আমডাঙা, 9 জুলাই: ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর 24 পরগনার আমডাঙা । রবিবার তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ । গ্রামে পড়ল মুড়ি মুড়কির মতো বোমা । বোমাবাজি এবং সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের সাতজন । তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম এবং আইএসএফের লোকজনই গ্রামে ঢুকে বোমাবাজি করেছে । মারধর করা হয়েছে দলের কর্মী-সমর্থকদের । ভোটে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই এখন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে সিপিএম ও আইএসএফ ৷
যদিও সিপিএমের দাবি, তাদের কর্মীদের ওপরই চড়াও হয়ে মারধর করেছে তৃণমূলের লোকজন । এমনকী, কর্মীদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়েছে বোমাও । তাতে এক কর্মীর হাত উড়ে গিয়েছে । আক্রান্ত হয়েছেন আরও কয়েকজন । আর তৃণমূল-সিপিএমের এই চাপানউতোরে গণনার আগে ভোট পরবর্তী উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে আমডাঙার শশীপুর গ্রামে ।
পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে বারবারই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে উত্তর 24 পরগনার আমডাঙা । 2018 সালের পঞ্চায়েত ভোট পরবর্তী হিংসাতেও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আমডাঙার তারাবেড়িয়া অঞ্চল । পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের ঠিক আগের রাতে বোমা-গুলিতে মৃত্যু হয় চারজনের । এর মধ্যে তিনজনই শাসকদলের । বাকি একজন সিপিএমের । এবারের পঞ্চায়েত ভোটেও সকলের নজর ছিল আমডাঙার দিকে । মনোনয়ন পর্বে সেই অর্থে অশান্তি না হলেও ভোটের দিন থেকেই ফের তপ্ত হতে শুরু করেছে আমডাঙার চন্ডিগড় পঞ্চায়েতের শশীপুর গ্রাম । এই পঞ্চায়েতের 63 নম্বর বুথে ভোট চলাকালীন ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে । প্রতিরোধ গড়ে তুললে আইএসএফ-সিপিএমের সঙ্গে একযোগে সংঘর্ষ বাঁধে শাসকদলের । চলে দু'পক্ষের মধ্যে বোমাবাজিও ।
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসায় অশান্ত মগরাহাটে আহত 3 পুলিশ কর্মী
যদিও সিপিএম ও আইএসএফ, এই দুই দলের বিরুদ্ধে পালটা সন্ত্রাস রিগিংয়ের অভিযোগ তোলে তৃণমূল । সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও শশীপুর গ্রামে রবিবার সকাল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয় তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে । দু'পক্ষের সংঘর্ষে মুড়ি মুড়কির মতো পড়ে বোমাও । যার জেরে আতঙ্ক ছড়ায় গ্রামবাসীদের মধ্যে । পরে, হাবরার এসডিপিও রোহিত শেখের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী গ্রামে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । এদিকে, ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সিপিএম উভয়ই একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে ।
হাফিজুল হক নামে স্থানীয় এক তৃণমূল সমর্থক গ্রামবাসী জানান, তৃণমূল ও সিপিএম উভয় দলের লোকজনই রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়েছিল । তখনই তর্কাতর্কি শুরু হয় দু'দলের মধ্যে । এরপর সিপিএমের লোকজন বোমা নিয়ে তাড়া করেছে তৃণমূলের লোকজনকে । মারধরও করা হয়েছে ওদের । তাতে আহত হয়েছেন কয়েকজন । প্রচুর বোমাবাজি হয়েছে । যথেষ্ট আতঙ্কিত তাঁরা বলে জানান তিনি ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার বলি আরও এক, কুলতলিতে খুন তৃণমূল কর্মী
যদিও শাসকদলের বিরুদ্ধেই পালটা হামলা, বোমা ছোঁড়ার অভিযোগ করা হয়েছে সিপিএমের তরফে । দলের জেলা নেতা আহমেদ আলি খান বলেন, "সাংসদ অর্জুন সিং এবং বিধায়ক রফিকুর রহমানের প্ররোচনাতে তৃণমূল দুষ্কৃতীরা গোটা আমডাঙাতে তাণ্ডব চালাচ্ছে । আমডাঙার মোট আটটি পঞ্চায়েতের মধ্যে দু'টি পঞ্চায়েতে ভোট লুট করে গ্রাম দখল করেছে । বাকি ছ'টি পঞ্চায়েতে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে ভোট লুট ঠেকাতে পেরেছি ।"
তাঁর দাবি, যে সমস্ত বুথে সিপিএম প্রার্থীদের জয়ের সম্ভবনা রয়েছে সেখানে বিধায়ক রফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্র চলছে তৃণমূলের । শুধুমাত্র তৃণমূলের সুবিধা করিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তাদের ভোটের কাজ ব্যবহার করা হল না । এই সিপিএম নেতার কথায়, রবিবার যা হল তা এক কথায় গণতন্ত্রের লজ্জা । তাঁদের কর্মীদের লক্ষ্য করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বোমা ছুড়েছে । যাতে তাঁরা ভোটের ব্যালট বক্স পাহারা দিতে না পারে । এর সুবিচার চান তাঁরা ৷
আরও পড়ুন: বৈষ্ণবনগরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত তৃণমূল কর্মী, মালদায় ভোটের হিংসার বলি বেড়ে 2
অন্যদিকে,বোমাবাজি এবং সংঘর্ষের ঘটনার পর কার্যত থমথমে গোটা শশীপুর গ্রাম । পুলিশের বিশাল বাহিনী গ্রামে ঢুকে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে । রয়েছে পুলিশের পিকেটও । যাতে নতুন করে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা না ঘটে ভোট গণনার আগে ।