বারাসত, 25 সেপ্টেম্বর: কোরোনা পরিস্থিতিতে প্রায় সাত মাস বন্ধ ট্রেন চলাচল । রুটি-রুজিতে টান পড়েছে স্টেশনের হকারদের । তার উপর হকার উচ্ছেদের নামে চলছে রেলের পুলিশি জুলুম । এই অভিযোগে আজ বারাসত স্টেশনে RPF অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন হকাররা । তাঁদের অভিযোগ, হকার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমাতে রেল কর্তৃপক্ষ মিথ্যা মামলা দিচ্ছে হকারদের । আজও মিথ্যা অভিযোগে পাঁচজন হকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । এমনিতেই রেলকে বেসরকারিকরণ করে হকারদের পেটে লাথি মারার চেষ্টা চলছে । তার উপর চলছে পুলিশের জুলুম । এভাবে চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না । যদিও এনিয়ে মুখ খুলতে চায়নি RPF কর্তৃপক্ষ ।
কোরোনা মোকাবিলায় লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই বন্ধ লোকাল ট্রেন চলাচল । ইতিমধ্যে কোরোনা বিধি মেনে মেট্রো পরিষেবা চালু হলেও লোকাল ট্রেন পরিষেবা কবে চালু হবে তা অজানা হকার কিংবা যাত্রীদের কাছে । তবে,পরিষেবা চালু করার প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে বলেই খবর রেল সূত্রে । লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু হলে স্টেশনের তাঁদের উচ্ছেদ করা হতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন শিয়ালদা বনগাঁ ও হাসনাবাদ শাখার কয়েক হাজার হকার । সম্প্রতি বারাসত স্টেশনে পরিদর্শনে এসে হকার উচ্ছেদের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শিয়ালদা ডিভিশনের DRM শৈলেন্দ্রার প্রতাপ সিং । আর সেই ইঙ্গিত মিলতেই জীবিকা বাঁচাতে শিয়ালদা-বনগাঁ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে আন্দোলনে নেমেছেন হকাররা । বাদ যাননি বারাসত স্টেশনের হকাররাও । কোরোনার জেরে একদিকে স্টেশনে হকারি বন্ধ অন্যদিকে হকার উচ্ছেদের আশঙ্কায় পেটে লাথি পড়ার জোগাড় হকারদের । এমন অবস্থায় আবার রেলের পুলিশি জুলুমের অভিযোগ । যার ফলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাঁদের । অভিযোগ, আজ সকালে হৃদয়পুর স্টেশনে দোকান খোলার অপরাধে পাঁচ হকারকে আটক করে বারাসতে নিয়ে আসে RPF ।পরে, গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের । এরপরই RPF-এর ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন হৃদয়পুর স্টেশনের হকাররা । হকারদের মুক্তির দাবিতে শুরু হয় বারাসত স্টেশনে RPF অফিসের সামনে বিক্ষোভ ।বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চললেও মুক্তি দেওয়া হয়নি ওই হকারদের । উলটে তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে বলে খবর RPF সূত্রে ।
এই বিষয়ে হৃদয়পুর স্টেশনের হকার শ্যামল সাহা বলেন, "দীর্ঘ সাত মাস ধরে আমাদের রুটি-রুজি বন্ধ । কোনওরকমে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছি । পেটের তাগিদে আমরা হৃদয়পুর স্টেশনে কিছু কিছু করে দোকান খুলছি । যেহেতু এখনও লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি সেই কারণে বিক্রিবাটা সেভাবে হচ্ছে না । স্থানীয় কয়েকজন জিনিসপত্র কিনলেও প্রতিদিন রোজগার 100 টাকার বেশি হচ্ছে না । আজ কেউ দোকান খোলার ছবি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয় । এরপরই RPF এসে পাঁচ দোকানদারকে তুলে নিয়ে আসে বারাসতে । কী কারণে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে RPF কর্তৃপক্ষ বলে কেস দেখাতে হবে । নইলে তাঁদের চাকরি থাকবে না ।আজকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । আগামী দিনে 10 জন, আবার তার থেকেও বেশি কাউকেও গ্রেপ্তার করা হতে পারে । এটা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না । এভাবে যদি পুলিশি জুলুম চলতে থাকে তাহলে আমাদের পরিবার নিয়ে মৃত্যুর পথ ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না ।" হকার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমাতেই এইভাবে হকারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি ।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে শিয়ালদা ডিভিশনের সিনিয়র PRO একলব্য চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "কোরোনা পরিস্থিতিতে লোকাল ট্রেন চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে । সেই জায়গায় স্টেশনে হকারি কিংবা দোকান খোলা যাবে না । এটাই নিয়মের মধ্যে পড়ে । সেক্ষেত্রে কেউ যদি নিয়ম লঙ্ঘন করেন তাহলে তো RPF ব্যবস্থা নেবেই । শিয়ালদা,হাওড়া ও দিল্লির মতো বড় স্টেশনগুলিতে এখনও দোকান খোলা কিংবা হকারি শুরু হয়নি ।" সেখানে কীভাবে হৃদয়পুর স্টেশনে দোকান খোলা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ।