নিউ ব্যারাকপুর, 8 অক্টোবর: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই হানা প্রসঙ্গে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন নিউ ব্যারাকপুর শহর তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তপন দাস । তাঁর কথায়, "পৌরসভায় চাকরি হয়েছে ঠিকই ! কিন্তু কোনও কর্মচারী হাইকোর্টে গিয়ে কি মামলা করেছে?"
রবিবার সকালে রাজ্যের বিভিন্ন পৌরসভার প্রাক্তন এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে কেন্ত্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ৷ পাশাপাশি এদিন নিউ ব্যারাকপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতেও হানা দেয় সিবিআইয়ের বিশেষ দল । খড়ের মাঠ বিল চত্বরে প্রাক্তন চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করে তল্লাশি অভিযান শুরু করে সিবিআইয়ের আধিকারিকরা । যা এখনও চলছে জোরকদমে। সিবিআইয়ের এই হানার পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখছেন তৃণমূল নেতা তপন দাস ।
এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিউ ব্যারাকপুর শহর তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি বলেন, "আপনারা যেভাবে বিষয়টি দেখছেন আমরাও সেভাবে দেখছি । এটা প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। অভিষেক বন্দোপাধ্যায় দিল্লির মাটিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি করে আসার পর থেকেই পালটা আঘাত আসতে শুরু করেছে পৌরসভাগুলির দিকে । রথীন ঘোষের মতো নেতার বাড়িতে যদি 19 ঘণ্টা ইডির আধিকারিকরা কাটাতে পারেন সেখানে দাঁড়িয়ে তো সুখেন মজুমদার, তৃপ্তি মজুমদারের মতো নেতা-নেত্রীদের দিকে আঘাত যে আসবে সেটাই স্বাভাবিক ৷"
এরপরই পৌর নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর সংস্থা ইডি ও সিবিআইয়ের দিকে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন এই তৃণমূল নেতা । তপন দাসের বক্তব্য, "একজন কর্মচারী কি চ্যালেঞ্জ করেছে কোর্টে গিয়ে ! টাকা নিয়ে চাকরি হয়েছে? দুর্নীতি হয়েছে নিয়োগের ক্ষেত্রে? এসব তো প্রতিহিংসার রাজনীতি । ক্ষমতায় যতদিন রয়েছে চলবে ৷" এদিকে ক্ষমতা থেকে সরে গেলে বিজেপিকে পালটা দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন এই তৃণমূল নেতা ।
আরও পড়ুন: 'দুর্নীতি প্রমাণ হলে গঙ্গায় ঝাঁপ দেব', সিবিআই যেতেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন মদন
এদিন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের দক্ষিণেশ্বরের অফিসেও হানা দিয়েছে সিবিআইয়ের বিশেষ দল । অফিসের তালা খুলে সেখানে ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন আধিকারিকরা । বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করছেন তাঁরা । পৌর নিয়োগ দুর্নীতিতে বিধায়ক মদন মিত্রের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখাই মূলত সিবিআইয়ের আধিকারিকদের উদ্দেশ্য বলে জানা গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে ।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে অয়ন শীলের বাড়ি ও সল্টলেকের অফিস থেকে বিভিন্ন তথ্য হাতে পায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । সেই তথ্য ঘেঁটেই সামনে আসে পৌর নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ। এরপরই রাজ্যের একাধিক পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তে নামেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পৌরসভা যেমন টিটাগড়, কামারহাটি, ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম ছাড়াও হুগলির একাধিক পৌরসভা এবং দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মন্ডহারবার পৌরসভাকে নোটিশ পাঠানো হয় ।
আরও পড়ুন: একসঙ্গে 12 জায়গায় হানা, পুজোর মুখে সাঁড়াশি অভিযান সিবিআইয়ের
সংশ্লিষ্ট নোটিশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে চান,বিভিন্ন পৌরসভায় যে নিয়োগ হয়েছিল, সেই নিয়োগে কতটা স্বচ্ছতা মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল । তার বিস্তারিত রিপোর্ট তাঁরা হাইকোর্টকেও জানাতে চান । কিন্তু তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হয়, নোটিশ দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলির তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি ৷ এরপরেই চলতি সপ্তাহে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে প্রায় টানা 19 ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান চালান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা । মূলত পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তিনি কী কী জানেন, তা জানার জন্যই 19 ঘণ্টা ধরে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে ।