বারাসত, 22 জুলাই: মালদার বামনগোলায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে নারী ও দলিত মহিলাদের হাল খুব খারাপ ! বামনগোলার ঘটনার পর এরাজ্যে সরকার আছে বলে মনে হয় না । মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে লজ্জায় ৷" শনিবার উত্তর 24 পরগনার বারাসতে সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসে দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে আসেন তিনি । সেখানেই এই প্রতিক্রিয়া দেন সুজন চক্রবর্তী ৷
তিনি আরও বলেন, "ভাবাই যায় না মণিপুরের ছায়া এরাজ্যের মালদাতেও । সেখানে নাকি দুই আদিবাসী মহিলাকে বিবস্ত্র করে সকলের সামনে নিগ্রহ করা হচ্ছে । তাও আবার সিভিক ভলেন্টিয়াদের উপস্থিতিতে । সেই নিগ্রহের ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । খবর পেয়ে পুলিশ এসে নিগৃহীত ওই দুই আদিবাসী মহিলাকেই উলটে গ্রেফতার করেছে । এটা আরও দুর্ভাগ্যের । ঘটনার কথা এখনও অবধি রাজ্যের কোনও মন্ত্রী কিংবা পুলিশ অস্বীকার করেননি । কোথায় যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ? এই ঘটনাও শিউরে ওঠার মতো ৷"
মালদায় বিবস্ত্র করে দুই মহিলাকে মারধর: বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য মালদার ওই ভিডিয়ো টুইট করে লেখেন, 19 জুন ঘটনাটি ঘটেছে মালদার বামনগোলার পাকুয়াহাটে । সোশাল মিডিয়ায় তার একটি ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যে । যেখানে দেখা যাচ্ছে দুই মহিলাকে ঘিরে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ । তার মধ্য থেকে প্রমিলা বাহিনী ওই দুই মহিলাকে বেধড়ক মারধর করছেন । চলছে জুতোপেটাও । ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন সিভিক ভলেন্টিয়াররাও । তাদের মধ্যে এক সিভিক আবার মহিলা । ফলে, মাত্র দু'জন সিভিক অত মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না । মারের চোটে দুই মহিলার পোশাক খুলে যাওয়ার উপক্রম । একসময় এক মহিলা সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে পড়েন । গোটা ঘটনাটি দাঁড়িয়ে থেকে উপভোগ করছেন প্রচুর মানুষ । তার মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি ।
আরও পড়ুন: দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ভিডিয়ো নিয়ে সরব বিজেপি, তদন্তে মালদা পুলিশ
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই তেড়ে ফুঁড়ে মাঠে নামেন বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা । স্মৃতি ইরানি থেকে অনুরাগ ঠাকুর সকলেই এই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সমালোচনায় সরব হন । প্রত্যেকেই নারী নির্যাতন ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তোলেন । যদিও ঘটনা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে পালটা রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা ।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এই নিয়ে আরও বলেন, "আমরা যখন মণিপুরের ঘটনায় শিউরে উঠছি, তখন মণিপুরের মতো এখানেও এই ঘটনা ভাবাই যায় না । রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ কিংবা ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, তা জানা নেই । মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কি না,তাও কেউ জানে না । ফলে, ঘটনাটি খুবই হৃদয় বিদারক এবং দুর্ভাগ্যের ৷"
পাঁচলা নিয়ে সুজনের প্রতিক্রিয়া: এদিকে, পাঁচলা কাণ্ডের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে এ দিন সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ভোটের আগে এবং পরে ক্রমাগত বিরোধীদের ওপর সন্ত্রাস, আক্রমণ হয়েছে । বিডিও-সহ অন্য সরকারি অফিসারদের ভোট লুঠের কাজে ব্যবহার করেছে শাসকদল । গণনার সময়েও ডাকাতি হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী তথ্য গোপন করছেন । তাই, মুখ্যমন্ত্রী কিংবা বিরোধী দলনেতা কী বলবেন তা বড় কথা নয় ! সবচেয়ে বড় বিষয় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে । মহিলারা আক্রান্ত হচ্ছেন । বামনগোলা, পাঁচলার মতো এরকম আরও অনেক ঘটনা খুঁজলে সামনে আসবে । মানুষের নিরাপত্তা প্রতি মুহূর্তে বিঘ্ন ঘটছে তৃণমূলের বাহিনীর দ্বারা । অথচ সরকার নির্বিকার ৷
আরও পড়ুন: মালদার ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতির অভিযোগ শশীর, সরব বাম-কংগ্রেসও