বারাসত (উত্তর 24 পরগনা), 31 মে: পুলিশের বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভ যেন ক্রমশই বাড়ছে । ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং, দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের পর এবার পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খুলে সরকারের অস্বস্তি বাড়ালেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বর্ষীয়ান নেতা শক্তিপদ মণ্ডল । মন্ত্রী রথীন ঘোষ, আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই মঞ্চ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তিনি ।
তৃণমূলের শ্রমিক নেতা শক্তিপদ মণ্ডল বলেন, "শ্রমিকের থেকে মমতার হয়ে এখন বেশি গলা ফাটাচ্ছেন পুলিশই । কিছু বলতে গেলেই মুখের ওপর বলে দিচ্ছে, দিদির নির্দেশ রয়েছে । তাই আমরা দিদিকেই যা বলার বলব । ফলে, পুলিশের থেকে ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না শ্রমিকরা ৷"
অটো দুর্নীতি নিয়েও দলের একাংশকে নিশানা করে বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন দক্ষিণ 24 পরগনার আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি শক্তিপদ মণ্ডল । সেই মঞ্চ থেকেই বিধাননগরের আইএনটিটিইউসি নেতা শেখ আনোয়ার হোসেন আবার শ্রমিক আন্দোলনে দলীয় কাউন্সিলর, বিধায়ক এবং সাংসদদের মাতব্বরি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন । সেটাও প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে শক্তিপদ মণ্ডলকে ।
বুধবার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র এক কর্মী সম্মেলন আয়োজিত হয় উত্তর 24 পরগনার বারাসতে ।রবীন্দ্র ভবনে হওয়া সেই সম্মেলনে দুপুরের দিকে হাজির হন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ । তার আগে অবশ্য সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর সঙ্গেই এদিন সম্মেলনে উপস্থিত হন দক্ষিণ 24 পরগনার পোড় খাওয়া শ্রমিক নেতা শক্তিপদ মণ্ডলও । সেই সম্মেলন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া দিয়ে পুলিশকে নিশানা করেন তিনি ।
শক্তিপদ মণ্ডল বলেন, "প্রতিদিনই দুটো তিনটে করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে পরিবহণ কর্মীদের । ন্যায় বিচারের জন্য থানায় গেলে পুলিশ বলছে, দিদির নির্দেশে এসব করা হচ্ছে । তাই দিদিকেই যা বলার বলব ! এর ফলে শ্রমিক-মালিকের দ্বন্দ্ব বাড়ছে । আপনি যদি আপনার সরকারের কথা বলেন, তখন মমতার হয়ে বেশি কথা তুলবে পুলিশ । আপনার থেকে বেশি চিৎকার করে পুলিশ মমতার জয়গান শুরু করবে । মমতাকে বেকায়দায় ফেলতে এই পুলিশ এবং সরকারি কর্মচারীদের একাংশ প্রতিনিয়ত চক্রান্ত করে চলেছে । যেখানে মানুষের কন্ঠস্বর সরকারের কাছে পৌঁছাচ্ছে না । সেখানেই আমাদের প্রতিবাদ । আমাদের হারানোর কিছু নেই । দেশের তথাকথিত আইনের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঠিক বিচার দিতে পারছি না ৷"
এরপরই অটো দুর্নীতি নিয়ে মুখ খোলেন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের এই বর্ষীয়ান নেতা । তাঁর কথায়, "অটো পেশার সঙ্গে গরিব মানুষ যুক্ত । অথচ অটো মানেই এখন দুর্নীতি । অটোর পারমিট থেকে শুরু করে রাস্তায় নামানো সব ক্ষেত্রেই টাকা ছাড়া কোনও কথা নেই । সেখানে যেমন দালালদের বাড়বাড়ন্ত, তেমনই পরিবহণ কর্মীদের একাংশ এই দুর্নীতিতে জড়িত ৷ টাকা না দিলে রাস্তায় কোনও অটো কিংবা টোটো বেরবে না । চলবে না । ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না । যে রকম পারছে সে রকমই করছে ৷"
এই বিষয়ে মন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, "যদি কোথাও কোনও সমস্যা হয়ে থাকে তার সুরাহা নিশ্চয় করবেন আইএনটিটিইউসি-র নেতারা । এটুকু বলব, দিনের শেষে আমরা সবাই তৃণমূলের পরিবার । সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক । পথ চলতে গিয়ে কখনও কখনও হয়তো নিজেদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়ে থাকতে পারে । তবে নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে তা মিটেও যায় । আশা করব এখানেও সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ৷"
অন্যদিকে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ।
আরও পড়ুন: ব্যারাকপুরে দুষ্কৃতীরাজ নিয়ে দলকে বার্তা অর্জুনের