ETV Bharat / state

Fire Crackers Smuggling: অত‍্যাধুনিক ল্যাবরেটরির পর এবার সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তায় ভরে বাজিপাচার !

একটা বিস্ফোরণের পর পুলিশি অভিযান শুরু হতেই একের পর বেআইনি বাজি উদ্ধার হচ্ছে দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রাম থেকে ৷ এবার সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তা করে বাজি পাচারের অভিযোগ উঠল ৷

Etv Bharat
বাজির বস্তা
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 30, 2023, 9:28 PM IST

সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তায় ভরে বাজি পাচার

দত্তপুকুর, 30 অগস্ট: অত‍্যাধুনিক ল্যাবরেটরির পর এবার সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তায় ভরে বাজি পাচার ! দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামে বিস্ফোরণস্থলের একেবারে কাছেই দুটি দোকান ঘরে এরকম কয়েকশো বাজির বস্তার হদিস পেল ইটিভি ভারত । যেগুলির প্রতিটিতেই কোনও না কোনও সরকারি সংস্থার ছাপ দেওয়া রয়েছে । পুলিশের চোখে ধুলো দিতেই বাজি কারবারিরা এই অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে । কিন্তু তারপরেও পুলিশ সেই সমস্ত বাজি ভর্তি বস্তা বাজেয়াপ্ত কিংবা দোকানঘর থেকে সরাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ । ফলে পুলিশের ভূমিকা সেই প্রশ্নের মুখে ! ঘটনার তিনদিন পরও মোচপোল গ্রাম যে বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে তা এতেই স্পষ্ট ৷

ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের মোচপোল গ্রাম এবং তার আশপাশে বাজিই যেন কুটির শিল্প ৷ এলাকার যেদিকেই চোখ যাবে সেদিকেই লক্ষ্য করা যাবে ছোট, বড়, মাঝারি মাপের বাজি তৈরির গোডাউন ৷ কেউ কেউ আবার ঘর ভাড়া নিয়ে বাজির কারখানা করে ফেলেছেন । গ্রামজুড়ে শুধুই বারুদ ! অনেকে একে বারুদের গ্রাম বলেও চেনে । স্থানীয়রা বলছেন আগে বারুদের এতটা রমরমা ছিল না গ্রামে । করোনা পরবর্তী সময়ে গ্রামের অনেক বেকার যুবক, এমনকি মহিলারাও তাতে যুক্ত হয়ে পড়েন । কারণ, পেটের তাগিদ ! বেশি টাকার প্রলোভন দেখিয়েও অনেক সময় বাইরে থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হত বাজি কারখানাগুলিতে । দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে মুর্শিদাবাদ যোগ তারই প্রমাণ । রাত জেগে সেখানে শ্রমিকরা বাজি ও বাজি তৈরির মশলা বানাতেন বলে অভিযোগ ।

এই কাজ সন্তর্পণে করার জন্য বিভিন্ন বাঁশঝাড়কেও বেছে নিয়েছিল বাজি তৈরির কারবারিরা । বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন জঙ্গল এবং বাঁশঝাড়ে বাজির উপকরণ ফেলে দিয়েই চম্পট দেয় শ্রমিকরা । যা এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিস্ফোরণ স্থলের আশেপাশে । মঙ্গলবারই বিস্ফোরণকাণ্ডের মূল চক্রী নিহত কেরামত আলির রাসায়নিক ভর্তি গোডাউনের হদিস পেয়েছিল ইটিভি ভারত । তারও আগে বেরুনান পুকুরিয়ার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় অত‍্যাধুনিক ল্যাবরেটরির হদিস মিলেছিল । সেখানে রাসায়নিক, বিকার থেকে শুরু করে টেস্টটিউবের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল । তেমনই অত‍্যাধুনিক সেই ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন ধরণের বোমা-বাজির পরীক্ষা নিরীক্ষারও বন্দোবস্ত ছিল । এবার হদিস মিলল সরকারি ছাপ দেওয়া বাজি মজুতের বস্তা ।

