বারাসত, 20 সেপ্টেম্বর: কখনও রেশন সামগ্রী কারচুপি, আবার কখনও নিম্নমানের রেশন সামগ্রী। এই ধরনের অভিযোগ শুনতেই এতদিন অভ্যস্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু, রেশনের বদলে নগদ টাকা, ভাবাই যায় না! অবাস্তব লাগলেও বাস্তবে এমনই ঘটনা ঘটেছে উত্তর 24 পরগনা জেলার সদর শহর বারাসতে। সেখানকার এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে রেশন সামগ্রী দেওয়ার বদলে গ্রাহকদের হাতে নগদ টাকা গুঁজে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাও আবার প্রকাশ্যে। টাকা দেওয়ার সেই ভিডিয়ো সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে নতুন পুকুর এলাকায়।
বিষয়টি যে অন্যায় হয়েছে তা পরে স্বীকারও করে নিয়েছেন অভিযুক্ত রেশন ডিলারের স্ত্রী সুজাতা রায়। ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। যদিও তাতে আশ্বস্ত হতে পারেনি গেরুয়া শিবির। উলটে দুর্নীতি ইস্যুতে শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, বারাসত পৌরসভার 27 নম্বর ওয়ার্ডের নতুন পুকুর এলাকায় ন্যায্যমূল্যের রেশন দোকান রয়েছে সুজয় কুমার রায়ের। দীর্ঘদিন ধরেই রেশন দোকানটি চালাচ্ছেন তিনি। দোকানে ঢোকার মুখে সাইনবোর্ডে তা জ্বলজ্বল করছে। ওই সাইনবোর্ডের পাশে আরও একটি সাইনবোর্ড লক্ষ্য করা গিয়েছে। যেটি আবার অনিমা রানি দাস নামে এক রেশন ডিলারের। অভিযোগ, বকলমে সেটিও ওই রেশন দোকান থেকে চালাচ্ছেন সুজয় কুমার দাস।যা সম্পূর্ণ নিয়ম বিরুদ্ধ বলেই অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী।
যদিও এনিয়ে প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলতে চাননি। যেমনটি, নগদ টাকা দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও মুখে কুলপ এঁটেছেন গ্রাহকদের একাংশ। রেশনে কারচুপি ঠেকাতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের খাদ্য দফতর প্রতিটি রেশন দোকানে ডিজিটাইসড পদ্ধতি চালু করেছে। অর্থাৎ, বায়োমেট্রিক ছাড়া কোনও গ্রাহকই এখন থেকে আর রেশন সামগ্রী নিতে পারবেন না। এছাড়া রেশন প্রক্রিয়া আরও সরলীকরণ করতে 'দুয়ারে রেশন'-ও চালু হয়েছে কিন্তু, তারপরও অভিযোগ কিন্তু থেমে নেই রেশন ডিলারদের একাংশের বিরুদ্ধে। যা বুধবার স্পষ্টত দেখা গেল বারাসতে ওই রেশন দোকানে।
যে রেশন সামগ্রী গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। সেই সামগ্রী রীতিমতো দোকানে মজুত করে তার বদলে পরিমাণ মতো নগদ টাকা গুঁজে দেওয়া হচ্ছে রেশন নিতে আসা গ্রাহকদের একাংশের হাতে। এমনই অভিযোগ উঠেছে রেশন ডিলার সুজয় কুমার রায়ের বিরুদ্ধে। আর যিনি রেশন দোকানে বসে এই বেআইনি কারবার চালাচ্ছেন তিনি আর কেউ নন!রেশন ডিলারের স্ত্রী সুজাতা রায়।তবে এবারই প্রথম নয়।দিনের পর দিন এই অনৈতিক কাজকর্ম তিনি রেশন দোকানে বসে করে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু কিভাবে এই কারবার চালাচ্ছেন রেশন ডিলারের স্ত্রী! জানা গিয়েছে, প্রথমে তিনি গ্রাহকের রেশন কার্ড জমা নিচ্ছেন। এরপর ক্যালকুলেটরে হিসাব করে নেওয়া হচ্ছে ওই গ্রাহকের রেশন সামগ্রীর পরিমাণ এবং বিক্রির মূল্য। সেই পরিমাপ মতো নগদ টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে গ্রাহকের হাতে।সবটাই চলছে কিন্তু প্রকাশ্যে। ক্যামেরায় সেই ছবি ধরা পড়তেই আকুতি বিনতি শুরু করে দেন রেশন ডিলারের স্ত্রী। পরে সংবাদমাধ্যমের জোরাজুরিতে সেই বেআইনি কারবার স্বীকারও করেন তিনি। কিন্তু, এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই কিছুক্ষণের মধ্যে রেশন দোকান বন্ধ করে পাততাড়ি গুটিয়ে সেখান থেকে পগাড় পা হয়ে যান সকলে।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, "ঘটনাটি আমার কানে এসেছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা সত্বেও বলব, সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। তাঁরা রেশনের বদলে কেন টাকা নিতে যাবেন? তার মানে তো অন্যায় কাজে তাঁরাও উৎসাহ জোগাচ্ছেন।মুখ্যমন্ত্রী যে উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে রেশন ব্যবস্থা চালু করেছেন সেই উদ্দেশ্যই তো আখেরে সফল হবে না। এটা আমাদের সকলের মাথায় রাখতে হবে।"
অন্যদিকে, এই ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেছে গেরুয়া শিবির। এই বিষয়ে বিজেপির যুব মোর্চার জেলা নেতা দেবাশিস সরকার বলেন, "সরষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে তাহলে সেই ভূত তাড়াবেন কীভাবে? তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সমস্ত স্তরেই দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। তা শিক্ষক নিয়োগ হোক কিংবা রেশনিং ব্যবস্থা। দুর্নীতি ও তৃণমূল সমার্থক শব্দ।"
আরও পড়ুন: বরাদ্দকৃত খাদ্য সামগ্রী না পেয়ে রেশন দোকানে তালা চা শ্রমিকদের