বারাসত, 14 মে : করোনার সংক্রমণ কমলেও ডেঙ্গির প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে উত্তর 24 পরগনা জেলায় (Dengue cases increasing day by day in districts)। যা কার্যত করোনার দোসর হিসেবে দাপট দেখাতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে । আর তারই মধ্যে যেন নোংরা, আবর্জনায় ঢেকেছে জেলার সদর শহর বারাসতের মুখ । যত্রতত্র যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে ময়লা, আবর্জনার স্তূপ, অপরিচ্ছন্ন নিকাশি নালাও । সবকিছু জেনেও পৌরসভার কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ । অপরিচ্ছন্নতার ফলে একদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায় । অন্যদিকে বাড়ছে মশার উপদ্রবও । যার জেরে ডেঙ্গির আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে শহরবাসীকে । এই নিয়ে উদ্বেগেও রয়েছেন তাঁরা (Garbage piles everywhere in Barasat)।
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যেখানে পরিচ্ছন্নতা, জমা জল পরিষ্কারের ওপর প্রশাসন জোর দিতে বলছে পৌরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিকে, সেখানে জেলাসদর বারাসত পৌরসভার উদাসীনতায় প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে । ডেঙ্গি সতর্কতার পরও কেন পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়ার হচ্ছে না, তা নিয়ে পৌরসভার বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে বিরোধীরাও । যদিও, অপরিচ্ছন্নতার অভিযোগ মানতে চায়নি পৌর কর্তৃপক্ষ । বরং ডেঙ্গি মোকাবিলায় পৌরসভা সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে বলে সাফাই দিয়েছে তাঁরা ।
আরও পড়ুন : Kakoli Ghosh Dastidar : বারাসত হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স প্রদান সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের
প্রসঙ্গত, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কিংবা মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে বরাবরই প্রথম সারিতে থাকে উত্তর 24 পরগনা জেলার নাম । কয়েক বছর আগে জেলার দেগঙ্গাতেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল । যা ঘিরে শোরগোল পড়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে । সেই সময় ডেঙ্গি রুখতে গিয়ে আবার ব্লিচিং পাউডারের বদলে আটার গুঁড়ো ছড়ানোর অভিযোগও সামনে এসেছিল । ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে গাফিলতির এরকম অভিযোগ ছিল ভুরি ভুরি । তাই এবার আগেভাগে জেলা প্রশাসনকে তা নিয়ে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশও দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান । সেই নির্দেশ মোতাবেক পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে ।
প্রশাসনের অবশ্য দাবি, বিগত বছরের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তাঁরা আগে থেকেই ডেঙ্গি মোকাবিলায় নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন । বিশেষ করে ডেঙ্গি প্রবন এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে ডোর টু ডোর ক্যাম্পেনে জোর দেওয়া হচ্ছে । কোথায়ও যাতে নোংরা, আবর্জনা এবং জমা জল এতটুকু জমে না থাকে, সেবিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে প্রতিটি পৌরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকে । কিন্তু জেলা প্রশাসনের সেই সতর্কতা কি আদৌ ঢুকেছে বারাসত পৌর কর্তৃপক্ষের কানে?
প্রশ্নটা উঠছে এই কারণে পৌর এলাকায় অপরিচ্ছন্নতার সামগ্রিক চিত্র দেখে । যত্রতত্র যেখানে সেখানে নোংরা,আবর্জনার স্তূপ দেখে বোঝার উপায় নেই যে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বারাসত পৌরসভার কোনও হেলদোল রয়েছে কিনা ! শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যেখানেই চোখ রাখা যাবে,সেখানেই পড়ে রয়েছে বিভিন্ন জঞ্জাল । পরিচ্ছন্নতার অভাবে নিকাশি নালাগুলোর দশাও একইরকম । যা নিয়েই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বাসিন্দাদের কপালে । তাদের কথায়, "একদিকে কোভিড পরিস্থিতি । অন্যদিকে মশার উপদ্রবে ডেঙ্গির আতঙ্ক । এই দুয়ের জেরে বিপর্যস্ত শহরের বাসিন্দারা । নোংরা,আবর্জনা পড়ে থাকলে ডেঙ্গি বাড়ার আশঙ্কাও তো থাকে ! এটা পৌরবাসীরা বুঝতে পারলেও শুধু বুঝতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষই । তাই এলাকা জঞ্জাল মুক্ত এবং পরিচ্ছন্ন থাকুক সেটাই চাইছে বাসিন্দারা । তাহলেই রোগ প্রাদুর্ভাব ঠেকানো সম্ভব হবে । প্রশাসনের উচিত সেদিকে নজর দেওয়া ।"
আরও পড়ুন : Alligation of Minor Girl Rape : সন্তান প্রসব 15 বছরের নাবালিকার, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার যুবক
সূত্রের খবর, গ্রামীণ এলাকার চেয়ে এখনও পর্যন্ত শহরেই ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি । কয়েকটি পৌরসভার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা । তার মধ্যে পানিহাটি পৌরসভা অন্যতম । তবে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই দাবি জেলা প্রশাসনের । এদিকে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই জেলাসদর বারাসতের অপরিচ্ছন্নতার এই ছবি নতুন করে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়াতে সহযোগিতা করবে না তো? প্রশ্নটা রয়েই গেল !