হাবড়া, 18 অক্টোবর : হাসপাতালে এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ এক্স-রে । ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা । কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই বলেই অভিযোগ । দু'টি মেশিন আগেই খারাপ হয়েছিল । পুরানো একটি মেশিন দিয়ে কাজ চলছিল । সেটিও খারাপ হয়ে যায় । তবে কবে শুরু হবে এক্স-রে ? গরিব রোগীদের ভোগান্তির দায় কে নেবে সেসব প্রশ্নই উঠেছে । বিষয়টিও জেনেও কোনও কথা বলছে না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ।
উত্তর ২৪ পরগনার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল হাবড়া স্টেট জেনেরাল হাসপাতাল । পার্শ্ববর্তী একাধিক এলাকা এবং অন্য জেলার কয়েক লাখ মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন । মছলন্দপুর, গোবরডাঙা, গাইঘাটা, অশোকনগর, গুমা, বিড়া ও নদিয়ার নগরউখরা থেকে রোগী আসেন এই হাসপাতালে ।
হাসপাতালে মোট তিনটি এক্স-রে মেশিন ছিল । তার মধ্যে দু'টো অকেজো হয়েছে বহুকাল আগেই । একটি পুরানো মেশিনেই দীর্ঘদিন কাজ চলছিল । মে মাসে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে হাবড়া হাসপাতালের জন্য একটি নতুন এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ হয় । তৎকালীন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপনকুমার সাহার দপ্তর থেকে তা এই হাসপাতালের নামে নথিভুক্ত হয় । দিল্লির AERD লাইসেন্স নথিভুক্তির ক্ষেত্রেও হাবড়া হাসপাতালের নাম রয়েছে ।
সেক্ষেত্রে পুরোনো এবং নতুন এই মেশিন মিলিয়ে দু'টো এক্স-রে মেশিন চালু থাকার কথা । সোমবার থেকে পুরানো এক্স-রে মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়েছে । এরপর থেকেই এক্স-রে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ।
এক্স-রে পরিষেবার জন্য এসেছিলেন তারক রায় । কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় । তিনি বলেন, "আমি তিন চার দিন এভাবে ফিরে গেলাম । যেদিন আসি, আমাকে বলা হয় মেশিন খারাপ । কী বলব বলুন । গরিব মানুষ হলে হয়রানি তো হতেই হবে ।"
এই হাসপাতালে ক'টি মেশিন আছে, সেই প্রশ্ন করা হয় এক্স-রে বিভাগের কর্মীকে । তিনি জানান, একটা পুরানো মেশিন দিয়েই কাজ চলছিল । সেটাও খারাপ হয়েছে । তাই বাধ্য হয়ে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ।
হাসপাতালে নতুন আরও একটা এক্স-রে মেশিন থাকার কথা? জবাবে ওই কর্মী বলেন, কাগজ কলমে কী থাকার কথা, আর বাস্তব এক নয় । তাঁর ইঙ্গিতবহ উত্তর । হাসপাতাল ঘুরে কোথাও নতুন এক্স-রে মেশিনের খোঁজ পাওয়া গেল না । হাসপাতাল সুপার বিবেকানন্দ বিশ্বাস অবশ্য এ'ব্যপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ।
হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কো-মেন্টর মনোজ রায় । তিনি এই বিষয়ে বলেন, "হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন খারাপ হয়েছে । আমি খবর পেয়েছি । বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা চলছে । আশা করছি, দু'এক দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।"
তবে নতুন এক্স-রে মেশিন কোথায় গেল? মনোজবাবুর জবাব, "নতুন এক্স-রে মেশিন সম্পর্কে আমি কিছু জানি না । না জেনে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না ।"
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের বক্তব্য , তিনি জেলায় নতুন এসেছেন । বিষয়টি নিয়ে কিছু জানেন না ।
ফলে প্রশ্ন থেকেই গেল । সরকারি দপ্তরে হাবড়া হাসপাতালের নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পরে নতুন সেই এক্স-রে মেশিন কোথায় গেল? স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি । তবে সূত্রের খবর, ওই এক্স-রে মেশিনটি রয়েছে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে । হাবড়া হাসপাতালের রোগীদের বিপাকে ফেলে কারা তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠালেন, তা অবশ্য জানা যায়নি । সরকারি টাকায় কেনা সম্পত্তি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলও বা কী করে সে প্রশ্নও থেকে গিয়েছে ।