মধ্যমগ্রাম, 6 অক্টোবর: দীর্ঘ প্রায় সাড়ে 19 ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়ি থেকে বেরোলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরটের আধিকারিকরা ৷ মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উদ্দেশ্যে গো-ব্যাক স্লোগান দিতে দেখা যায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের । সেই সঙ্গে রথীন ঘোষের নামে জয়ধ্বনিও দেন তাঁরা। জেরা পর্ব শেষে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে দলীয় নেতা-কর্মীদের দিকে হাত নাড়তেও দেখা গিয়েছে খাদ্যমন্ত্রীকে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে তাঁকে। তখনই তিনি দাবি করেন, তাঁকে হেয় করতেই তল্লাশি চালিয়েছে ইডি।
মন্ত্রী রথীন ঘোষের আরও দাবি, বাড়ি থেকে কোনও নথি নিয়ে যাননি ইডির আধিকারিকরা । খালি হাতে যেতে হয়েছে তাঁদের। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে সবরকমের সহযোগিতা করা হয়েছে । যা যা জানতে চেয়েছেন তার সবটাই ইডির আধিকারিকদের তথ্য-সহ জানানো হয়েছে । যদিও তদন্ত শেষে এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছুই বলতে চাননি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরটের আধিকারিকরা।
মূলত 2014 সালের পর থেকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির হাতে উঠে আসে একাধিক পৌরসভার নাম। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের সংস্থা এভিএস ইনফোজোনের মাধ্যমে এই সমস্ত পৌরসভায় বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই সংক্রান্ত নথিও হাতে এসেছে ইডির তদন্তকারীদের । প্রায় দেড় হাজার বেআইনি নিয়োগ পৌরসভাগুলিতে হয়েছে বলে দাবি ইডির। নিয়োগ সংক্রান্ত যে তালিকা ইডি হাতে পেয়েছে সেই নথি যাচাই করতেই পৌরসভা ধরে ধরে তদন্তকারীরা তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে বলে খবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে ।
বৃহস্পতিবার যে সমস্ত জায়গায় ইডি আধিকারিকরা হানা দেয় তার মধ্যে সবচেয়ে হাই প্রোফাইল ছিল রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের মধ্যমগ্রামের মাইকেল নগরের বাড়ি । এছাড়া ইডির তল্লাশি অভিযানের তালিকায় ছিল কামারহাটি পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান গোপাল সাহা, টিটাগড় পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরী এবং বরানগর পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান অপর্ণা মৌলিকের বাড়িও । ইডি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার মোট 13টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চলেছে। কোথাও নথি বাজেয়াপ্ত, আবার কোথাও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: রণবীরের পর এবার কপিল-হুমা! বেটিং অ্যাপ মামলায় ইডি'র নিশানায় বলিউড
পৌরনিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার কাকভোরে ইডির 10 সদস্যের এক বিশেষ দল পৌঁছে যায় রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের মধ্যমগ্রামে মাইকেল নগরের বাড়িতে। বাড়িতে প্রবেশ করে ইডি আধিকারিকরা সোজা চলে যান মন্ত্রীর দোতলার ঘরে। পরিবারের সদস্যদের এক জায়গায় বসিয়ে রেখে শুরু হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ম্যারাথন তল্লাশি।
ইডি সূত্রে খবর, মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে 2014-18 সাল পর্যন্ত মধ্যমগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন রথীন ঘোষ। সেই সময় বেআইনিভাবে ওই পৌরসভায় কোনও নিয়োগ হয়েছে কি না তা জানতেই ইডির এই ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান বলে জানা গিয়েছে । সেই বিষয়ে তথ্য পেতে এদিন দফায় দফায় জেরাও করা হয় খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে ।
প্রথমে মন্ত্রীর মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেন ইডির এক আধিকারিক । এরপর তাঁর ল্যাপটপের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে তা যাচাই করেন ইডির তদন্তকারী অফিসাররা। মন্ত্রীর ব্যাংক আকাউন্টের তথ্যও যাচাই করে দেখা হয় বলে খবর ইডি সূত্রে। এরপর কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ মন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ইডি আধিকারিকরা। যদিও দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে কোনও নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি । এই নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরাও মুখ খোলেননি ।
এদিকে, ইডির এই তল্লাশি অভিযান নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, "বাড়িতে এবং ব্যাংকে কী আছে না আছে তা ইডি খতিয়ে দেখেছে । এসব নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। পৌরনিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের কাছে সঠিক তথ্য পরিবেশিত হচ্ছে না । সেটা তদন্তকারী সংস্থাকে তথ্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। চেষ্টা করলাম ওদের ভুল ভাঙাতে। একটি আইনের বই দিয়েও সাহায্য করেছি ওদের । 2014-17 সাল পর্যন্ত পৌরনিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে জানতে চেয়েছিল ইডির আধিকারিকরা । সেটা ওদের সবটাই খুলে বলেছি । আমাকে হেয় করতেই ইডির এই ম্যারাথন তল্লাশি ৷" অন্যদিকে, তাঁর জবাবে ইডির আধিকারিকরা সন্তুষ্ট কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রথীন ঘোষ বলেন,"সেটা পরের বিষয় । তবে, ওদের সবরকমভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে ।"
আরও পড়ুন : পৌর নিয়োগে দুর্নীতি, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে ইডির হানা