ঠাকুরনগর , 30 জুন : তিনি কখনও রাজ অনুগ্রহের প্রত্যাশা করেননি । তাঁকে সরকারি আশীর্বাদী স্তাবকদের ভিড়ে দেখা যায়নি । সারাজীবন নিভৃতে থেকেই সাহিত্যচর্চা করেছেন । সারা জীবন কাটিয়েছেন কবিতার সাধনায় । তিনি সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি বিনয় মজুমদার । জীবদ্দশায় তাঁর জীবন অবহেলাতে কেটেছে । বিশেষ করে তাঁর শেষ জীবন কেটেছে অসুখে ও নিঃসঙ্গতায় । মৃত্যুর পরেও তিনি বঞ্চণার শিকার । তাঁর মৃত্যুর 13 বছর কেটে গেলেও কবির বসতভিটের সংস্কার হয়নি । আজ তা যেন এক জীর্ণ পোড়োবাড়ির রূপ নিয়েছে ।
বঞ্চনার ইতিকথা শুরু হয়েছিল পৃথিবীর আলো দেখা থেকেই । 1934 সালের 17 সেপ্টেম্বর সুদূর মায়ানমারে জন্ম কবি বিনয় মজুমদারের । তাঁর ছোটোবেলা কেটেছে ফরিদপুরে । তারপর 1947 সালের দেশভাগ । নতুন ঠিকানার খোঁজে চলে আসেন এপার বাংলায় । অভিভক্ত 24 পরগনা জেলার গাইঘাটা থানার ঠাকুরনগরের শিমুলপুরে থাকতে শুরু করেন । কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ISC পাশ করার পর শিবপুর BE কলেজ । মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়রিংয়ে BE ডিগ্রি অর্জন । বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও মননে তাঁর অক্ষরের আঁকিবুঁকি । যৌবনে তাঁর চোখে প্রেমের রং একবারই লেগেছিল । তিনি গায়ত্রী চক্রবর্তী । কিন্তু একসঙ্গে আর পথ চলা হল না । সেইসময় তাঁর জীবনে প্রথম বড় ধাক্কা লাগে । এরপরে অভিমানী কবির কলম থেকে ঝরে পড়ে ' নক্ষত্রের আলোয় ', ' গায়ত্রীকে ', ' ফিরে এস চাকা ', ' অঘ্রাণের অনুভূতি ', ' ধূসর জীবনানন্দ ' , ' হাসপাতাল থেকে লেখা কবিতাগুচ্ছ ', 'একা একা কথা বলি' ইত্যাদি ।
2005 সালে তাঁর কবিতা প্রথম মর্যাদা পায় । "হাসপাতাল থেকে লেখা কবিতাগুচ্ছ" কাব্যগ্রন্থের জন্য তাঁকে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয় । কিন্তু অবহেলা ও বঞ্চনা তাঁর জীবনে থেকেই গেল । তাঁর শেষের দিনগুলি কেটেছিল নিদারুণ অবহেলায় । শিমুলপুরে একাকী নিভৃতবাসে । অসুস্থতার মধ্যে দিন কাটছিল । শেষে 2006 সালের 11 ডিসেম্বর তিনি মারা যান । তারপর কেটে গিয়েছে 13 টি বছর । বদলে গেছে অনেক কিছু । বদলে গেছে তাঁর বাড়িও । কিন্তু তা উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে নয় । তাঁর বসতভিটে এই 13 বছর ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে । গোটা চত্বর জুড়ে আগাছার জঞ্জাল । দেওয়ালে ফাটল । খসে পড়ছে পলেস্তারা । কবির মৃত্যুর পর তাঁর অনুরাগীরা সেখানে গড়ে তুলেছিলেন বিনয়স্মৃতি পাঠাগার । যা আজও সরকারি স্বীকৃতি পায়নি । সেখানেই ছিল কবির সাহিত্য অ্যাকাডেমির স্মারক । সম্প্রতি তাও চুরি হয়ে গেছে । তবু কবিকে নিয়ে কারও ভাববার সময় হয়তো নেই । এমনটাই আক্ষেপ বিনয়স্মৃতি পাঠাগারের সম্পাদকের । তিনি অর্থাৎ সম্পাদক বৈদ্যনাথ দলপতি বলেন , " কবি বিনয় মজুমদার আমাদের গর্ব । বাংলা সাহিত্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন । আজ তাঁর বাড়ি জীর্ণ ভগ্নপ্রায় । কেউ দেখার নেই । আমাদের যে কমিটি তা খুবই দুর্বল । সরকারি কোনও আনুকুল্য পাইনি । আমাদের দরকার অর্থ । বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ । তা সরকারি সাহায্য় ছাড়া সম্ভব নয় । অনেক পরিকল্পনা রয়েছে । বাড়ি সংস্কারের জন্য আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি । কিন্তু এখনও কোনও সাড়া পেলাম না । হয়তো পাওয়া যাবে । "
![Thakurnagar](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/7826394_wb_th.jpg)