বিস্ফোরণস্থল থেকে 10-15 ফুট দূরে পরপর তিনটি শাটার দেওয়া দোকানঘর । এর দুটিতেই থরেথরে সাজানো ছিল সরকারি ছাপ দেওয়া বাজি ভর্তি বস্তা । কোনও বস্তায় ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ায় ছাপ দেওয়া । আবার কোনওটায় পঞ্জাব সরকার, কর্ণাটকের চিনি কলের ছাপ দেওয়া । দত্তপুকুর বিস্ফোরণের 3 দিন পরেও বারুদে ঠাসা এইসব দোকানঘরে এখনও পুলিশের নজর পড়েনি । কার্যত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেগুলো । পুলিশের এই গা-ছাড়া মনোভাব আতঙ্ক বাড়িয়েছে মোচপোল গ্রামের বাসিন্দাদের ।

এই বিষয়ে শাকিলা বিবি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,"ওই দোকানঘরগুলি ভাড়া দেয় কেরামত আলি ৷ সেখানে বাজি ও বাজি তৈরির সরঞ্জাম মজুত করত । আমরা বললেও তা শুনত না । উলটে টাকার গরম দেখিয়ে ভয় দেখাত । পুলিশের একাংশকে টাকা খাইয়ে এই বেআইনি কারবার চালাত কেরামত । আমরা গরিব, আমাদের যেহেতু টাকা পয়সা নেই তাই পুলিশ এবং নেতা-মন্ত্রীরাও গুরুত্ব দিত না আমাদের কথা । আমরা চাই এই ধরনের অঘটন যেন না ঘটে । পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাক বেআইনি এই বাজি কারবার ।"

এদিকে, সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তায় বাজি মজুতের ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায় । যে বস্তায় খাদ্য সামগ্রী থাকার কথা, সেই বস্তায় কীভাবে বাজি মজুত হল ? কীভাবেই বা সেই সরকারি ছাপ দেওয়া বস্তা বাজি কারবারিদের কাছে পৌঁছে গেল ! তা নিয়েই এখন শুরু হয়েছে জোর চর্চা ।

আরও পড়ুন : মোচপোল যেন জতুগৃহ! কেরামতের আরও একটি রাসায়নিক ভর্তি গুদামের হদিশ মিলল

সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তায় ভরে বাজি পাচার

দত্তপুকুর, 30 অগস্ট: অত‍্যাধুনিক ল্যাবরেটরির পর এবার সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তায় ভরে বাজি পাচার ! দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামে বিস্ফোরণস্থলের একেবারে কাছেই দুটি দোকান ঘরে এরকম কয়েকশো বাজির বস্তার হদিস পেল ইটিভি ভারত । যেগুলির প্রতিটিতেই কোনও না কোনও সরকারি সংস্থার ছাপ দেওয়া রয়েছে । পুলিশের চোখে ধুলো দিতেই বাজি কারবারিরা এই অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে । কিন্তু তারপরেও পুলিশ সেই সমস্ত বাজি ভর্তি বস্তা বাজেয়াপ্ত কিংবা দোকানঘর থেকে সরাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ । ফলে পুলিশের ভূমিকা সেই প্রশ্নের মুখে ! ঘটনার তিনদিন পরও মোচপোল গ্রাম যে বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে তা এতেই স্পষ্ট ৷

ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের মোচপোল গ্রাম এবং তার আশপাশে বাজিই যেন কুটির শিল্প ৷ এলাকার যেদিকেই চোখ যাবে সেদিকেই লক্ষ্য করা যাবে ছোট, বড়, মাঝারি মাপের বাজি তৈরির গোডাউন ৷ কেউ কেউ আবার ঘর ভাড়া নিয়ে বাজির কারখানা করে ফেলেছেন । গ্রামজুড়ে শুধুই বারুদ ! অনেকে একে বারুদের গ্রাম বলেও চেনে । স্থানীয়রা বলছেন আগে বারুদের এতটা রমরমা ছিল না গ্রামে । করোনা পরবর্তী সময়ে গ্রামের অনেক বেকার যুবক, এমনকি মহিলারাও তাতে যুক্ত হয়ে পড়েন । কারণ, পেটের তাগিদ ! বেশি টাকার প্রলোভন দেখিয়েও অনেক সময় বাইরে থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হত বাজি কারখানাগুলিতে । দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে মুর্শিদাবাদ যোগ তারই প্রমাণ । রাত জেগে সেখানে শ্রমিকরা বাজি ও বাজি তৈরির মশলা বানাতেন বলে অভিযোগ ।

