মধ্যমগ্রাম, 21 মে: 12 বছর পর শাসনে খুলেছিল সিপিএমের পার্টি অফিস । একমাসও কাটল না । সেই পার্টি অফিসেই তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে । চেয়ার, টেবিল ভাঙচুরের পাশাপাশি ভেঙে ফেলা হয়েছে পার্টি অফিসের দরজাও । ফেলে দেওয়া হয়েছে লাল ঝান্ডা । এমনই অভিযোগ ঘিরে রবিবার সরগরম হয়ে ওঠে উত্তর 24 পরগনার শাসনের কৃষ্ণমাটি এলাকা । চলে অবরোধ-বিক্ষোভও । যদিও ঘটনার নেপথ্যে সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের । আর এই ইস্যুতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তেতে রয়েছে বারাসত 2 নম্বর ব্লক ।
গত 28 এপ্রিল পুলিশি নিরাপত্তায় শাসনে তুমুল উৎসাহের সঙ্গে এই পার্টি অফিসটি খুলেছিল সিপিএম । সেদিনই তৃণমূল দল ছেড়ে অসংখ্য কর্মী-সমর্থক লাল ঝান্ডা তুলে নিয়েছিলেন হাতে । 12 বছর পর 'শান্তিময় স্মৃতি ভবন'-নামে ওই পার্টি অফিসটি খোলার পিছনে মূল কারিগর ছিলেন সিপিএমের ডাকাবুকো জেলা নেতা আহমেদ আলি খান । এরপর থেকেই নিয়মিত সেখানে বারাসত 2 নম্বর ব্লকের দলীয় নেতা-কর্মীরা বসতে শুরু করেন । গত শুক্রবারও তৃণমূলের দু'জন বুথ সভাপতি-সহ প্রায় তিনশো কর্মী যোগ দেন সিপিএমে । ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে লাল ঝান্ডার ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি হচ্ছিল বারাসত 2 নম্বর ব্লকে বলে দাবি সিপিএমের । তারই মধ্যে এবার শাসনে 12 বছর পর খোলা সিপিএমের সেই পার্টি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে । যা ঘিরে আবারও তপ্ত হতে শুরু করেছে শাসনের রাজনীতি ।
ঘটনার বিরুদ্ধে রবিবার খড়িবাড়ি-মধ্যমগ্রাম রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা । দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তার টায়ার জ্বালিয়ে, বাঁশের ব্যারিকেড করে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা । প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে চলে এই অবরোধ কর্মসূচি । পরে, মধ্যমগ্রাম পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় । তবে, দুষ্কৃতীরা দ্রুত গ্রেফতার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা ।
এই বিষয়ে স্থানীয় সিপিএম নেতা শেখ জাহাঙ্গির আলম বলেন, "12 বছর পর এই পার্টি অফিসটি খোলা হয়েছিল । পার্টি অফিসে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ছিল । তা দেখে তৃণমূল আতঙ্কিত হয়ে এই পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছে । ভাঙচুর করেছে । প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পার্টি অফিসের । দমাতে না পেরেই এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ শুরু করেছে তৃণমূলিরা । পুলিশ এসে সবকিছু দেখে গিয়েছে । আমরা চাই দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক । নইলে আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব আমরা ৷"
এদিকে, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী । তাঁর কথায়, তৃণমূল এবং বিজেপি নয় । মানুষ এখন লাল ঝান্ডাকেই বিকল্প শক্তি হিসেবে বেছে নিচ্ছে । সেই কারণে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ লাল ঝান্ডার নিচে সমবেত হচ্ছে । সেটা বুঝতে পেরেই শাসকদল হিংসাত্মক রাজনীতি শুরু করেছে । দিনের বেলায় ক্ষমতা হল না ! সেইজন্য রাতের বেলা পার্টি অফিস ভাঙচুর করতে হল ! ওদের মানুষ অন্ধকারেই পাঠিয়ে দেবে । মানুষ আবার দিনের বেলাতেই ওই পার্টি অফিস চালু করবে । এটা যেন মাথায় রাখে ৷
অন্যদিকে, সিপিএমের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে শাসনের কীর্তিপুর এক নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি মান্নান আলি বলেন, "ওরা ওদের মতো করে পার্টি অফিস খুলেছে । সেখানে আমরা কোনও বাঁধা দিইনি । তাই, পার্টি অফিস ভাঙচুরের কোনও প্রশ্নই আসে না । এর পিছনে আমাদের কোনও ইন্ধনও নেই । সিপিএম নিজেদের দ্বন্দ্ব সামাল দিতে না পেরে এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করছে । আমাদের এত দুরবস্থা হয়নি যে ওদের পার্টি অফিসে হামলা চালাতে যাব ! প্রচার পেতেই সিপিএম এই সমস্ত আজগুবি গল্প তৈরি করছে ৷"
আরও পড়ুন: উর্দি খুলে তৃণমূলের জামাটা পরিয়ে দেবে মানুষ, পুলিশকে হুঁশিয়ারি সুজনের