বারাসত, 11 নভেম্বর: টার্মিনাস থেকে বাস নিয়ে বেরোলেই 10 টাকার রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে চালকদের হাতে ৷ যে যতবার যাত্রী সহ বাস নিয়ে বেরোবে, ততবার তাঁকে গুনতে হবে 10 টাকা করে ৷ শুধু, 10 টাকাই নয়, রাতে টার্মিনাসে বাস রাখলেও চালকদের আরও 50 টাকা করে গুনতে হয় ৷ সবটাই নেওয়া হয় 'উন্নয়নের' নামে ৷ ইচ্ছে না থাকলেও প্রতিদিন সেই টাকাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে বাসচালকদের ৷ অভিযোগ, টাকা না দিলে টার্মিনাস থেকে বাস করতে পারেন না তাঁরা ৷ এটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল পরিচালিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বারাসতের তিতুমির কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাসে ৷ তবে,'উন্নয়নের' নামে বাস থেকে লাখ লাখ টাকা তোলা হলেও সেই উন্নয়নের নামগন্ধ নেই এই টার্মিনাসে ৷ অভিযোগ খোদ বাস চালকদের একাংশের ৷
প্রতিদিন এভাবেই 10 থেকে 15 হাজার টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ মাসে সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে কয়েক লাখ টাকা ৷ জেলা পরিষদের দাবি উন্নয়ন খাতে এই টাকা নেওয়া হয় ৷ কিন্তু সেই টাকার সিংহভাগই তিতুমির বাস টার্মিনাসে খরচ করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ বাস চালকদের একাংশই ৷ পানীয় জলের সমস্যা থেকে শুরু করে শৌচাগার, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা সবকিছুই প্রকট হয়ে উঠেছে এখানে ৷ যার জেরে ক্ষোভ রয়েছে বাস কর্মীদের মধ্যে ৷ তাঁরা এনিয়ে জেলা পরিষদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ৷ তবে,টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও উন্নয়নে কোনও খামতি রাখা হয়নি বলে দাবি করেছেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী ৷
স্থানীয় সূত্র মারফত খবর , 2003 সালে বারাসত চাঁপাডালি মোড় সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয় তিতুমির বাস টার্মিনাস ৷ এখান থেকে প্রতিদিন 16-17 টি রুটের বেসরকারি বাস ছাড়াও বিভিন্ন রুটের সরকারি বাস চলাচল করে ৷ সরকারি ও বেসরকারি বাস মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় 100-এর উপরে ৷ এই টার্মিনাসের তত্ত্বাবধানে রয়েছে তৃণমূল পরিচালিত উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদ ৷ সরকারি বাস থেকে ওই টাকা নেওয়া হয়না ৷ অথচ,বেসরকারি বাস পিছু চালকদের প্রতিদিন টাকা দিতে হয় ৷ অভিযোগ, এই টাকা না দিলে টার্মিনাস থেকে বাস বেরনো কিংবা রাতে টার্মিনাসে বাস রাখা কোনওটাই করতে পারেন না চালকরা ৷ কেউ, যাতে ফাঁকি দিয়ে টার্মিনাস থেকে বাস বের করতে না পারে, তার জন্য জেলা পরিষদের তরফে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীও ৷ চালকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ তৎপর হলেও টার্মিনাসের উন্নয়নে সেই তৎপরতা দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ ৷
বাসকর্মী থেকে নিত্যযাত্রীদের জন্য এখানে একটি মাত্রই জলের কল রয়েছে ৷ অভিযোগ, বেশ কয়েকটি জলের কল থাকলেও সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে ৷ শৌচাগার, জলনিকাশি ব্যবস্থাও খুব খারাপ ৷ অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধের মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে বাসকর্মীদের ৷ টার্মিনাসের পাশেই জঞ্জালের স্তূপ ৷ নর্দমাগুলোও অপরিষ্কার ৷ L 238 বাসের চালক রবীন ঘোষ বলেন, "আমাদের প্রায় 50টির মতো বাস প্রতিদিন এই টার্মিনাস থেকে যাতায়াত করে ৷ জেলা পরিষদ এই টাকা নিলেও কী খাতে টাকা নেয়, তা জানা নেই ৷ পানীয় জল, শৌচাগার, নিকাশি ব্যবস্থা সবকিছুই এখানে ভেঙে পড়েছে ৷" অজয় মিত্র নামে অপর এক বাস চালক বলেন, "আমি DN 16/1 রুটের বাস চালক ৷ প্রতিদিন টাকা দিতে হয় ৷ না দিলে টার্মিনাস থেকে বাস বের করতে দেওয়া হয় না ৷ অথচ, আমাদের এখানে কোনও নিরাপত্তা নেই ৷ মাঝেমধ্যেই চুরির ঘটনা ঘটছে ৷ নিরাপত্তারক্ষীকে বলতে গেলে জেলা পরিষদের কাছে অভিযোগ করতে বলেন ৷" টাইমকিপার সুশান্ত ঘোষ বলেন, "উন্নয়নের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে ৷ কিন্তু,জেলা পরিষদের কাজে খামতি রয়েছে ৷ ঠিকমতো নজরদারিই করেন না তাঁরা ৷"
টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও উন্নয়নে কোনও খামতি নেই বলেই দাবি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামীর ৷ তাঁর কথায়, "ওই বাস টার্মিনাসের তত্ত্বাবধানে জেলা পরিষদ রয়েছে ৷ এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ৷ যে টাকা বাস থেকে নেওয়া হচ্ছে, সেই টাকার পুরোটাই নিরাপত্তারক্ষীদের মাইনে দিতে চলে যাচ্ছে ৷ কারণ, কয়েকশো বাস রয়েছে ৷ তাঁর সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হয় ৷ তারপরও যদি উন্নয়ন নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকে, সেটা আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখব ৷"