এই কাজ সন্তর্পণে করার জন্য বিভিন্ন বাঁশঝাড়কেও বেছে নিয়েছিল বাজি তৈরির কারবারিরা । বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন জঙ্গল এবং বাঁশঝাড়ে বাজির উপকরণ ফেলে দিয়েই চম্পট দেয় শ্রমিকরা । যা এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিস্ফোরণ স্থলের আশেপাশে । মঙ্গলবারই বিস্ফোরণকাণ্ডের মূল চক্রী নিহত কেরামত আলির রাসায়নিক ভর্তি গোডাউনের হদিস পেয়েছিল ইটিভি ভারত । তারও আগে বেরুনান পুকুরিয়ার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় অত‍্যাধুনিক ল্যাবরেটরির হদিস মিলেছিল । সেখানে রাসায়নিক, বিকার থেকে শুরু করে টেস্টটিউবের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল । তেমনই অত‍্যাধুনিক সেই ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন ধরণের বোমা-বাজির পরীক্ষা নিরীক্ষারও বন্দোবস্ত ছিল । এবার হদিস মিলল সরকারি ছাপ দেওয়া বাজি মজুতের বস্তা ।

বিস্ফোরণস্থল থেকে 10-15 ফুট দূরে পরপর তিনটি শাটার দেওয়া দোকানঘর । এর দুটিতেই থরেথরে সাজানো ছিল সরকারি ছাপ দেওয়া বাজি ভর্তি বস্তা । কোনও বস্তায় ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ায় ছাপ দেওয়া । আবার কোনওটায় পঞ্জাব সরকার, কর্ণাটকের চিনি কলের ছাপ দেওয়া । দত্তপুকুর বিস্ফোরণের 3 দিন পরেও বারুদে ঠাসা এইসব দোকানঘরে এখনও পুলিশের নজর পড়েনি । কার্যত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেগুলো । পুলিশের এই গা-ছাড়া মনোভাব আতঙ্ক বাড়িয়েছে মোচপোল গ্রামের বাসিন্দাদের ।

এই বিষয়ে শাকিলা বিবি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,"ওই দোকানঘরগুলি ভাড়া দেয় কেরামত আলি ৷ সেখানে বাজি ও বাজি তৈরির সরঞ্জাম মজুত করত । আমরা বললেও তা শুনত না । উলটে টাকার গরম দেখিয়ে ভয় দেখাত । পুলিশের একাংশকে টাকা খাইয়ে এই বেআইনি কারবার চালাত কেরামত । আমরা গরিব, আমাদের যেহেতু টাকা পয়সা নেই তাই পুলিশ এবং নেতা-মন্ত্রীরাও গুরুত্ব দিত না আমাদের কথা । আমরা চাই এই ধরনের অঘটন যেন না ঘটে । পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাক বেআইনি এই বাজি কারবার ।"

এদিকে, সরকারি স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তায় বাজি মজুতের ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায় । যে বস্তায় খাদ্য সামগ্রী থাকার কথা, সেই বস্তায় কীভাবে বাজি মজুত হল ? কীভাবেই বা সেই সরকারি ছাপ দেওয়া বস্তা বাজি কারবারিদের কাছে পৌঁছে গেল ! তা নিয়েই এখন শুরু হয়েছে জোর চর্চা ।

আরও পড়ুন : মোচপোল যেন জতুগৃহ! কেরামতের আরও একটি রাসায়নিক ভর্তি গুদামের হদিশ মিলল

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.