কলকাতা, 2 নভেম্বর: গুজরাতের সেতু বিপর্যয় (Gujarat Bridge Tragedy) নিয়ে ব্যথিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । তিনি নিজে মোরবিতে যেতে চান । একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, এভাবে সেতু সংস্কার অপরাধ । এর সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত । এদিন এই ঘটনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নজরদারিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন মমতা ।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল লা গণেশনের আমন্ত্রণে এদিন চেন্নাই উড়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ কলকাতা বিমানবন্দর থেকে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি গুজরাতের ব্রিজ বিপর্যয় নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া দেন । সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, তাড়াহুড়ো করে মোরবিতে সেতু খুলে দেওয়া ঠিক হয়নি । ভোটের কারণে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে । একই সঙ্গে তাঁর দাবি, সেতু ভেঙে এখনও অনেকে নিখোঁজ । এই ঘটনায় যারা আহত বা নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ঠিক মতো সাহায্য করছে না গুজরাত সরকার (Gujarat Government) ।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘‘রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ নয় । গুরুত্বপূর্ণ জনগণের জীবন । গুজরাতে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমি হতবাক । আমি নিহতদের পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানাচ্ছি । যেভাবে ব্রিজ ভেঙে গিয়েছে, তাতে অনেক মানুষের জীবন গিয়েছে । এখনও অনেকেই নিখোঁজ । আমাদের রাজ্যেও একটি দেহ এসেছে । আমি জানি না শেষ পর্যন্ত কতগুলি মৃতদেহ ওখানে পাওয়া যাবে । আমাদের গোটা বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে দেখা উচিত ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যেভাবে সেতু বানানো হয়েছিল, তা অপরাধ । দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত । এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের হাতে থাকে না । কোনও দুর্ঘটনা কোনও সরকারই ঘটাতে চায় না । কিন্তু যাদের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়, তাদের তো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা উচিত ।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি ব্রিজ এই মুহূর্তে রয়েছে বাংলায় । বাংলা এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গঠন এমন যে আমাদের এখানে নদীর সংখ্যা বেশি । আর সে কারণেই আমাদের এখানে ব্রিজের সংখ্যা অনেক বেশি । আমাদের এখানেও একটা দুর্ঘটনা হয়েছিল, সে সময় আমি খড়্গপুরে ছিলাম । তবে এই ঘটনার পর দ্রুত ফিরে মানুষের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আমি করেছিলাম ।’’
আরও পড়ুন: গুজরাতে নাগরিকত্ব দেওয়া ভোট-রাজনীতি, বাংলায় সিএএ লাগু হবে না, বললেন মমতা
তাঁর দাবি, ‘‘কিন্তু আমার কাছে খবর আছে গুজরাতে দুর্গত মানুষদের ঠিকমতো করে সাহায্য করা হচ্ছে না । কারণ সরকার ব্যস্ত নির্বাচন করাতে । সরকারের যদি নির্বাচনের জন্য ব্যস্ততা না থাকত, তড়িঘড়ি ব্রিজ খুলে দেওয়ার প্রয়োজন কি ছিল ?’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আপনারা যখন সংস্কার করতে চাইছেন খুব ভালো কথা । কিন্তু ব্রিজের ফিট সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার আগেই সেই ব্রিজ চালু করে দেওয়া ঠিক হয়নি । একটা অসম্পূর্ণ ব্রিজকে সম্পূর্ণ বলে চালিয়ে দেওয়া ক্রাইম ।’’
মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন । টেন্ডার প্রসেস থেকে ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পেছনে যারা যারা যুক্ত আছে, কেন ইডি-সিবিআই থেকে অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাগুলি তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তাহলে কি এটা বলতে হবে, সিবিআই ইডি-সহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করতেই ব্যস্ত ৷ কিন্তু যারা প্রকৃত অপরাধী এবং এতগুলো মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন চুপ থাকে এই সংস্থাগুলি ।’’
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) বক্তব্য প্রসঙ্গেও তাঁকে প্রশ্ন করা হয় । তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না । কারণ, এটা তার নিজের রাজ্য ।’’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যোগ্য অডিট টিম তৈরি করা দরকার । এই বিষয়টা কেন্দ্রীয় সরকারের নজর দেওয়া জরুরি । এতগুলো মানুষের জীবন জীবিকা জড়িয়ে থাকে একটি ব্রিজের সঙ্গে তাকে অনভিজ্ঞ লোকের হাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী ।
এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, গুজরাতের ব্রিজ ভাঙা নিয়ে রাজনীতি করতে চান না তিনি । কারণ, তিনি মনে করেন মানুষের জীবন রাজনীতির থেকেও উপরে । তিনি এও জানান, তিনি নিজে মোরবিতে গিয়ে ঘুরে দেখতে চান ঘটনাস্থল । কিন্তু তিনি যেতে চাইলে বিজেপি (BJP) বলবে রাজনীতি করতে তিনি এসেছেন বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর কথায়, ‘‘আর সে কারণেই আমি চাই এই ব্রিজ বিপর্যয় যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক, পরিবারের লোকেদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা হোক ।’’