বারাসত, 16 নভেম্বর: বারাসতে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে তৃণমূল নেতাকে থানায় তলবের রেশ কাটেনি এখনও ৷ তারই মধ্যে এবার সেই অবৈধ নির্মাণে মদত দেওয়ার অভিযোগে খোদ তৃণমূল কাউন্সিলরের নামে পোস্টার পড়ল ওয়ার্ডে (Poster Against TMC Councilor) ৷ যে ঘটনাকে ঘিরে মঙ্গলবার সন্ধেয় শোরগোল পড়ে যায় বারাসতের রামকৃষ্ণপুর এলাকায় ৷ পাঁচিল থেকে শুরু করে, বিভিন্ন দোকানের শাটারে ছেয়ে গিয়েছে তৃণমূলের চিকিৎসক কাউন্সিলর সুমিত সাহার নামে সেই সব পোস্টার ৷ যেখানে পুকুরের একাংশ বুজিয়ে কীভাবে সরকারি আবাস যোজনার প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ৷
রামকৃষ্ণপুর এলাকাটি বারাসত পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ৷ এখানেই 0.12 একর এলাকা জুড়ে রয়েছে একটি পুকুর ৷ অভিযোগ পুকুরের একদিক ভরাট করে, সরকারি আবাস যোজনা প্রকল্পে বসতবাড়ি তৈরি করছিলেন (Illegal Construction in Barasat) 13 নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল যুবর সভাপতি প্রদীপ পাল ৷ স্থানীয়রা সরব হন বিষয়টি নিয়ে ৷ অভিযোগ, সবকিছু জেনেও কোনও পদক্ষেপ নেননি স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুমিত সাহা ৷ উলটে সেই সময় ওই তৃণমূল নেতার পাশে দাঁড়ান কাউন্সিলর ৷
এরপরই সুবিচার চেয়ে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন এলাকাবাসী ৷ জেলাশাসক থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেলাশাসক (এলআরও), ব্লক ভূমি এবং ভূমি রাজস্ব দফতরের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায় স্থানীয়রা ৷ অভিযোগ দায়ের করা হয় পুলিশের কাছেও ৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন ৷ ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ সেই নির্দেশ মোতাবেক দু’দিন আগেই পুলিশ তৃণমূল যুব নেতার বাড়িতে গিয়ে হাজিরার নির্দেশ দেয় ৷ আর এসবের মধ্যেই পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গেল স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের নামে ৷ তবে, অস্বস্তি ঢাকতে পোস্টারগুলি কিছুক্ষণের মধ্যেই কাউন্সিলরের লোকজন ছিঁড়ে ফেলে ৷
যদিও, অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার পরিবারের দাবি, "স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে পুকুরের অংশের কিছু জমি কিনেছেন ৷ সেখানেই তাঁরা আইন মেনে কংক্রিটের বাড়ি বানাচ্ছেন ৷ যাবতীয় কাগজপত্রও রয়েছে তাঁদের কাছে ৷ সেই কাগজপত্র নিয়েই তৃণমূল নেতা প্রদীপ পালকে থানায় যেতে বলা হয়েছে ৷’’
আরও পড়ুন: ইটিভি ভারতের খবরের জের, অবৈধ নির্মাণে তৃণমূল নেতাকে থানায় তলব
অন্যদিকে, পোস্টারকাণ্ডে তৃণমূল ও বিজেপি শিবিরের তরজায় সরগরম হয়ে উঠেছে জেলাসদর বারাসত ৷ এই বিষয়ে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, "বিষয়টি আমাদেরও কানে এসেছে ৷ শীঘ্রই আমরা সেখানে আন্দোলনে নামব ৷ জলাশয়ের মধ্যে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেল, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ৷ এর মধ্যে নিশ্চয় কোনও না কোনও রহস্য রয়েছে ৷ এর উন্মোচন হওয়া দরকার ৷’’
যদিও, বিষয়টি নিজের কাঁধ থেকে ঝেড়ে প্রশাসনের ওপরই চাপিয়েছেন বারাসত পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুমিত সাহা ৷ তাঁর কথায়, "সবে 6 মাস হয়েছে কাউন্সিলর হয়ে এই ওয়ার্ডের দায়িত্ব এসেছি ৷ আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সরকারি আবাস যোজনা প্রকল্পের এই বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৷ প্রশাসনও নিশ্চয় জমির চরিত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছে ৷ তার পরেও কোথায়ও যদি অনৈতিক কাজ হয়ে থাকে, সেটা পুলিশ প্রশাসন খতিয়ে দেখবে ৷ এর মধ্যে আমার মদত দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না ৷’’
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, "ঘটনাটি আমার জানা নেই ৷ খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হবে ৷ তবে, কোনও অনৈতিক কাজ হয়ে থাকলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ সেখানে আমাদের দল হস্তক্ষেপ করবে না ৷"