ব্যারাকপুর, 18 নভেম্বর: আন্তর্জাতিক কল সেন্টারের নামে 8 হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ৷ সম্প্রতি এমনই এক চক্রের পর্দা ফাঁস করল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ । দেরাদুন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রতারণা চক্রের কিংপিন-কেও । পুলিশ সূত্রে খবর, গত 18 অক্টোবর খড়দার বলরাম সেবা মন্দির হাসপাতালের কাছে একটি কল সেন্টারে হানা দিয়ে প্রথমে পাকড়াও করা হয় 10 জনকে । পরে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্ধান মেলে আরও 7 প্রতারকের। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটর গোয়েন্দা প্রধান শ্রীহরী পাণ্ডের মতে, বেশ কয়েক বছর ধরেই এই কাজ চালাচ্ছে প্রতারকরা ৷
ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, খড়দার একটি কল সেন্টারেই এই প্রতারণা চক্রের ফাঁদ পাতা হয়েছিল। সেইমতো খড়দার এই কল সেন্টার এবং দেরাদুনের একটি পাঁচতারা হোটেলে হানা দিয়ে বড়সড় এই প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস করেছে তদন্তকারীরা। মূলত, এনি ডেস্ক অ্যাপের মাধ্যমেই কারচুপি করে চলত টাকা হাতানোর কাজ । এই সফটওয়্যার হাতিয়ার করে বেছে বেছে আমেরিকান ও কানাডিয়ানদের টার্গেট করা হত বলে খবর। বিদেশি অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যেত কোটি কোটি টাকা । এই ঘটনায় প্রতরণার শিকার হয়েছেন প্রায় 70-80 জন ৷ অভিযোগ পেয়ে প্রতারণা চক্রের তদন্তে নামে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা ।
এরপরই খড়দা, সল্টলেক এবং দেরাদুন থেকে মোট 17 জনকে পাকড়াও করা হয় । প্রতারণা জগতের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে পরিচিত জামতারা গ্যাং । পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বহু মানুষের অ্যাকাউন্ট সাফ করার অভিযোগ রয়েছে এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে । জামতাড়া গ্যাংকেও টেক্কা দেওয়ার মতো গ্যাং তৈরি হয়ে গিয়েছিল খড়দায়, মত গোয়েন্দাদের ।
গোয়েন্দা প্রধান শ্রীহরি পান্ডে বলেন, "খড়দা থানা এলাকায় বেআইনিভাবে কল সেন্টার চালানোর অভিযোগে 10 জনকে গ্রেফতার করা হয় ৷ তদন্তভার যায় কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে । এরপর 25 অক্টোবর সল্টলেকের একটি হোটেল থেকে আরবাজ হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয় ৷ এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত বলে জানা গিয়েছিল তখনই । এরপর আমরা খবর পাই, চক্রের কয়েকজন পাণ্ডা পালিয়ে গিয়েছে ৷ অবশেষে দেরাদুন থেকে তাদের 6 জনকে গ্রেফতার করা হয় । এরা মূলত আমেরিকা এবং কানাডার প্রবীণ নাগরিকদের টার্গেট করত । এই কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করা হয়েছে । ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে । তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলা সম্ভব নয় ৷"
যদিও টাকার পরিমাণ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি গোয়েন্দা প্রধান ৷ তদন্তের স্বার্থেই তা আড়ালে রাখা হয়েছে ৷ তবে পুলিশ সূত্রে খবর গত 3-4 বছরে প্রায় 8 হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করেছে তারা ৷ উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন থেকে যে ছ'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ তারা হল সৈয়দ শাহাবাজ হাসান, সোনু জয়সওয়াল, কৃষ্ণ কুমার সিং, অনীশ ঠাকুর, ফরহাদ হাসান ও হর্ষ দিনানি । এদের মধ্যে সৈয়দ শাহাবাজ হাসানই হল প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা । শনিবার দুপুরে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয় এই ছয় অভিযুক্তকে ৷ বিচারক তাদের 10 দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন ।
আরও পড়ুন: