ETV Bharat / state

যক্ষ্মা রোগে মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট পেতে নাকাল, দেহ আগলে পরিবার - family faces problem to get death certificate

অভিযোগ, দিনের পর দিন হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে পড়ে থেকে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যান মুকেশ । তার পর ডেথ সার্টিফিকেট পেতে সমস্যা হয় ৷

করোনা আবহে অমানবিক দৃশ্য
করোনা আবহে অমানবিক দৃশ্য
author img

By

Published : Jul 26, 2021, 1:46 PM IST

বারাসত, 26 জুলাই : মারা গিয়েছেন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে । অথচ, সংক্রমণের আশঙ্কায় সেই মৃতদেহ ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে । এমনকি, মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট না মেলায় অসহায় পরিবার দেহ আগলে বসে থাকেন রাস্তার একধারে । মৃতের নাম মুকেশ মণ্ডল ৷ সবকিছু দেখেও অসহায় ওই পরিবারের পাশে স্থানীয়দের কেউই সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ । করোনা আবহে এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর 24 পরগনার জেলাসদর বারাসত ।

যদিও ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি বাড়িওয়ালা । উল্টে মৃতের পরিবারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি । স্থানীয় তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর তো আবার ঘটনার কথা জানতেনই না বলে দাবি করেছেন । ডেথ সার্টিফিকেট পেতে গেলে প্রশাসনের মুখাপেক্ষী থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলে আজব যুক্তি দিয়েছেন তিনি । ফলে, কোনও সুরাহা না হওয়ায় এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেহ পড়ে থাকে রাস্তার ধারে । শেষে, দীর্ঘক্ষণ পর পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে পাঠায় বারাসত হাসপাতালে ।

বছর পঞ্চান্নের মুকেশ মণ্ডলের বাড়ি বিহারে । কাজের সূত্রে স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে তিনি বারাসত বাণীকণ্ঠ নগরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন । মুকেশ অতিরিক্ত নেশা করতেন । সম্প্রতি তাঁর টিবি রোগ ধরা পড়ে । শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয় বারাসত হাসপাতালে । অভিযোগ, কিছুদিন চিকিৎসা চলার পর পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই রোগীকে । এরপর, তাঁকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে গেলে সংক্রমণের অজুহাত দিয়ে বাড়িওয়ালা বাধা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে । শেষমেশ ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে না পেরে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আশ্রয় নেন হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে । অভিযোগ, দিনের পর দিন সেখানেই পড়ে থেকে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যান মুকেশ । এরপর থেকেই দুর্ভোগের শুরু মৃতের পরিবারের । প্রথমত, ডেথ সার্টিফিকেট পেতে হয়রানি । দ্বিতীয়ত, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভাড়া বাড়িতে দেহ নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ । এই দুয়ের জেরে রবিবার দিনভর নাজেহাল হতে হয় অসহায় পরিবারকে । কোথায় যাবেন বুঝতে না পেরে শেষে মৃতদেহ রাস্তার ধারে রেখে আগলে বসে থাকেন পরিবারের লোকেরা । স্থানীয়রা দেখেও তাঁদের পাশে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ । উল্টে, ওই ব্যক্তির নেশার কারণে পরিবারকে-ই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছিল বলে দায় ঝেড়েছেন এলাকাবাসী । স্থানীয় তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর থেকেও সেভাবে সহযোগিতা না মেলায় দেহ সৎকার করতে পারেননি পরিবার । শেষমেশ খবর পেয়ে বিকেলের দিকে এগিয়ে আসে বারাসত থানার পুলিশ । ঘটনাস্থানে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে তারা পাঠায় বারাসত হাসপাতালে । সূত্রের খবর, সেখান থেকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হলে সোমবার দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে । এই বিষয়ে মৃতের স্ত্রী সুমিত্রা মণ্ডল বলেন, "বারাসত হাসপাতালে অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া আর কোনও চিকিৎসাই হয়নি । 17 জুলাই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর স্বামীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে চেয়েছিলাম । কিন্তু,সংক্রমণ ছড়াবে এই কথা বলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি সেখানে । হাসপাতাল চত্বরেই এদিন সকালে মারা যায় মুকেশ । কিন্তু,হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেথ সার্টিফিকেট দিতে রাজি হয়নি । উল্টে অন্য জায়গা থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । কোথাও ডেথ সার্টিফিকেট না পেয়ে সৎকার করতে পারিনি । রাস্তাতেই বাধ্য হয়ে দেহ আগলে বসে রয়েছি । আমরা চাই, মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে দিক প্রশাসন । এটাই অনুরোধ তাদের কাছে ৷"

যক্ষ্মা রোগে মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট পেতে নাকাল, দেহ আগলে পরিবার

এই সংক্রান্ত খবর : স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপে চিকিৎসার খরচ ফেরত পেল রোগীর পরিবার

যদিও, মৃতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বাড়িওয়ালা অঞ্জলি পোদ্দার বলেন, "উনি(মুকেশ) নেশা করতেন বলে ওনার স্ত্রী ও মেয়ে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না । ওদের নিজেদের সমস্যা । এরমধ্যে বাড়িওয়ালার কোনও বিষয় নেই ৷" উল্টে ভাড়ার টাকা বকেয়া রয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তিনি । বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার 15 নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত ঘোষ বলেন, "ওই পরিবার আমার সঙ্গে আগে যোগাযোগ করেনি । এদিন শুনতে পারলাম পরিবারের গৃহকর্তা মারা গিয়েছেন । রাস্তায় মারা গেলে তার ডেথ সার্টিফিকেট পেতে গেলে কিছু নিয়ম বিধি রয়েছে । তার উপর কোনও ডকুমেন্ট নেই ওদের কাছে । যার ফলেই ডেথ সার্টিফিকেট পেতে সমস্যা হয়েছে । আমার দিক থেকে কোনও সহযোগিতা যদি প্রশাসন চাই, তা অবশ্যই করব ৷" এই বিষয়ে বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি ।

