মধ্যমগ্রাম, 16 জানুয়ারি: দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ডের ছায়া এ বার মধ্যমগ্রামে । স্ত্রীকে খুনের পর, দেহ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে খালে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৷ হাড়হিম করা এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার মধ্যমগ্রামের উত্তর জোজরা গ্রামে ।
পারিবারিক অশান্তির জেরে ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ ৷ মৃত গৃহবধূর নাম সায়রা বানু । পুলিশ সূত্রে খবর, স্ত্রীকে খুনের পর নিজেও বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত । তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । আপাতত সেখানেই পুলিশের নজরবন্দি তিনি ।
ঠিক কী ঘটেছিল ?
জানা গিয়েছে, নুরউদ্দিন মণ্ডল নামে 55 বছরের ব্যক্তি কিছুদিন আগে মধ্যমগ্রাম থানায় তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর নামে একটি মিসিং ডায়েরি করেন । তার ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ । তদন্তের স্বার্থে বেশ কয়েকবার মহিলার স্বামী নুরউদ্দিনকে ডেকে জেরা করেন তদন্তকারীরা । সূত্রের খবর, জেরায় একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে । তারই মধ্যে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্যত্র গিয়ে বিষ খান নুরউদ্দিন । অচৈতন্য অবস্থায় এক ব্যক্তিকে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের । এরপর খবর পেয়ে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে চিনতে পারেন । বুঝতে পারেন বিষ খাওয়া ওই ব্যক্তি আদপে নুরউদ্দিনই । চিনতে পেরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি ।
তবে, হাসপাতালে যাওয়ার পথে নুরউদ্দিন পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে, তিনিই স্ত্রীর গলায় ছুরি দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে খুন করেছেন । তারপর দেহ টুকরো টুকরো কেটে তা ফেলে দিয়েছেন নোয়াই খালে । এ কথা শোনার নুরউদ্দিনের বাড়ির পাশের খালে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ । সেখান থেকে ধাপে ধাপে মেলে মহিলার দেহাংশ । তবে, এখনও বেশ কিছু দেহের অংশের খোঁজ পাওয়া সম্ভব হয়নি । তা পেতে খালে নৌকায় চেপে খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ ।
সূত্রের খবর, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা কারণে দাম্পত্য কলহ চলছিল । ইদানিং সেই কলহ চরমে পৌঁছয় বলে অভিযোগ । তার জেরেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড বলে অনুমান পুলিশের । যদিও এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে । এ নিয়ে নুরউদ্দিনের মেয়েকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা । গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
প্রসঙ্গত, মধ্যমগ্রামের এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে দিল্লির শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যাকাণ্ড । 2022 সালে এমনই এক নৃশংস ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল । যা জানতে পেরে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ । প্রথমে খুন, তারপর লিভ-ইন পার্টনারের দেহ 35 টুকরো করে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল প্রেমিক আফতাব পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে । 18 দিন ধরে দিল্লিতে দেহাংশ ছড়িয়েছিলেন ওই যুবক । তারপরও শেষরক্ষা হয়নি । পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি । এক্ষেত্রেও স্ত্রীর মিসিং ডায়রির 'নাটক' করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে পারেননি 'খুনি' স্বামী ।
আরও পড়ুন: