বসিরহাট, 24 মে : আমফানের ক্ষত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি । স্মৃতিতে এখনও টাটকা আমফানের ভয়াবহতা । তারই মধ্যে এবার ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন যশ ৷ দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে বসিরহাটের কৃষকদের । ক্ষতির আশঙ্কায় আতঙ্কে এখন দিন কাটছে তাঁদের । আমফানের মতো এবারও যদি চাষের ক্ষতি হয়, তাহলে পথে বসা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না, বলছেন অধিকাংশ কৃষকই । তাই ধাক্কা সামলাতে সরকারি ক্ষতিপূরণ ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছেন না চাষিরা ।
গতবছর ঠিক মে মাসে সুপার সাইক্লোন আমফান আছড়ে পড়েছিল সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকায় । তার তাণ্ডবে ঘরবাড়ি, চাষের জমি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল । বহু ক্ষয়ক্ষতির সাক্ষী সুন্দরবনের মানুষ । আমফানের ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল সুন্দরবন ঘেঁষা বসিরহাটের উপকূলবর্তী এলাকাতেও । বিশেষ করে বসিরহাট 1 ও 2, স্বরূপনগর, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া এবং বাদুড়িয়া ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তছনছ হয়ে গিয়েছিল আমফানের তাণ্ডবে । নদীবাঁধ ভেঙে নোনাজল ঢুকে ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশো হেক্টর চাষের জমির । মাথায় হাত পড়েছিল কৃষকদের । সেই দুর্বিষহ দিনের কথা ভুলতে পারেন না তাঁরা । ক্ষত সামলাতে কৃষকদের কেউ মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ধার নিয়েছেন, কেউ আবার স্ত্রীর সোনাদানা বন্ধক রেখেছিলেন । এভাবেই কোনওমতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন কৃষকদের একাংশ । কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রুকুটি ৷ এবার সুপার সাইক্লোন যশ, যা গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের কাছে । চাষিদের একাংশের কথায়, করোনার জেরে রাজ্যে কার্যত লকডাউন চলায় এমনিতেই তাঁরা ফসল ঠিকমতো বিক্রি করতে পারছেন না । তার ওপর ফের ঘূর্ণিঝড়ের জন্য যদি ক্ষতির মুখে পড়তে হয়, তাহলে এবার না খেয়ে মরতে হবে ৷ সেই জায়গায় কৃষকদের কাছে এখন একমাত্র ভরসা সরকারি ক্ষতিপূরণই ।
প্রতাপ মণ্ডল নামে এক কৃষক বলেন, "ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের খবরে যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছি আমরা । গতবছর আমফানে আম, পাট এবং কলাচাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল । নষ্ট হয়েছিল প্রচুর ফসল । প্রবল হাওয়ায় আমার বাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল । সেই ধাক্কা সামলাতে গিয়ে স্ত্রীর সোনাদানা বন্ধক রেখে ধার নিতে হয়েছিল । এবারও আশঙ্কায় দিন কাটছে আমাদের । আবার যদি ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাহলে পথেই বসতে হবে । আমরা চাই, প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক, যাতে তাঁরা পুনরায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন ৷" আমফানের ক্ষতিপূরণের দলাদলি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি ।
একই সুর শোনা গিয়েছে আরেক কৃষক মনোজকুমার সরকারের গলাতেও । তাঁর মতে, "আমফানের আগে যে কৃষক মোটা ভাত, মোটা কাপড় দিতে পারত পরিবারকে ৷ আমফানের পর পরনের কাপড় টিকিয়ে রাখাই তাঁদের কাছে দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে । যশ নিয়ে প্রশাসনের শুধু সতর্কবার্তাই শুনছি । কিন্তু পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে কিছুই বলতে শুনছি না ৷ তাই মনের ভরসাতেই রয়েছি ৷"
যশের প্রভাবে ধান, পাট, সর্ষে-সহ বিভিন্ন ফসলের যেমন ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে তেমনই আম চাষেরও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে । এই বিষয়ে আম ব্যবসায়ী মণিতোষ চক্রবর্তী বলেন, "আমফানে আমি নিজেও ভুক্তভোগী । কোনও রকমে সেই ধাক্কা সামলে আবারও আম ফলিয়েছিলাম । ভেবেছিলাম দু'পয়সার মুখ দেখবে । কিন্তু লকডাউনের জেরে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না । বাজারে গিয়েও ন্যায্য দাম মিলছে না । লাভের চেয়ে লোকসান হচ্ছে বেশি । তার ওপর যদি ফের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসে, তাহলে সেই ক্ষতি সামলানোর শক্তি আর থাকবে না ৷"
সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড় যশের জেরে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বসিরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষকরা ।
আরও পড়ুন : কথা রাখলেন মমতা, তৃণমূলের ইস্তাহারের 3 প্রতিশ্রুতিতে ছাড়পত্র মন্ত্রিসভার