বারাসত, 26 জুলাই : মারা গিয়েছেন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে । অথচ, সংক্রমণের আশঙ্কায় সেই মৃতদেহ ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে । এমনকি, মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট না মেলায় অসহায় পরিবার দেহ আগলে বসে থাকেন রাস্তার একধারে । মৃতের নাম মুকেশ মণ্ডল ৷ সবকিছু দেখেও অসহায় ওই পরিবারের পাশে স্থানীয়দের কেউই সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ । করোনা আবহে এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর 24 পরগনার জেলাসদর বারাসত ।

যদিও ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি বাড়িওয়ালা । উল্টে মৃতের পরিবারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি । স্থানীয় তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর তো আবার ঘটনার কথা জানতেনই না বলে দাবি করেছেন । ডেথ সার্টিফিকেট পেতে গেলে প্রশাসনের মুখাপেক্ষী থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলে আজব যুক্তি দিয়েছেন তিনি । ফলে, কোনও সুরাহা না হওয়ায় এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেহ পড়ে থাকে রাস্তার ধারে । শেষে, দীর্ঘক্ষণ পর পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে পাঠায় বারাসত হাসপাতালে ।

বছর পঞ্চান্নের মুকেশ মণ্ডলের বাড়ি বিহারে । কাজের সূত্রে স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে তিনি বারাসত বাণীকণ্ঠ নগরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন । মুকেশ অতিরিক্ত নেশা করতেন । সম্প্রতি তাঁর টিবি রোগ ধরা পড়ে । শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয় বারাসত হাসপাতালে । অভিযোগ, কিছুদিন চিকিৎসা চলার পর পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই রোগীকে । এরপর, তাঁকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে গেলে সংক্রমণের অজুহাত দিয়ে বাড়িওয়ালা বাধা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে । শেষমেশ ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে না পেরে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আশ্রয় নেন হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে । অভিযোগ, দিনের পর দিন সেখানেই পড়ে থেকে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যান মুকেশ । এরপর থেকেই দুর্ভোগের শুরু মৃতের পরিবারের । প্রথমত, ডেথ সার্টিফিকেট পেতে হয়রানি । দ্বিতীয়ত, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভাড়া বাড়িতে দেহ নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ । এই দুয়ের জেরে রবিবার দিনভর নাজেহাল হতে হয় অসহায় পরিবারকে । কোথায় যাবেন বুঝতে না পেরে শেষে মৃতদেহ রাস্তার ধারে রেখে আগলে বসে থাকেন পরিবারের লোকেরা । স্থানীয়রা দেখেও তাঁদের পাশে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ । উল্টে, ওই ব্যক্তির নেশার কারণে পরিবারকে-ই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছিল বলে দায় ঝেড়েছেন এলাকাবাসী । স্থানীয় তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর থেকেও সেভাবে সহযোগিতা না মেলায় দেহ সৎকার করতে পারেননি পরিবার । শেষমেশ খবর পেয়ে বিকেলের দিকে এগিয়ে আসে বারাসত থানার পুলিশ । ঘটনাস্থানে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে তারা পাঠায় বারাসত হাসপাতালে । সূত্রের খবর, সেখান থেকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হলে সোমবার দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে । এই বিষয়ে মৃতের স্ত্রী সুমিত্রা মণ্ডল বলেন, "বারাসত হাসপাতালে অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া আর কোনও চিকিৎসাই হয়নি । 17 জুলাই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর স্বামীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে চেয়েছিলাম । কিন্তু,সংক্রমণ ছড়াবে এই কথা বলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি সেখানে । হাসপাতাল চত্বরেই এদিন সকালে মারা যায় মুকেশ । কিন্তু,হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেথ সার্টিফিকেট দিতে রাজি হয়নি । উল্টে অন্য জায়গা থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । কোথাও ডেথ সার্টিফিকেট না পেয়ে সৎকার করতে পারিনি । রাস্তাতেই বাধ্য হয়ে দেহ আগলে বসে রয়েছি । আমরা চাই, মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে দিক প্রশাসন । এটাই অনুরোধ তাদের কাছে ৷"

যক্ষ্মা রোগে মৃতের ডেথ সার্টিফিকেট পেতে নাকাল, দেহ আগলে পরিবার

এই সংক্রান্ত খবর : স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপে চিকিৎসার খরচ ফেরত পেল রোগীর পরিবার

যদিও, মৃতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বাড়িওয়ালা অঞ্জলি পোদ্দার বলেন, "উনি(মুকেশ) নেশা করতেন বলে ওনার স্ত্রী ও মেয়ে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না । ওদের নিজেদের সমস্যা । এরমধ্যে বাড়িওয়ালার কোনও বিষয় নেই ৷" উল্টে ভাড়ার টাকা বকেয়া রয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তিনি । বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার 15 নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত ঘোষ বলেন, "ওই পরিবার আমার সঙ্গে আগে যোগাযোগ করেনি । এদিন শুনতে পারলাম পরিবারের গৃহকর্তা মারা গিয়েছেন । রাস্তায় মারা গেলে তার ডেথ সার্টিফিকেট পেতে গেলে কিছু নিয়ম বিধি রয়েছে । তার উপর কোনও ডকুমেন্ট নেই ওদের কাছে । যার ফলেই ডেথ সার্টিফিকেট পেতে সমস্যা হয়েছে । আমার দিক থেকে কোনও সহযোগিতা যদি প্রশাসন চাই, তা অবশ্যই করব ৷" এই বিষয়ে বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.