পেট্রাপোল, 21 ফেব্রুয়ারি : অমর একুশ । মাতৃভাষার জন্য লড়াইয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় বাঙালি ছাত্রদের । আজ আপামর বাঙালির আবেগের দিন । সেই আবেগের মাহেন্দ্রক্ষণেই মুছে গেল ভারত-বাংলাদেশ কাঁটাতারের সীমারেখা । দুই বাংলার যৌথ উদ্যোগে উদযাপিত হল অমর একুশ ।ভাষাপ্রেমীদের বাঁধভাঙা আবেগের পারাপার রুখতে পারল না BFS ও BGB । কার্যত নীরব দর্শক হয়েই সেই মিলন দৃশ্য দেখল দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ।
বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডের অমর একুশের অনুষ্ঠান ঘিরে প্রতি বছরই দুই বাংলার মিলন উৎসব পালিত হয় । তবে, চলতি বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়, একমঞ্চে আর অনুষ্ঠান করা যাবে না । সেই মতো এপারে পেট্রাপোলে ও ওপারে বেনাপোলে দু'টি আলাদা মঞ্চ করা হয় আজ । নো ম্যানস ল্যান্ডে তৈরি হয়েছিল যৌথ শহিদবেদি । সেখানেই আজ সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হয় । প্রশাসনিকভাবে বলা হয়েছিল দু'দেশের 75 জন করে প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন । সঙ্গে 10 জন করে সাংবাদিক । তাঁদের নামের তালিকাও BSF ও BGB-র হাতে দেওয়া হয়েছিল আগেই ।
আজ নো ম্যানস ল্যান্ডে যৌথ শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বনগাঁর পৌরপ্রধান শংকর আঢ্য । মাল্যদান করেন বাংলাদেশের সমবায় মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও যশোরের সাংসদ শেখ আফিলউদ্দিন । তারপরই ভারতীয় প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন । তাদের আটকানোর চেষ্টা করে BSF ও BGB । কিন্তু আবেগের মিছিলকে প্রতিরোধ করা যায়নি । ওপারের মঞ্চে প্রায় একঘণ্টা চলে অনুষ্ঠান । তারপর বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও আসেন এপারে । স্রোতের মতো । এবারও ঠেকাতে পারেনি দু'দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ।
শ্রদ্ধা জ্ঞাপনসহ একাধিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দু'পারেই এদিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয় । রক্ত বিনিময় হয় দু'পারের মধ্যে । বাংলা ভাষার উপর তাত্ত্বিক আলোচনা, গান, কবিতা ও নাচের মধ্যে দিয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, অমর একুশে আমাদের প্রাণের উৎসব । আজকের দিনে আমরা সব বাধা পেরিয়ে বাংলাভাষার জন্য দুই বাংলার মানুষ এক হয়েছি । পরেও হব । বাংলাদেশের মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ''একুশে শুধু ভাষাদিবস নয় । দুই বাংলার মিলনের তিথি । প্রতিবছর এই দিনে আমরা দুই বাংলার মানুষ সীমান্তের এই নো ম্যানস ল্যান্ডে মিলনের সেতু গড়ে তুলি ।'' বাংলাদেশের ভাষাপ্রেমী রিনি দফাদার বলেন, ''প্রতিবছর এই একুশের উৎসবে আমরা দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীরা মিলিত হই । ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাই । আমরা চাই এই উৎসব ভবিষ্যতেও যেন জারি থাকে।''
জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন বনগাঁর পৌরপ্রধান শংকর আঢ্য, বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস, পুলিনবিহারী রায়সহ ভাষাপ্রেমীরা ।