বারাসত, 12 মে : দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ । হাতে টাকাও নেই । দীর্ঘ লকডাউনে ঠিকমতো খাবার জুটছিল না । এইদিকে রাজ্যে ফেরানোর কোনও ব্যবস্থা করেনি সরকার । সঞ্চয় নেই, খাবে কী বা পরিবারের মানুষ কী খেয়ে আছে ইত্যাদি ভেবেই হাঁটতে শুরু করেন ওঁরা । মধ্যপ্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে হেঁটেই ফিরে আসেন চার নির্মাণ শ্রমিক । টানা 12 দিন অভুক্ত । শেষে ক্লান্ত হয়ে গত দুপুরে বারাসত ডাকবাংলোর কাছে একটি গয়নার দোকানের সামনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন । তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা ।
12দিন না খেয়ে হাঁটার ফলে চারজনেরই শরীর দুর্বল । চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট । তাঁদের বসে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মীদের । তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন জানতে চান পুলিশকর্মীরা । মধ্যপ্রদেশ থেকে রওনা হেঁটেই বাড়ি ফিরবেন বলে রওনা হন বলে জানান ওই চার শ্রমিক । তাঁদের মধ্যে দুইজনের বাড়ি উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় । অপর দুইজনের বাড়ি গোপালনগরে ।
প্রথমে ওই অভুক্ত শ্রমিকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে ট্রাফিক পুলিশ । পরে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য বারাসত থানায় পৌঁছে দেওয়া হয় । পুলিশের সহায়তায় ওই শ্রমিকদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর ।
লকডাউন শুরুর প্রায় 15 দিন আগে পেটের টানে মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়া জেলায় রেলের ব্রিজ নির্মাণের শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন ওই চারজন । একটি ঠিকাদারি সংস্থার অধীনে কাজ করছিলেন তাঁরা । সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু কোরোনা মোকাবিলায় লকডাউন জারি হওয়ায় বাড়ি ফেরা আর সম্ভব হয়নি তাঁদের । আটকে পড়েন সেখানেই । বন্ধ হয়ে যায় রুটিরুজি । কম্পানির একটি ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও খাবারের সমস্যা হচ্ছিল শ্রমিকদের । কারণ ঠিকাদারি সংস্থা টাকাপয়সা মেটায়নি । হাতে টাকা নেই । ঠিকমতো জুটছিল না খাওয়া-দাওয়া । চরম কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছিলেন বাংলার ওই চার নির্মাণ শ্রমিককে । শেষে খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত যেভাবেই হোক বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন । 29 এপ্রিল মধ্যপ্রদেশ থেকে হেঁটেই রওনা হন । দীর্ঘ এই পথে যখনই হাঁপিয়ে গেছেন তখনই শ্রমিকরা রাস্তার ধারে কোনও গাছের তলায় বিশ্রাম নিয়েছেন । ক্লান্ত শরীর ধকল নিতে না পেরে আজও তাঁরা বারাসতের ওই গয়নার দোকানে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন । সেই সময়ই তাঁদের উপর নজর পড়ে পুলিশের ।
এই বিষয়ে হাফিজুল মণ্ডল নামে এক শ্রমিক বলেন, "রেলের ঠিকাদারি সংস্থার অধীনে কাজ করলেও আমাদের টাকাপয়সা মেটানো হয়নি । খালি হাতেই মধ্যপ্রদেশ থেকে রওনা হই । বেশিরভাগ পথ হেঁটে আসলেও ক্লান্তির টানে কিছুটা রাস্তা চলতে সাহায্য করে পুলিশের গাড়ি । এখানে বিশ্রাম নিতে দেখে পুলিশ আটকায় । বাড়ি ফিরতে সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দিল । দেখা যাক কী হয় । পুলিশ সাহায্য না করলে আমরা হেঁটেই বাড়ি ফিরব ।”
এই বিষয়ে বারাসত ট্রাফিক পুলিশের OC আশিস চক্রবর্তী বলেন, "ওঁদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, 12 দিন আগে ওঁরা মধ্যপ্রদেশ থেকে রওনা দিয়েছিলেন । ওঁদের কাছে কোনও টাকাপয়সা নেই । তাই কখনও পায়ে হেঁটে আবার কখনও পুলিশের সাহায্যে গাড়িতে এতদূর আসতে পেরেছে । ওঁদের ক্লান্ত দেখে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করেছি । বারাসত থানার IC-র সঙ্গে কথা বলে কীভাবে ওদের বাড়ি পাঠানো যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে ।”
ভিন রাজ্য থেকে ওই শ্রমিকরা এই রাজ্যে আসায় তাঁদের প্রথমে শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের তরফে । পরে গাড়িতে করে ওই শ্রমিকদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে বারাসত থানার পুলিশ । পরীক্ষায় কোনও উপসর্গ ধরা না পড়লেও ওই শ্রমিকদের 14 দিন হোম কোয়ারানটিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।