বারাসত, 7 জুন: অভাবের সংসার ! তাই,নিরুপায় হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে শ্রমিকের কাজে । যাতে বেশি টাকা উপার্জন করা যায় । কিন্তু, এমন ঘটনার সন্মুখীন হতে হবে তা কখনই ভাবিনি । বেঁচে থাকতে জীবনে আর বাইরে যাব না । মৃত্যুকে জয় করে ঝুপড়ি ঘরে ফিরে সংবাদমাধ্যমের সামনে এমনই দুঃস্বপ্নের কথা শোনালেন অভিশপ্ত যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসের আহত যাত্রী আদিত্য দাস। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এই ট্রেনের জেনারেল কামরার যাত্রী ছিলেন তিনি । শুক্রবার অর্থ্যাৎ বালাসোরের ট্রেন দুর্ঘটনা দিন বেঙ্গালুরু থেকে দুই সহযাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাওড়ায় ফিরছিলেন বছর আঠারোর এই যুবক । কিন্তু, গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ।
প্রাণহানি, আর্তনাদ, হাহাকার সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তিনটি ট্রেনের দুর্ঘটনার জেরে। সেদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং দুঃস্বপ্ন এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁকে । কিছুতেই ভুলতে পারছেন না সেসব কথা । চোখের সামনে ট্রেনের কামরা পালটি খেতে দেখেছেন । চাক্ষুষ করেছেন একের পর এক মৃত্যুও। হাড়হিম করা সেই সমস্ত দৃশ্য এখনও ভেসে উঠছে তাঁর চোখের সামনে।
আরও পড়ুন: 'যে করেই হোক, বাবার কাছে ফিরতেই হবে', দুর্ঘটনার পর এই ভাবনাই সাহস জুগিয়েছে নবশ্রীকে
তবে, জেনারেল কামরায় অনেকের মৃত্যু হলেও ট্রেন দুর্ঘটনায় বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন এই যুবক । পায়ে আঘাত এবং একরাশ আতঙ্ককে সঙ্গী করেই মঙ্গলবার রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় রেললাইনের পাশে ঝুপড়ি ঘরে ফিরেছেন আদিত্য। যদিও আতঙ্ক এতটাই গ্রাস করেছে তাঁর মনে ভয়ে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজে আর যেতে চাইছেন তিনি । একইসঙ্গে আদিত্যর আবেদন, প্রশাসন যদি এ রাজ্যে কোনও কাজের ব্যবস্থা করে দেয়,খুব উপকার হয়। তাহলে আর কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে পেটের তাগিদে বাইরে যেতে হবে না।
বারাসত পৌরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের পালপাকুড়িয়ার রেল বস্তিতে থাকেন আদিত্য। পরিবার বলতে মা, বাবা, দাদা আর তিনি । বাবা অবশ্য মানসিক রোগী। কোনও কাজ করেন না । মা মামনি সেলাইয়ের কাজ কোনও রকমে সংসার চালান । নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে হাল ফেরাতে মাসতিনেক আগে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেন আদিত্য । সেখানে সেন্টারিংয়ের কাজে যোগ দিয়ে উপার্জনের কিছু টাকাও বাড়িতে পাঠাতে শুরু করেছিলেন তিনি । পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আগেই সবকিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেল ! ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আতঙ্কই এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে যুবকের জীবনে । এই বিষয়ে আদিত্য বলেন, "কিছুতেই ভুলতে পারছি না ট্রেন দুর্ঘটনার দুঃস্বপ্নের সেই রাত । এখনও ভয়ে জড়োসড় হয়ে রয়েছি ৷"
আরও পড়ুন: 'রাজ্যে কর্মসংস্থান চাই', মৃত তরুণের দেহ ফিরতেই আওয়াজ তুললেন স্থানীয়রা
এদিকে, ট্রেন দুর্ঘটনায় ছোট ছেলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসায় খুব খুশি আদিত্যর মা মামণি দাস । তাঁর কথায়,কোনও মাই চায় না তাঁর ছেলে বাইরে যাক কাজের সূত্রে । কিন্তু, আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকলে কী করবে মানুষ । নিরুপায় হয়েই বাইরে যেতে হয় । তাই, এরপর আর বাইরে পাঠানোর ইচ্ছা নেই ছেলেকে ৷