বারাসত, 11 জানুয়ারি: একে তো বাড়তি বয়স, তার উপর শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা উপসর্গ ৷ সেই অবস্থায় রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে সফল অস্ত্রোপচার করে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে (cancer patient) নতুন জীবন দিলেন চিকিৎসকরা । ঘটনাটি বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (Barasat Government Medical College and Hospital) ।
সূত্রের খবর, অস্ত্রোপচারের পর ছায়ারানী দে নামে বছর 77'র ওই প্রৌঢ়া এখন অনেকটাই সুস্থ । তাঁকে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে হাসপাতালের জেনারেল বেডে । তবে, পরবর্তী পর্যায়ের চিকিৎসা অর্থাৎ কেমোথেরাপি এখান থেকেই চলবে প্রৌঢ়ার । তার আগাম ব্যবস্থাও করা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে । ক্যানসার আক্রান্ত রোগী নতুন জীবন ফিরে পাওয়ায় চিকিৎসকদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেনি প্রৌঢ়ার পরিবার । বিশেষ করে হাসপাতাল সুপারের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন তাঁরা ।
জানা গিয়েছে, প্রৌঢ়ার বাড়ি উত্তর 24 পরগনার বারাসতের বিজয়নগরে । স্বামী মারা গিয়েছেন কয়েক মাস আগেই । চার ছেলের সামান্য উপার্জনে কোনওরকমে সংসার চলে তাঁর । তারই মধ্যে দুরারোগ্য পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হন তিনি । তা জানতে পেরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড় হয় প্রৌঢ়ার পরিবারের সদস্যদের । কী করবেন বুঝতে না পেরে শেষে তাঁরা যোগাযোগ করেন বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে । তাঁরই উদ্যোগে শুরু হয় ক্যানসার আক্রান্ত প্রৌঢ়াকে সুস্থ করার লড়াই ।
জেনারেল ফিজিসিয়ান রবীন মুখোপাধ্যায়, ওঙ্কোলজির সার্জেন রাজেশকান্তি শিকদার-সহ অন্যান্য চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত হয় মেডিকেল টিম । টিমের সঙ্গে সহযোগিতায় ছিলেন হাসপাতাল সুপার সুব্রত মণ্ডলও । দীর্ঘ চার ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচার করে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে কার্যত নতুন জীবন দিয়েছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের টিম । যদিও অস্ত্রোপচারের সময় প্রৌঢ়ার পাকস্থলীর দুই-তৃতীয়াংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে (Successful surgery of cancer patient ) ।
রোগীর পরিবার সূত্রে খবর, চারমাস ধরে পেটের সমস্যায় ভুগছিলেন ছায়ারানী দে । ঠিকমতো খেতেও পারছিলেন না । স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে সে-ও প্রৌঢ়ার রোগ ধরতে পারছিলেন না । আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় শেষে প্রৌঢ়ার পরিবারের সদস্যরা দ্বারস্থ হন বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ওঙ্কোলজির চিকিৎসক রাজেশকান্তি শিকদার । এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায় ওই প্রৌঢ়া পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত । জেলা হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নতি হওয়ার পর বারাসতে এই ধরনের অস্ত্রোপচার প্রথম বলে দাবি হাসপাতাল চিকিৎসকদের একাংশের । এদিকে,সফলভাবে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচার করতে পারায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি চিকিৎসকদের গোটা টিম ।
আরও পড়ুন: পথশিশু ও স্কুলছুটদের জন্য হাম ও রুবেলা টিকাকরণ অভিযান
মঙ্গলবার এই বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হাসপাতাল সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, "গত 29 ডিসেম্বর ওই প্রৌঢ়াকে হাসপাতাল নিয়ে আসা হয় । তখন তাঁর শ্বাসকষ্ট ছিল । হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও ছিল যথেষ্ট কম। তা সত্ত্বেও প্রৌঢ়াকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না । ঝুঁকি তো ছিলই ৷ তারপরও মানবিক দিক থেকে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম প্রৌঢ়াকে সুস্থ করতে । সফলভাবে অস্ত্রোপচার হওয়ায় ভালো লাগছে । এর অনুভূতিই আলাদা ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে থাকা চিকিৎসক রবীন মুখোপাধ্যায়ের গলায় । তাঁর কথায়, "অস্ত্রোপচার সফলভাবে হলেও ক্যানসারের সংক্রমণ ঠেকানোয় চ্যালেঞ্জ আমাদের কাছে । তবে এখনও পর্যন্ত সংক্রমণ সেভাবে ছড়ায়নি । আশা করছি কেমোথেরাপির চিকিৎসা চললে প্রৌঢ়া পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন ।"
আরও পড়ুন: কম খরচে সফল যকৃৎ প্রতিস্থাপন, অনন্য নজির জেলার হাসপাতালের
অন্যদিকে, হাসপাতাল চিকিৎসকদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রৌঢ়ার পুত্রবধূ মিনতিরানী দে বলেন, "হাসপাতাল সুপার যেভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত শাশুড়িকে সুস্থ করে তুলল, তা এককথায় অনবদ্য । সবার কাছে অনুরোধ করব, এই ধরণের রোগে কেউ আক্রান্ত হলে তাঁর পরিবার যেন চিকিৎসার জন্য আসে এই হাসপাতালে । এখানেও যে ক্যানসারের মতো মারন রোগের চিকিৎসা হয়, তা স্পষ্ট হবে অস্ত্রোপচার থেকেই ।"