ঠাকুরনগর, ৫ মার্চ : তিনি বীণাপাণি দেবীর দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী। কাকভোরে বড়মাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা, রাতে ঘুম পাড়ানো, সবই একা হাতে করতেন তিনি। এখন দিনভর কেবলই এঘর ওঘর করছেন বড়মার তিরিশ বছরের ছায়াসঙ্গী মিনতি মণ্ডল। মুখে একটাই প্রশ্ন ছিল, কবে বাড়ি ফিরবেন বড়মা।মিনতি জানেন না যে, বড়মা আর কোনও দিনই ফিরবেন না।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থানার সরবেড়িয়ার বাসিন্দা মিনতি মণ্ডল নয়ের দশকে ঠাকুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তারপর আর ফিরে যাননি। তখন বড়মা বেশ শক্তসমর্থ ছিলেন। নিজের কাজ নিজেই করতে পারতেন। তবু মিনতি ঠাকুরবাড়ির টুকটাক কাজকর্মের ফাঁকে বড়মার দেখাশোনা শুরু করেন। বড়মার কখন, কী প্রয়োজন সবই বুঝতেন এক ইশারায়। বয়সে ছোট হলেও বড়মা মিনতিকে মা বলে ডাকতেন। আবার মিনতিও তাঁকে মা বলে ডাকতেন। কয়েক বছর আগে যখন বড়মার শরীর ক্রমশ ভাঙতে শুরু করে, তখন থেকে ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য কাজ ছেড়ে মিনতি বড়মার ছায়াসঙ্গী হয়ে যান। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে তুলে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া, হাত-মুখ ধোওয়ানো থেকে শুরু হত মিনতির কাজ। প্রতিদিন গাইঘাটা ব্লক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের দল বড়মার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসতেন। মিনতি চিকিৎসকদের কথা মন দিয়ে শুনতেন। কখন কী ওষুধ খাওয়াতে হবে ভালো করে বুঝে নিতেন। বড়মাকে স্নান করানো, খাওয়ানো সবই মিনতি একা হাতে করতেন।
মিনতি চাইছেন, বড়মা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসুন। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না বীণাপাণি দেবীর। আজ SSKM হাসপাতালে রাত ৮টা ৫২ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।