কলকাতা, 21 অক্টোবর: তিনি আন্দোলনের নেত্রী ৷ সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম, আন্দোলনে ভর করেই 2011 সালে বাংলার মসনদে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ এবার সেই তাঁর শাসনেই প্রশাসন গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করা চাকরিপ্রার্থীদের (TET Agitation) যেভাবে মাঝরাতে তুলে দিল, তাতে বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কি বিরোধী দলে থাকতে যে অভিযোগ তিনি বারবার তুলতেন শাসকের দিকে, এখন সেই একই দোষে দুষ্ট নেত্রী নিজেও ? না-হলে কেন এভাবে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের পুলিশ দিয়ে তুলে দেওয়া হবে !
এই একই প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলনেতা তথা সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ৷ তিনি বলেন, এই সরকার আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা ৷ সাধারণ মানুষের ন্যূনতম বিশ্বাসটুকু হারিয়েছে ৷ এই অবস্থায় পেশিশক্তি প্রদর্শন ছাড়া তাদের হাতে আর কোনও অস্ত্র নেই ৷ অপর সিপিএম নেতা তথা সংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের সমস্ত স্তরেই দুর্নীতির শাখা প্রশাখা বিস্তারিত হয়েছে ৷ সেই দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা পেশিশক্তির আস্ফালন করছে ৷ সেই জায়গা থেকেই প্রশাসনের এই আচরণ ৷ কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, গণতন্ত্রে শেষ কথা বলে মানুষ ৷ এক্ষেত্রেও মানুষই শেষ কথা বলবে ৷ এভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের টুঁটি টিপে তাকে দুর্বল করে দেওয়া যাবে না ৷
আরও পড়ুন: এসএফআই- ডিওয়াইএফআইয়ের মিছিল ঘিরে তুলকালাম করুণাময়ীতে
মধ্যরাতে পুলিশকে ব্যবহার করে আন্দোলন তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গে বিজেপি-ও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ৷ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৷ তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ভয়াবহ ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ সল্টলেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে 2014 সালের টেট উত্তীর্ণদের অবস্থানকে নির্মমভাবে বলপ্রয়োগ করে তুলে দিয়েছে ৷ এটা পশ্চিমবঙ্গ নাকি হিটলারের জার্মানি !
শুধু শুভেন্দু অধিকারী নন, এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিজেপি-এর জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও ৷ তিনি বলেন, এই সরকার সাধারণ মানুষের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে ৷ এই সরকার কাজও করতে দেবে না ৷ তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও করতে দেবে না ৷ যাঁরা চাকরি জন্য আন্দোলন করছেন, তাঁদের নির্মমভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে ৷ দিলীপের মতে, এই সরকারের আমলে মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার অধিকার নেই ৷
যদিও বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন এই প্রসঙ্গে বলেন, গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হল বিচারব্যবস্থা ৷ এই বিচারব্যবস্থাকে মানা কি অন্যায় ? নাকি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াটা অন্যায় ? যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের প্রতি পূর্ণ সহমর্মিতা রেখেই বলছি, এভাবে আইন হাতে নেওয়া যায় না ৷ আমরা তো বারবার দেখেছি, কীভাবে পুলিশ তাঁদের একাধিকবার এলাকা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছে ৷ সেখানে 144 ধারা জারি রয়েছে ৷ সমস্যাটা অন্য জায়গায় ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন গোটা বিষয়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে সমাধান করার চেষ্টা করছেন, তখনই মাংস বিক্রেতাকে, ঘুগনি বিক্রেতাকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে আন্দোলন করতে ! সরকার তো বলছে, তারা সংবেদনশীলতার সঙ্গে গোটা বিষয়টি দেখছে ৷ কিন্তু বিরোধীরা দেখছে, সরকার যদি সমস্যার সমাধান করে দেয় তাহলে তো তারা ঘোলা জলে মাছ ধরার সুযোগ পাবে না ৷ তাই নানাভাবে প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা চান না এই আন্দোলন উঠে যাক ৷ যাতে এই আন্দোলন চলে, তার ব্যবস্থাই তাঁরা করছেন ৷ এই অবস্থায় পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কী উপায় থাকতে পারে আপনারাই বলুন !
আরও পড়ুন: রাতভর 'নিখোঁজ' থাকার পর সন্ধান মিলল তিন চাকরিপ্রার্থীর
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, এই সরকার মানবিক ৷ কেউ যদি কোথাও ভুল করে থাকেন, তা সংশোধন করা হচ্ছে ৷ অন্যায় করলে শাস্তি হবে ৷ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন, নিয়োগে যাতে দেরি না-হয় ৷ এখন হাইকোর্টকেও বলতে হচ্ছে, মামলার পর মামলা চলতে থাকলে নিয়োগ কী করে হবে ! অর্থাৎ একটি অংশ মামলা করে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে ৷ যাতে নিয়োগ আটকে গেলে তার ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করা যায় ৷ ময়দান চত্বরে কতদিন ধরে ধর্না চলছে ৷ এই সরকার গণতান্ত্রিক সরকার ৷ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর কখনওই কোনও আঘাত করে না ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, যেটা ন্যায্য আন্দোলন, তা তিনিও ভালোবাসেন ৷ তিনিও আন্দোলন থেকেই উঠেছেন ৷ কিন্তু যে জায়গাটায় আইনি সমস্যা রয়েছে, সেখানে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিলে তৃণমূল রাজনীতি করতে যাবে না ৷