বাদুড়িয়া (উত্তর 24 পরগনা), 10 ডিসেম্বর: গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত তৃণমূলকে (Trinamool Congress) সঙ্ঘবদ্ধ করতে এবার দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriya Mallick) । স্পষ্টভাবে বললেন, "দলে থেকে কোনও গ্রুপিজিম (গোষ্ঠী) করা যাবে না । তৃণমূলে একটাই প্লাটফর্ম থাকবে । সেটি শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ৷" শনিবার উত্তর 24 পরগনার বাদুড়িয়ায় এক রক্তদান শিবিরে (Blood Donation Camp) হাজির হয়ে মঞ্চ থেকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কড়া বার্তা দেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির ।
রক্তদান শিবিরের মঞ্চে থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে এদিন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আরও বলেন, "দলের মধ্যে যেন কোনও দ্বিধা দ্বন্দ্ব না থাকে । আমাদের নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নেতা হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ৷ তারপরও কেন আমাদের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকবে ? দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকলে তা কাটিয়ে উঠতে হবে । একসঙ্গে সকলকে চলতে হবে । থাকতে হবে । খেতে হবে । কোনও কর্মী আক্রান্ত হলে সকলে মিলে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে । যাতে কেউ চক্রান্ত করতে না পারে ৷"
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Elections 2023) সুষ্ঠুভাবে করা নিয়েও এদিন দলীয় কর্মীদের সতর্ক করেছেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । তাঁর কথায়, "পঞ্চায়েত ভোট যেন প্রহসনে পরিণত না হয় । সুষ্ঠু এবং অবাধে পঞ্চায়েত ভোট করতে হবে । মানুষ যেন তাঁর নিজের ভোট দিতে পারে । এটা আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি । কোথায়ও কারও কোনও অভিযোগ থাকলে সে যেন প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে যায় । কিন্তু কোনও মতেই মানুষকে ভোটদানে বাধা দেওয়া যাবে না ৷"
এই পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, "বিজেপির তিন-চারটে চ্যাংড়া, ছোকরা উস্কানি দিয়ে বাজার গরম করার চেষ্টা করছে । বাংলা ভাষায় তাঁদের আমরা ফড়ে বলে থাকি । তাঁদের সঙ্গে মিশেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও । যারা প্রতিনিয়ত উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে পঞ্চায়েত ভোটের আগে । এদের উস্কানিতে পা দেওয়া চলবে না । সচেতন থাকতে হবে সবাইকে । আর বিজেপিকে শেষ করতে হবে এই রাজ্য থেকে ৷"
পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল কতটা শক্তিশালী তা বোঝাতে গিয়ে বনমন্ত্রী বলেন, "বসিরহাটে আমাদের সংগঠন অনেকটাই শক্তিশালী । কোনও রাজনৈতিক দলের টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা নেই তৃণমূলের সঙ্গে । প্রতিটি নির্বাচনে বারেবারে তা প্রমাণ হয়েছে । সেই নিরিখে পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমাদের ঘর গোছানো রয়েছে । শুধু সকলকে মিলেমিশে সংগঠনের কাজ করতে হবে ৷"
এদিকে, রাজ্যের বনমন্ত্রী ও জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কড়া বার্তা দিচ্ছেন নিজের দলকে, তখন আমন্ত্রিত হয়েও সেই রক্তদান শিবিরের মঞ্চে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা মেলেনি তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক কাজী আব্দুল রহিমকে । যা নিয়ে আরও প্রকট হয়ে উঠেছে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল ।
সূত্রের খবর, রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তা তৃণমূল নেতা বুরহান মুকাদ্দিম লিটনের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরেই বিবাদ চলছে বাদুড়িয়ার বিধায়ক কাজী আব্দুল রহিমের । তাও আবার স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী একটি মেলার দখলদারি নিয়ে । সেই কারণেই কি বিধায়ক গরহাজির রইলেন তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতার রক্তদান শিবিরে ? এই প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে তখন এই নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে । যদিও কোথাও মনোমালিন্য থাকলে তা অচিরেই মিটে যাবে বলে দাবি করেছেন তিনি ।
অন্যদিকে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) 'ডিসেম্বর'-ডেডলাইনকে এদিন কার্যত গুরুত্ব দিতে চাননি বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । ডিসেম্বরে তৃণমূলই পাল্টা খেলা দেখাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি ।
আরও পড়ুন: ভাঙড়ে তৃণমূল নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে চলল 12 রাউন্ড গুলি, মিলল তাজা বোমা