বারাসত, 19 ডিসেম্বর: 'উনি (চিরঞ্জিত) অপসংস্কৃতির লোক ! বিধায়কের দায়িত্ব পালনের চেয়ে নিজের অভিনয় জগতেই বেশি সময় দেন । সেই কারণে নিজের বিধানসভা এলাকার মানুষও ঠিকমতো পায় না তাঁকে ৷" নাম না-করে এবার দলেরই তারকা বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তীকে মঙ্গলবার তুলোধোনা বারাসত পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুনীল মুখোপাধ্যায়ের । শুধু তাই নয়,'মধু' নিয়ে চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর 'তির্যক' মন্তব্যেরও পালটা জবাব দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান নেতা । সুনীলবাবুর কথায়, "10 বছর বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং 2 বছর পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব ছিল আমার কাঁধে । এতগুলো বছর পৌরসভার দায়িত্ব থেকেও বারাসতে কী 'মধু' ভাণ্ডার রয়েছে, তা আমি কখনও খুঁজে পাইনি । সেটা হয়তো উনি ভালো জানেন । সেই জন্য 'মধু' থাকার কথা বলছেন ৷"
সম্প্রতি নিজের বিধানসভা কেন্দ্র বারাসতে এক অনুষ্ঠানে এসে নাম না করে দলেরই বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে নিয়ে একের পর বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন তিনি । সেই সময় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের তারকা বিধায়ক বলেন,"বারাসতে মধু আছে বলেই ও (নারায়ণ) বারবার চেষ্টা করে এখান থেকে তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হতে । কিন্তু, প্রতিবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে টিকিট দিয়ে দেন । সামনের 2026-র ভোটেও বারাসত থেকে দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য এখন থেকেই টার্গেট নিতে শুরু করেছে । কেউ ভাবতেই পারে আমি গাছে উঠব । পাহাড়ে উঠব । ঐশ্বর্য রাইকে বিয়ে করব ! এসব কথা মূল্যহীন । উনি অশোকনগর বিধানসভা নিয়ে যত-না ব্যস্ত ! তার থেকে বেশি ব্যস্ত থাকেন আমার বিধানসভা (বারাসত) নিয়ে ।"
এর আগে অবশ্য দলের কোর-কমিটির বৈঠকে বারাসতের নাগরিক পরিষেবা নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন খোদ অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী । তার প্রেক্ষিতেই মুখ খুলেছিলেন শাসকদলের তারকা বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী । এবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর হয়ে ব্যাট ধরে সেই বিতর্ক আরও বাড়ালেন দলের প্রবীণ নেতা ও জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুনীল মুখোপাধ্যায় ।
মঙ্গলবার বারাসতে নিজের বাড়িতে বসে এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পালটা চিরঞ্জিতকে নিশানা করেছেন তিনি । সুনীলবাবুর মতে, "কোর-কমিটির বৈঠকে বারাসতের নাগরিক পরিষেবা দেওয়া নিয়ে নারায়ণ গোস্বামী যা বলেছে তার মধ্যে নিশ্চয় কোনও বাস্তবতা আছে ! একথা বলে সে কোনও অপরাধ করেনি । দলের সাংগঠনিক বৈঠকের আলোচনা নিয়ে বাইরে মুখ খুলে সঠিক কাজ করেননি উনি (চিরঞ্জিত)। আরও সংযত হয়ে কথা বলা উচিত ছিল তারকা বিধায়কের । আমি শুনেছি, উনি বলেছেন কারোর ইচ্ছা হলেই ঐশ্বর্য রাইকে বিয়ে করব ? উনি একজন সংস্কৃতি সম্পন্ন মানুষ । তাই ওনার মুখে অপ-সংস্কৃতির কথাবার্তা শোভা পায় না ।"
এরপরই বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর প্রশংসা করে সুনীল বলেন, "নারায়ণ সংগঠনের লোক । দীর্ঘদিন ধরেই ও সংগঠনের কাজের সঙ্গে যুক্ত । তাই ওর আশা থাকতেই পারে আমি বারাসত থেকে প্রার্থী হব । আমিও তো বারাসত থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য নেত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম । এবার কাকে প্রার্থী করা হবে, না হবে সেটা সম্পূর্ণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্তিয়ারভুক্ত । তাঁর সিদ্ধান্ত আমরা সকলে মেনে নিই । এটা নিয়ে এত আলোচনা হওয়ার কী আছে ! এতে তো নিজেদের মনোমালিন্য সামনে চলে আসছে । এটা তো ঠিক নয় ।"
চিরঞ্জিতের উদ্দেশ্যে সুনীলের শ্লেষ, "উনি বারবার বলেন আমি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই না । অথচ প্রতিবারই প্রার্থী হয়ে যান ! দিদি(মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)তাঁকে প্রার্থী করেন ! নিশ্চয় দিদি ভালো কিছু বুঝতে পেরেছেন । দল চালাতে গেলে সবাইকেই দরকার হয় । সেলিব্রিটিদের যেমন লাগে । তেমনই বুদ্ধিজীবীদের প্রয়োজন হয় ৷"
অন্যদিকে, সুনীল মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন,"আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি তৃণমূল দলে কোনও গণতন্ত্র নেই । বারাসতে মধু তো নিশ্চয় আছে । সেই মধু কে খাচ্ছে সেটা তৃণমূল নেতৃত্বের থেকে ভালো কেউ জানে না । শাসকদলের দুই বিধায়কের খেয়োখেয়িতে আখেরে মানুষই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ৷"
আরও পড়ুন :
1 মমতার পর মুখ্যমন্ত্রী কে ! অভিষেক নিয়ে কুণালের মন্তব্য নিজস্ব বলে দাবি চিরঞ্জিতের
2 'যাদের ধরছে তাদের থেকে নিশ্চয় কিছু পাচ্ছে', জ্যোতিপ্রিয় কাণ্ডে ভিন্ন সুর চিরঞ্জিতের গলায়