মধ্যমগ্রাম, 8 নভেম্বর: রেল স্টেশনের ধারে টিনের একচিলতে ঘরে থাকে কিশোর পবিত্র ৷ সে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ৷ বয়স 13 বছর ৷ এই বয়সেই নিজের হাতে ছোট্ট কালী প্রতিমা গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে ৷ একবছর, দু-বছর নয় ! গত পাঁচ বছর ধরে ঝুপড়ির ঘরে নিজের হাতে তৈরি কালী মূর্তি পুজো করছে সে ৷ প্রতিমা গড়া থেকে পূজা-অর্চনা, মন্ত্রোচ্চারণ-সবই পাবে পবিত্র ৷
এদিকে ছেলের এই প্রতিভা ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বাবা-মায়ের কাছে ৷ নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে পবিত্র'র প্রতিভায় গর্বিত হলেও কোথাও যেন দুশ্চিন্তা কাজ করছে ৷ শিয়ালদা-বনগাঁ শাখার মধ্যমগ্রাম স্টেশনের রেল ঝুপড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে পবিত্র ঘোষ ৷ বাড়ি বলতে টিনের চাল দেওয়া এক কামরার ঘর ৷ সেখানেই তিনজনের সংসার ৷
বাবা লক্ষ্মণ ঘোষ নির্মাণ শ্রমিক, মা দীপিকা অন্য বাড়িতে রান্নার কাজ করেন ৷ ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান পবিত্র ৷ সে মধ্যমগ্রাম বয়েজ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ৷ পড়াশোনার ফাঁকে প্রতিমা গড়া তাঁর নেশা ৷ ন'বছর বয়স থেকেই পবিত্র তাঁর বাড়ির কালী প্রতিমা গড়ে চলেছে ৷
প্রতিমা গড়া প্রসঙ্গে পবিত্র নিজেই বলে, "চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় খেলার ছলে ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সঙ্গে প্রতিমা গড়ার চ্যালেঞ্জ করেছিলাম ৷ তখন থেকেই প্রতিমা গড়া শুরু ৷" প্রথম চারবছর রাস্তা থেকে মাটি কুড়িয়ে এনে প্রতিমা গড়লেও এবছর কুমোরপাড়া থেকে মাটি কিনে ছোট্ট প্রতিমা গড়ছে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ৷
কাঠামোর উপর মাটি দিয়ে এক ফুটের কালী প্রতিমা তৈরি করেছে সে ৷ এখনও রঙের প্রলেপ দেওয়া বাকি ৷ ছোট্ট হাতে ধীরে ধীরে বাকি কাজ সামাল দিচ্ছে 13 বছর বয়সি পবিত্র ৷ নিজের হাতে প্রতিমা গড়লেও রঙ, তুলি এবং মায়ের কাপড় কিনে দিয়ে ছেলেকে উৎসাহ দেয় তাঁর বাবা-মা দম্পতি ৷ পবিত্র'র বাবা-মা চান, ছেলের এই প্রতিভা যেন হারিয়ে না যায় ৷
মা দীপিকা ঘোষ বলেন, "আমরা ওকে রঙ, তুলি, মায়ের কাপড় কিনে দিই ৷ বাকি সবটাই ও (পবিত্র) নিজের হাতে করে ৷ পুজোর দিন সম্পূর্ণ নির্জলা উপবাস থেকে মায়ের পুজো করে ছেলে ৷ ও অনেক বড়ো হোক ৷ নিজের মতো করে বাঁচুক ৷ আমরা ওকে সেই আশীর্বাদ করি ৷"
আরও পড়ুন: ভোগে থাকে শোল-বোয়াল, মানত করতে ভক্তের ঢল নামে বয়রা কালীমাতার পুজোয়