দেগঙ্গা, 10 জুলাই : ফের কুসংস্কারের বলি দেগঙ্গায় । সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে নিয়ে যাওয়া হল ওঝার বাড়িতে ৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলল ঝাড়ফুঁক । পরিণতি, প্রাণ খোয়াতে হল ব্যক্তিকে । চিকিৎসকমহলের একাংশ মত, বছর চল্লিশের সমীর পাড়ুইকে সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো তিনি বেঁচে যেতেন ৷ ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেগঙ্গার বেড়াচাপার পাড়ুইপাড়ায় ।
শুক্রবার গভীর রাতে সমীর স্থানীয় একটি বিলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন । তখনই বিষাক্ত কোনও সাপ পায়ে কামড়ায় তাঁর । তারপরই অসহ্য যন্ত্রণা হতে থাকে ৷ তাঁর বাড়ির লোকজন তাঁকে নিয়ে স্থানীয় এক ওঝার কাছে যান । সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে থাকে ঝাড়ফুঁক ৷ সমীর সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে দাবি করে ওই ওঝা পরিবারের লোকজনকে তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পরামর্শ দেন । সেই মতো সমীরকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তাঁর বাড়ির লোক । ভোরের দিকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন সমীর ৷ নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে তাঁর শরীর । তখন বাধ্য হয়ে তাঁকে নিয়ে দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছোটেন পরিবারের লোকজন । কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে । স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় সমীরের ৷ ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ।
নিহতের প্রতিবেশী সোমনাথ ঘোষ বলেন, "সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে অনেকেই আগে ওঝার কাছে নিয়ে যান । ভাবেন সেখানে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করালে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন । এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে ৷" তবে আগেই যদি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, তাহলে সমীর প্রাণে বেঁচে যেতেন বলে ধারণা তাঁর প্রতিবেশীর ।
কুসংস্কারের ঘটনা দেগঙ্গায় নতুন কিছু নয় । এর আগেও ওঝার কেরামতিতে সাপে কাটা রোগীকে প্রাণ হারাতে হয়েছে এখানে । কুসংস্কার কাটাতে বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে দেগঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে প্রচার করা হয়েছে ঠিকই । কিন্তু তারপরও একশ্রেণির মানুষ যে এখনও কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি তা আবারও স্পষ্ট এই ঘটনায় ৷ এদিনের ঘটনার পর বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা জানাচ্ছেন, কুসংস্কারের ছায়া থেকে বেরিয়ে কেন একশ্রেণির মানুষ এখনও সচেতন হচ্ছেন না, তা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা । এনিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে বিজ্ঞান মঞ্চ ।
আরও পড়ুন : ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, শ্য়ালকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ মৃতার বাবার