মধ্যমগ্রাম, 12 সেপ্টেম্বর : শিক্ষকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বদলে গেল তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে । দলের একটি শিক্ষক সংগঠনের দু'জন জেলা সভাপতির দু'টি ভিন্ন শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্কের শুরু ৷ এ প্রসঙ্গে মঞ্চে খোলাখুলি বললেন বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় ৷ এতে চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস ৷
তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি শনিবার মধ্যমগ্রাম নজরুল শতবার্ষিকী ভবনে শিক্ষকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । এর উদ্যোক্তা সংগঠনের জেলা সভাপতি সম্রাট চট্টোপাধ্যায় । অনুষ্ঠানে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, ব্যারাকপুরের মুখ্য প্রশাসক উত্তম দাস, দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী আলোরানি সরকার, সংগঠনের রাজ্য সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যরা । খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আমন্ত্রিত হলেও তাঁরা আসতে পারেননি । সূত্রের খবর, রথীন ঘোষ সরকারি কাজে বর্ধমানে গিয়েছেন । চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দলীয় কাজে ত্রিপুরায় রয়েছেন ৷ তবে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের না আসা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে ।
এদিন মঞ্চে সৌগত রায় জানান, তাঁর কাছে কয়েকজন ছেলে এসে শিক্ষক দিবসের আমন্ত্রণ জানায় ৷ তিনি জানতে পারেন তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের হলেও এই অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার ৷ তিনিই এই শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি ৷ অথচ বর্তমানে এই সংগঠনের জেলা সভাপতি সম্রাট চট্টোপাধ্যায় ৷ তাই প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, "আগামিকালের অনুষ্ঠানে আমি যাব না ৷" এ নিয়ে তিনি শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়কে সুব্রত বক্সি ও ব্রাত্য বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন ৷ তিনি বলেন, "যে কমিটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার বাইরে আরেকটা কমিটি কী করে কাজ করছে ? যে কাজ করছে, সে আবার ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান ৷"
আরও পড়ুন : Visva-Bharati University : হাইকোর্টের নির্দেশে তিন পড়ুয়াকে পঠন-পাঠনে ফেরাতে চিঠি বিশ্বভারতীর
দীর্ঘ দিন ধরে ঘুরে ঘুরে শিক্ষক সংগঠন তৈরিতে সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, "আজ দল ক্ষমতায় এসে সম্রাটকে ফেলে দেবে, এটা ঠিক নয় ৷ সম্রাটের প্রতি আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, সংগঠনে আমরা যদি পুরনো লোকদের গুরুত্ব না দিই, তাহলে কেউ সংগঠন করবে না ৷" মঞ্চে তিনি সকলকে কথা দেন, "এই জেলায় যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা নিয়ে আমি প্রাদেশিক নেতৃত্বের সব স্তরে বলব ৷ আমার মতামত পরিষ্কার ভাবে জানাব ৷"
পরে, এ বিষয়ে সাংবাদিকদেরও তিনি একই কথা জানান ৷ তিনি বলেন, "সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সংগঠন এটা করত। এখন শুনছি আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করছে । এটা আগে জানা ছিল না । বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সাথে কথা বলব"।
এদিকে, দলীয় সাংসদ সৌগত রায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার বলেন, "ওনার সুপারিশেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক 8 মাস আগে আমাকে সংগঠনের জেলা সভাপতি করেছেন । সেই মতো সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সংগঠনের কাজ করছি । এর মধ্যে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয় নেই । সমান্তরাল সংগঠন চালানোর অভিযোগ ঠিক নয় । জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকই কমিটি গঠন করে দিয়েছেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশিত পথেই আমরা চলছি । রবিবার শিক্ষক সংবর্ধনার অনুষ্ঠান হচ্ছে । সেখানে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হাজির থাকবেন ৷"
আরও পড়ুন : Coronavirus : পড়ুয়াদের সচেতন করতে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে করোনা ভাইরাস অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা
সংগঠনের বর্তমান জেলা সভাপতি সম্রাট চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, তৃণমূলের আলাদা কোনও শিক্ষক সংগঠনের অস্তিত্বের কথা তাঁর জানা নেই ৷ তিনি বলেন, "সংগঠন একটাই ৷ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ৷" এই সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে জেলা সভাপতি ছিলেন ৷ এখনও তিনিই উত্তর 24 পরগনার জেলা সভাপতি ৷ 2011 সালে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গড়ার পর সংগঠনের নাম হয়, "তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ", প্রাথমিক ও কলেজ, কর্মচারীদের জন্য আলাদা সংগঠন ছিল, জানালেন জেলা সভাপতি ৷ তিনি বলেন, "রাজ্য সভাপতি তাঁকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন ৷" তাই অন্য কেউ থাকলে, তা জানা নেই তাঁর ৷ তাঁর বক্তব্য, রাজনৈতিক পদে থেকে কেউ কোনও সংগঠনের দায়িত্ব নিতে পারে না ৷ "এক পদে এক ব্যক্তি" এই নীতি চালু হওয়ার পর থেকে এই দাবি কেউ করতে পারে না বলে জানালেন তিনি ৷
সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিপক্ষ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ । তাহলে কি জেনে বুঝেই তিনি এদিনের অনুষ্ঠান এড়ালেন ? উত্তর মেলেনি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছ থেকে । আবার রাজনীতিতে সম্রাট চট্টোপাধ্যায় রথীন ও নির্মল ঘোষদের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত । জানা গিয়েছে, এদিনের অনুষ্ঠানের পাল্টা রবিবার বারাসতে শিক্ষকদের নিয়ে আরও একটি অনুষ্ঠান হতে চলেছে । যার উদ্যোক্তা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবব্রত সরকার স্বয়ং । সেই অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ আরও অনেকের থাকার কথা । এতে শিক্ষক সমিতির নামে আলাদা দু'টি অনুষ্ঠান ঘিরে শাসকদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে ।