বসিরহাট, 31 মে : ঘূর্ণিঝড় যশের তাণ্ডবে উপার্জনের একমাত্র সম্বল চলে গিয়েছে জমা জলের তলায় ৷ সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে ক্ষতি হয়েছে মাছের ভেড়ির ৷ ফলে, অথৈ জলে পড়েছেন সুন্দরবনের মাছ চাষিরা ৷ উপার্জন হারিয়ে তাঁদের এখন পথে বসার জোগাড় ৷ কী করবেন, কীভাবে বিপুল ক্ষতি সামাল দেবেন, তা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না যশ বিধ্বস্ত সুন্দরবনের মাছ চাষিরা ৷ এই পরিস্থিতিতে সরকারি ক্ষতিপূরণের আশায় দিন গুণছেন তাঁরা ৷
ঘূর্ণিঝড় যশের প্রভাবে এবং ভরা কোটালের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বিদ্যাধরী, গৌরেশ্বর, কালিন্দী, রায়মঙ্গল, কলাগাছি, বেতনি এবং ইছামতি নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ৷ সন্দেশখালি- ও 2, হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখাঁ-সহ সুন্দরবন লাগোয়া বসিরহাটের প্রায় ছ’টি ব্লক এখনও জলের তলায় ৷ নদীর দু‘কুল উপচে জল ঢুকেছে লোকালয়ে ৷ ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে একের পর এক গ্রাম ৷ বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে পড়েছে মাছের ভেড়িতে ৷ এর ফলে ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষের ৷ মরা মাছ ভেসে উঠেছে ভেড়ির জলে ৷ বিঘার পর বিঘা মাছের ভেড়িতে মিশেছে সমুদ্রের নোনা জল ৷
আরও পড়ুন : যশের প্রকোপে হুগলিতে বিঘ্নিত জনজীবন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমি
প্রসঙ্গত, এই এলাকার অধিকাংশ মানুষই মাছ চাষের উপরই নির্ভরশীল ৷ উপার্জনের একমাত্র সেই সম্বল কেড়ে নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় যশ ৷ এর আগে আমফানের ক্ষতি সামলাতে গিয়ে মাছ চাষিদের অনেকেই ধারদেনা করেছেন ৷ যার জন্য নিয়মিত চোকাতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের সুদ ৷ কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের ঘূর্ণিঝড় আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে ৷
মাছ চাষিদের বক্তব্য, ঘূর্ণিঝড় যশের ধাক্কায় তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাই শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা ৷ এখন তাঁদের পক্ষে দেনা শোধ করাই দায় ৷ এই অবস্থায় সরকার এগিয়ে না এলে তাঁদের পথে বসা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না ৷ তাই সরকারি ক্ষতিপূরণের আশায় দিন গুনছেন সুন্দরবনের মাছ চাষিরা ৷
আরও পড়ুন : যশ বিধ্বস্ত সন্দেশখালিতে ত্রাণসামগ্রী দিল তৃণমূল যুব কংগ্রেস
এই বিষয়ে সমীর সরকার নামে এক মাছ চাষি বলেন, ‘‘প্রায় 23 বিঘা জমি লিজ নিয়ে সাদা ও নোনা মাছ চাষ করেছিলাম ৷ কিন্তু, ঘূর্ণিঝড় যশে সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ প্রচুর টাকার মাছ মরে গিয়েছে ৷ উপায় তো কিছুই দেখছি না ৷ একমাত্র সরকারি সাহায্যই বাঁচাতে পারে আমাদের ৷ নইলে পথে বসতে হবে ৷’’
একই সুর শোনা গিয়েছে হোসেন আলি মোল্লা, ইজরায়েল গাজিদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের গলাতেও ৷ তাঁদের কথায়, ‘‘মাছ চাষই ছিল আমাদের উপার্জনের একমাত্র সম্বল ৷ এর থেকে যা উপার্জন হত, তা দিয়েই সংসার চলত ৷ কিন্তু, নোনা জল ঢুকে পড়ায় কোনও মাছই আর বেঁচে নেই ভেড়িতে ৷ এই অবস্থায় পথে বসা ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছি না ৷ আমরা চাই এই বিপদে সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াক ৷ ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের আর্থিক সাহায্য করুক ৷’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতির পরিমাপ নির্ধারণ করে ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষি এবং কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ৷