসদ ও দাপুটে তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং । ভাটপাড়ায় দলীয় সভামঞ্চ থেকে রীতিমতো সোমনাথ শ্যামকে বিঁধে তাঁকে 'পোল্ট্রির মুরগি'-র সঙ্গে তুলনা করেন । এমনকি, বিধায়কের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে অর্জুন বলেন, "ক্ষমতা থাকলে তৃণমূলের ঝান্ডা বাদ দিয়ে জগদ্দল বিধানসভা থেকে জিতে দেখাক । বুঝবো কত ধানে কত চাল ৷" ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের সংগঠন গড়ার পিছনে নিজের অবদানের কথাও তুলে ধরেছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং ।
সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে সাংসদ অর্জুন সিং-কে 'ডিভোর্সি নেতা' বলে নিশানা করলেন জগদ্দলের বিধায়ক । প্রশ্ন তুলেছেন ব্যারাকপুরের সাংসদের বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে আসার কারণ নিয়েও । সোমনাথের কথায়, "উনি (অর্জুন সিং) বারবার তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা বলছেন । উনি যদি জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল পার্ট-টা করে থাকেন, তাহলে বিজেপিতে গেলেন কেন ? আবার ফিরেও এলেন কেন ? মামলার ভয়ে ? অসমের মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, উনি তো মামলার ভয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে । ওঁর মন-প্রাণ এখনও বিজেপিতেই পড়ে রয়েছে । সেটা ওঁর কর্মকাণ্ড দেখলেই বোঝা যায় । একই বাড়িতে পাহারায় মোতায়েন রয়েছে সিআইএসএফ ও রাজ্য পুলিশ ৷"
ভিকি যাদব খুনে নিজের বক্তব্যে অনড় থেকে এ দিন আবারও এই খুনের ঘটনায় সাংসদের আত্মীয় পাপ্পু সিংয়ের নাম তুলে ধরেছেন বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম । তাঁর কথায়, "তথ্য প্রমাণ ছাড়া আমি কোনও কথা বলিনি । আমি যে অভিযোগ করেছি, তাতে দিশেহারা হয়ে সাংসদ ব্যাক্তিগত আক্রমণ করতে শুরু করেছেন । ওঁর সৎ সাহস থাকলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিক । কিন্তু, তা না করে নিজের কয়েকজন পেটুয়া লোককে নিয়ে মঞ্চ বেঁধে আমার বিরুদ্ধে চিৎকার করছেন ।’’
সোমনাথের হুঁশিয়ারি, ‘‘আমিও চিৎকার করতে জানি । ওঁর বিরুদ্ধে অনেক কথাই বলতে পারি । আসলে উনি (অর্জুন সিং) বুঝতে পেরেছেন ভিকি যাদব খুনে পাপ্পু সিংয়ের নাম উঠে আসছে । তাই ওকে বাঁচাতে আসরে নেমেছেন । মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে উলটো-পালটা কথাবার্তা বলছে । কথায় আছে, পাগলে কি না বলে.... !"
এদিকে, চেয়ারম্যান থাকাকালীন ভাটপাড়া পৌরসভা এবং নৈহাটি-ভাটপাড়া কো-অপারেটিভ ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়েও এদিন সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম । আগামিদিনে এই সমস্ত দুর্নীতির ফাইল খুলে সাংসদ-কে জেলে পাঠানো হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি । অন্যদিকে, জগদ্দলের বিধায়কের আক্রমণের পর সাংসদ অর্জুন সিং পালটা সোমনাথ শ্যামের বিরুদ্ধে আগামীতে সরব হন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয় !
আরও পড়ুন: