বারাসত, 14 ডিসেম্বর: প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা হোক কিংবা পরিবহণ সংক্রান্ত নানান সুবিধা ৷ বেআইনি কাজ হাসিল করতে সরকারি কর্মীদের উপর বারবার চাপ সৃষ্টি করা যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাজ্যে ! কিছুদিন আগেই উত্তর 24 পরগনার স্বরূপনগরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (Pradhan Mantri Aawas Yojana) প্রকল্পের সমীক্ষায় গিয়ে এক আইসিডিএস কর্মীকে চরম অপমানিত হতে হয় বলে অভিযোগ ওঠে ৷ এমনকী দুর্নীতিতে সায় না-দেওয়ায় শাসকদলের তরফে মানসিক চাপে শেষ পর্যন্ত তাঁকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই পরিবহণ দফতরের কর্মীদের একাংশের উপর চাপ তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে ৷ এক্ষেত্রেও কাঠগড়ায় এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ৷ ঘটনাস্থল উত্তর 24 পরগনার সদর শহর বারাসত ৷ অভিযোগ পরিবহণ সংক্রান্ত বেআইনি কাজ হাসিল করতে, জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কর্মীদের একাংশের ওপর লাগাতার চাপ তৈরি করছেন বাবলু ঘোষ নামে ওই তৃণমূল নেতা (TMC Leader Allegedly Pressurised Barasat RTO Workers to Do Illegal Work) ৷ এমনকী পরিবহণ দফতরের কর্মীদের শাসানোর অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে ৷ বাবলু ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগও জমা পড়েছে জেলাশাসকের দফতরে ৷ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয় বলে সাফাই দিয়েছেন বাবলু ঘোষ ৷ তবে, বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, কার্যত তা এড়িয়ে গিয়েছেন জেলা পরিবহণ দফতরের কর্মী থেকে আধিকারিক সকলেই ৷
বারাসতে জেলাশাসকের দফতরের ঠিক উলটোদিকেই রয়েছে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কার্যালয় ৷ গাড়ি রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ড্রাইভিং লাইসেন্স, পরিবহণ সংক্রান্ত নানা পরিষেবার জন্য সাধারণ মানুষকে আসতে হয় এখানে ৷ কিন্তু, সেই সুবিধা পেতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের দালালদের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ যার জেরে লাইনে দাঁড়িয়ে পদ্ধতি মেনে পরিষেবা পেতে রীতিমতো কালঘাম ছুটছে সাধারণ মানুষের ৷ অগত্যা নিরুপায় হয়ে অনেকেই চটজলদি পরিষেবা পাওয়ার আশায় দালালদের কাছে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ৷ অভিযোগ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের থেকে অতিরিক্ত টাকাও আদায় করে দালালদের একাংশ ৷
কিন্তু, এই দালালরাজ উৎখাত করতে জেলা প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের ৷ যার মাশুল প্রতিনিয়ত গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের ৷ অভিযোগ দিনদিন দালালদের দাপটে একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তাঁরা ৷ এসবের মধ্যে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে দাদাগিরি করার অভিযোগ উঠেছে ৷ জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতা বাবলু ঘোষও পরিবহণ সংক্রান্ত কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ৷ পরিবহণ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম দেখভালের জন্য তাঁকে আবার সংগঠনগতভাবে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে ৷
আরও পড়ুন: আবাস যোজনার কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে শিলিগুড়িতে বিক্ষোভ আশা-আইসিডিএস কর্মীদের
তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, নিজের বেআইনি কাজ হাসিল করতে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কর্মীদের একাংশের ওপর লাগাতার চাপ এবং শাসানোর অভিযোগ উঠেছে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ৷ যে অভিযোগকে ঘিরে এখন সরগরম বারাসতের রাজনীতি ৷ এই বিষয়ে দীপ্ত কুমার লস্কর নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আরটিও অফিসে দালালদের হাত এতটাই লম্বা যে, তাঁরা সরকারি কর্মী এবং আধিকারিকদের হুমকি পর্যন্ত দিতে পিছুপা হয় না ৷ এর পিছনে নিশ্চই বড় কোনও হাত রয়েছে ৷ আমরা চাই জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ কার্যালয় দালাল মুক্ত হোক ৷ তাহলেই সাধারণ মানুষ তাঁর পরিষেবা ঠিকঠাকভাবে পাবে ৷’’
এই ইস্যুতে তৃণমূলকে নিশানা করেছে গেরুয়া শিবির ৷ বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের শাসানি এবং চাপের কাছে এখন সরকারি আধিকারিকরা নতি স্বীকার করেছেন ৷ ইচ্ছা হলেও তাঁরা পদ্ধতি মেনে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে, ওই তৃণমূল নেতা গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে বসে আছেন ৷ সেই কারণেই বেআইনি কাজ করার জন্য তাঁকে সরকারি কর্মীদের উপর চাপ দিতে হচ্ছে ৷ এখানে সব কাটমানির ব্যাপার ৷ গোটা তৃণমূল দলটাই তো দুর্নীতিগ্রস্ত ৷ তাই এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই ৷ অবিলম্বে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত প্রশাসনের ৷’’
যদিও, এই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতা বাবলু ঘোষ দাবি করেছেন, "আমি কারও উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করিনি ৷ আরটিও অফিসে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন আপনারা ৷ তাই যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ৷ এর কোনও সারবত্তা নেই ৷" অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক প্রদীপ মজুমদার বলেন, "সবে 6 মাস হয়েছে আমি এখানে দায়িত্বে এসেছি ৷ তাই বিষয়টি নিয়ে ঠিক আমরা জানা নেই ৷ অভিযোগ জমা পড়ে থাকলে তা জেলাশাসকই বলতে পারবেন একমাত্র ৷ আমরা যথেষ্ট দায়িত্ব সহকারে এবং পদ্ধতি মেনে কাজ করে থাকি ৷ কোনও অনৈতিক কাজ হয় না এখানে ৷"