বারাসত, 4 ডিসেম্বর: তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় (Social Media) কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন বারাসত পুলিশ জেলার এক ডিআইবি ইন্সপেক্টর ৷ সেই মন্তব্যের কয়েকঘণ্টার মধ্যে সাসপেন্ড করা হল ডিআইবি-র ওই পুলিশ ইন্সপেক্টর আশিস বটব্যালকে (DIB Inspector of Barasat Police District Suspended)।
শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে জনসভা ছিল তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সভায় আগাগোড়া অভিষেকের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা অধিকারী পরিবারের মেজো ছেলে শুভেন্দু অধিকারী। বিতর্কের সূত্রপাত কাঁথির জনসভায় অভিষেক বক্তব্য রাখার ছবির সঙ্গে কুরুচিকর কিছু মন্তব্যকে ঘিরে ৷ অভিযোগ যেটি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন বারাসত পুলিশ জেলার ডিআইবি ইন্সপেক্টর আশিস বটব্যাল।
পোস্টের প্রথমেই একটি অশ্লীল মন্তব্য করেন তিনি ৷ এরপরই তাতে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল চশমাটা-র দাম কত? কোথা থেকে চোখ দেখিয়ে আনলি....! জনগণকে তা বল...! অর্থাৎ পোস্টটি যে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে করা হয়েছিল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য শাস্তির খাঁড়া নেমে আসে ওই ডিআইবি ইন্সপেক্টর আশিস বটব্যালের ঘাড়ে। বরখাস্ত করে দেওয়া হয় ওই পুলিশ কর্তাকে।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর সভাকে ঘিরে রণক্ষেত্র হটুগঞ্জ, পুলিশি ধরপাকড়ে গ্রেফতার 44
বিতর্কের জেরে শেষমেশ সোশাল মিডিয়া থেকে সেই পোস্টটি সরিয়ে নেন তিনি। যদিও তাতে বিতর্ক কমেনি এতটুকু। সূত্রের খবর, আশিস বটব্যাল নামে ওই পুলিশ কর্তা তিনবছর ধরে বারাসত পুলিশ জেলার ডিআইবি ইন্সপেক্টর পদে রয়েছেন। আগে তিনি হুগলি পুলিশ জেলার ডিআইবি-তে ছিলেন। বরাবর সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় এই পুলিশ কর্তা। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল ঘাটলেই স্পষ্ট হবে বিষয়টি। তবে, ক্ষোভ নাকি অন্য কোনও কারণে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে তিনি এই কুরুচিকর পোস্ট করলেন তা খতিয়ে দেখছেন বারাসত জেলার পুলিশ কর্তারা।
অন্যদিকে, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সরগরম হয়ে উঠেছে বারাসতের রাজনীতি। সাসপেন্ড হওয়া ওই পুলিশ কর্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা দীপ্ত কুমার লস্কর বলেন, "এটা শুধু আশিসবাবুর মতো সৎ পুলিশ কর্মীর প্রশ্ন নয়! পুরো বাংলার মানুষের কাছে এই প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। আমরা তো বারবার প্রশ্ন তুলছি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পদের উৎস কি? তিনি যেভাবে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন তা সত্যিই বাংলার রাজনীতির পক্ষে বেমানান। পুলিশ আজ দলদাস তকমা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সেটা স্পষ্ট হয়েছে আশিসবাবুর মতো পুলিশ কর্মীর পোস্টের মাধ্যমে। ওনাকে আমরা কুর্নিশ জানাই ।"
ওই পুলিশ কর্তার পোস্ট-কে অবশ্য সমর্থন করেননি বারাসত পৌরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর দেবব্রত পাল। তাঁর কথায়, "উনি যদি এরকম পোস্ট করে থাকেন তা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। অন্যায় করেছেন তিনি। সরকারি কর্মচারীরা এভাবে প্রকাশ্যে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন না। ওনার বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।"
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য, বিজেপির রাজ্য নেতা সজল ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্তও। যদিও বিভাগীয় তদন্তের বিষয় নিয়ে বারাসত জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় মুখ খুলতে না-চাইলেও ওই পুলিশ কর্তাকে যে সাসপেন্ড করা হয়েছে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। আর এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনীতির অন্দরে। সাসপেন্ড হওয়া ওই পুলিশ কর্তার পাশে গেরুয়া শিবির দাঁড়ালেও বিষয়টি অবশ্য ভালোভাবে নেয়নি শাসক শিবির। যা ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে উত্তর 24 পরগনা জেলার সদর শহর বারাসতে।