কামদুনি, 3 নভেম্বর: রেশন বণ্টন দুর্নীতিকাণ্ডে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ইডি'র হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছে। কোথাও বাকিবুর রহমানকে সামনে রেখে বিঘার পর বিঘা জমি নিজের নামে করার অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আবার কোথাও বেনামে রিসর্ট, হোটেল-সহ বিপুল সম্পত্তির মালিকানা হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে। সেই সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এর মধ্যেই এবার রেশন বণ্টন দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠল। আর সেই অভিযোগ আসল কামদুনি আন্দোলনের প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়ালের কাছ থেকে।
কীভাবে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী ও জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কামদুনির আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিলেন ! কীভাবেই বা সেই আন্দোলনের প্রতিবাদ মুখ মৌসুমী, টুম্পা কয়ালদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। তার সবটাই মৌসুমী কয়াল তুলে ধরেছেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, "কামদুনি কাণ্ডের পরপরই তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী তথা শাসকদলের দাপুটে নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক স্বয়ং কামদুনি গ্রামে এসে খিচুড়ি বিলি করে গিয়েছেন। গ্রামের স্কুল মাঠে রক্তদান শিবির এবং ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনও করা হয়েছিল তাঁর ইশারাতে। কলেজ ছাত্রী একটি মেয়েকে দুষ্কৃতীরা গণধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করল! যখন তাঁর বাড়িতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান চলছে। গ্রাম জুড়ে বিষন্নতা! তখন মন্ত্রী হয়ে কীভাবে তিনি গ্রামে খিচুড়ি বিলি করেন ? এটা দেখে তখন আমাদের অস্বাভাবিক লেগেছিল। আসলে উনি খিচুড়ি বিলি করে কামদুনি কাণ্ডের অপরাধীদের হাত শক্ত করতে চেয়েছিলেন। তা না হলে কেউ দুঃখ-যন্ত্রণার মধ্যেও এই কাজ করতে পারেন ?"
এরপরই তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সভাপতি, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন কামদুনি আন্দোলনের প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়াল। তাঁর কথায়, "আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে না পারে, তার জন্য সব রকমের চেষ্টা করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। প্রথমে চাকরির টোপ দেওয়া ! তাতে কাজ না হওয়ায় আন্দোলন দমাতে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো। সবটাই হয়েছিল তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। যদিও জামিন যোগ্য মামলা হওয়ায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে সুরাহা পায় আমরা ৷" 10 বছরের আগের সেই সমস্ত ঘটনার স্মৃতি আজও টাটকা মৌসুমী কয়ালের।
সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে রীতিমতো গলা ভার হয়ে আসে কামদুনি আন্দোলনের প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়ালের। তিনি বলেন, "যেদিন গ্রামের স্কুল মাঠে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল সেদিন গ্রামবাসীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমরা।তখন তিনি আমাদের বলেন আন্দোলন করে কি হবে ? চাকরি নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করো। কিন্তু সেদিন মন্ত্রীর সেই প্রস্তাব আমরা ফিরিয়ে দিই।অথচ নিহত কলেজ ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের সে নিয়ে গিয়ে চাকরি দিয়েছিল। টাকা দিয়েছিল । আমি মনে করি ওনার পাপের ঘরা পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই ওনার জেলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক । যারা গরিব মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। জমি, বাড়ি-সহ বিপুল সম্পত্তি করেছে । তারা জেলে না গেলে সাধারণ মানুষেরই বিপদ বাড়ত। সেই কারণে জ্যোতিক্রিয়া মল্লিকের মন্ত্রীসভার পদ খারিজ করা উচিত ৷"
আরও পড়ুন: প্রাক্তন আপ্ত সহায়কের ফোন থেকে বাকিবুরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বালু, খবর ইডি সূত্রে
এদিকে, গ্রেফতার হওয়ার আগে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাপট যে কতটা ছিল সেকথাও মৌসুমী কয়াল তুলে ধরেছেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে। তিনি বলেন, "কামদুনি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ ছিল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাতে। সেই কারণে তাঁর ইন্ধনে আমার স্বামীর ভেড়ির মাছ লুট করা হয়েছিল। ভেড়ির আল কেটে দিয়েছিল তৃণমূল কর্মীরা। সেই সময় ভয়ে কিছুই বলতে পারেনি। এখন সাহস করে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সব অপকর্ম তুলে ধরতে হচ্ছে। আমি রাজ্য সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একথা বলছি ঠিকই। কিন্তু যখন তখন আমাকে প্রাণেও মেরে ফেলার চক্রান্ত হতে পারে। তবু বলছি এই সরকারের একের পর এক দুর্নীতির কারণে ৷"