বকখালি, 29 সেপ্টেম্বর : বাজারে চাহিদা আছে ৷ কিন্তু একটানা বৃষ্টির জেরে শুঁটকি মাছের জোগান দিতে পারছে না ব্যবসায়ীরা ৷ একের পর এক দুর্যোগের জেরে দিশেহারা সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা । সপ্তাহের শুরুতে নিম্নচাপের জেরে তিনদিন প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার শুঁটকি মাছ ব্যবসার । বৃষ্টির জলে পচন ধরে নষ্ট হয়েছিল প্রচুর শুঁটকি মাছ । ক্ষতির সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে দুটি ঘূর্ণাবর্তের ভ্রূকুটিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ খটি ও সাবাড় মালিক থেকে কর্মচারীদের ।
ফ্রেজারগঞ্জের বালিয়াড়ার এক খটির মালিক নবকুমার মণ্ডল বলেন, " যশের পর একের পর এক নিম্নচাপের জেরে ভারী বৃষ্টিপাতে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন ৷ খারাপ আবহাওয়ার জেরে মাছও শুকনো করতে পারছি না । সপ্তাহের শুরুতে নিম্নচাপের জেরে ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য প্রচুর মাছ পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে । এই ক্ষতি আমরা কি ভাবে সমাল দেব বুঝে উঠতে পারছি না । তার উপর আবারও পরপর দুটি দুর্যোগের ফলে ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে । "
আরও পড়ুন : Kolkata rain : একটানা বৃষ্টিতে ফের জলমগ্ন কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ
সমুদ্র ও নদীর তটে অবস্থিত খটি বা সাবাড় হল মাছ শুকনো করার জায়গা । এক সময় সুন্দরবনের জম্বুদ্বীপে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ও চিংড়ি ধরার পর শুকনো করার জন্য সাবাড় গড়ে উঠেছিল । পরে বনদফতর ও মৎস্য দফতরের বিরোধে সেই সাবাড় সরিয়ে মৎস্যজীবীদের নিয়ে যেতে হয়েছিল সুন্দরবনের উপকূল এলাকায় । তারপর থেকেই সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, নামখানা ও ফ্রেজারগঞ্জের নদী ও সমুদ্র উপকূলের বালুচরে কয়েক’শো খটি ও সাবাড় গড়ে ওঠে । খটি আসলে সাবাড়ের তুলনায় আয়তনে ছোট হয় । খটিতে খুব বেশি হলে 20 থেকে 25 জন মৎস্যজীবী শ্রমিক কাজ করলেও সাবাড়ে 300 থেকে 400 জন মৎস্যজীবী শ্রমিক কাজ করেন । বর্ষার পরই সেপ্টেম্বরের মাঝ বরাবর থেকে সাবাড় ও খটিগুলোতে মাছ শুকনো করার কাজ শুরু হয় । ভাল আবহাওয়া থাকলে এই কাজ চলে পরের বছরের মার্চ পর্যন্ত । এখানকার মাছ গোটা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হয় । বাংলাদেশ ও উত্তর পূর্ব ভারতে এই শুকনো মাছের চাহিদা রয়েছে । পশু খাদ্যের জন্যও বিভিন্ন সংস্থা এই মাছ কিনে নিয়ে গিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করে ।
কিন্তু টানা লকডাউনের জেরে রফতানিতেও এবার মার খেয়েছেন এই মৎস্য ব্যবসায়ীরা । শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী অমিয় মণ্ডলের কথায়, "এ বছর সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই বিপর্যয়ের পর বিপর্যয় । ফলে মাছ শুকনো করতে না পারায় শুঁটকি মাছ তৈরি করতে পারছি না । এবছর আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েও ব্যবসা বন্ধ করতে পারছি না । কারণ, মৎস্যজীবী শ্রমিকদের মাসিক মাইনে ঠিক করা রয়েছে । কাজ হোক বা না হোক তাঁদের মাইনে তো বুঝিয়ে দিতে হবে । অনেক মৎস্যজীবী শ্রমিক ঠিকমতো কাজও পাচ্ছেন না ।" পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন এই দুর্যোগ কেটে রোদের দেখা মিলুক এটাই চাইছেন এই মাছ ব্যবসায়ীরা ৷