ঠাকুরনগর, 13 অগাস্ট : রামমন্দিরের ভূমিপুজোয় ঠাকুরবাড়ির জল, মাটি নিয়ে অব্যাহত বিতর্ক । গতকাল সকালে ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে আসে ভূমি পুজোর প্রসাদ । বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে এদিন সেই প্রসাদ তুলে দেওয়া হয় প্রয়াত বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের হাতে । অযোধ্যার রামমন্দিরের ভূমিপুজোর প্রসাদ ঠাকুরবাড়ির পাশাপাশি এদিন পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতেও । কিন্তু বিতর্ক থেমে থাকেনি । বিকেলে তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত মতুয়া ভক্তরা এদিন ঠাকুরবাড়ি থেকে ঠাকুরনগর বাজার পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিল করেন । সেখানে প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সভাও হয় । মমতাবালার বক্তব্য, ভূমিপুজোর সাত দিন পরে প্রসাদ পাঠানোর মানে কী? প্রসাদ নিয়ে মতুয়া ভক্তরা কী করবেন? মতুয়ারা চান, ঠাকুরনগরের জল, মাটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের চিঠি দেখতে । প্রকৃত সত্য জানতে আমরা এই বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করব ।
রামমন্দিরের ভূমিপুজোর আগেই কাশর, ডঙ্কা বাজিয়ে ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরের জল ও মাটি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হাত দিয়ে অযোধ্যায় পাঠিয়েছিলেন বনগাঁর BJP সাংসদ শান্তনু ঠাকুর । 5 অগাস্ট রামমন্দিরের ভূমিপুজো হয়েছিল । সেখানে ঠাকুরবাড়ির জল, মাটি প্রত্যাখান করা হয়েছে বলে বিতর্ক ছড়ায় । তৃণমূল প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ তা নিয়ে নানা কথা বলা শুরু করে । ঠাকুরবাড়ির বড়ো বউ মমতাবালা ঠাকুর মতুয়া ভক্তদের অপমান করা হয়েছে বলেও শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেন । ইতিমধ্যেই হরিগুরুচাদ ভক্ত মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকে জল, মাটির সত্যতা জানতে আইনজীবীর মাধ্যমে তথ্য জানার অধিকার আইনের দ্বারস্থ হওয়ার পথে এগিয়েছেন । ঠাকুরবাড়ির জাল-মাটি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই গতকাল সকালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের 15 জনের এক প্রতিনিধি দল পেট্রাপোলে আসেন । সেখানে ভারত-বাংলাদেশের জ়িরো পয়েন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের হাতে ভূমিপুজোর প্রসাদ তুলে দেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পুর্ব ক্ষেত্র সম্পাদক অমিয় সরকার । তারপর তাঁরা চলে আসেন ঠাকুরবাড়িতে । শান্তনু ঠাকুরের বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের হাতে সেই প্রসাদ তুলে দেওয়া হয় ।
অমিয় সরকার বলেন, "জল, মাটি সঠিক কাজেই ব্যবহৃত হয়েছে । উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে । ভগবান রাম জাতপাতের বিধিনিষেধ মানতেন না । সকলকে নিয়েই চলতেন । রামের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা তৈরির জন্য চক্রান্ত করা হচ্ছে ।"
মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বলেন, "এটা অরাজনৈতিক বিষয় ৷ আমরা সনাতন ধর্মেরই অংশ ৷ এই অপপ্রচার আমার বোধগম্য হচ্ছে না ৷ ধর্মকে নিয়ে যারা রাজনীতি করছেন, তাঁরা ঠিক করছেন না ।"
হরিগুরুচাদ ভক্ত মতুয়া মহাসংঘের প্রতিষ্ঠাতা নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, "প্রসাদ এসেছে খুব ভালো কথা । প্রসাদ নিয়ে একবার দিল্লিতে, একবার ঠাকুরনগরে এসে ফলাও করে ছবি দেখানো হচ্ছে । কিন্তু তার থেকেও মতুয়া ভক্তরা বেশি আনন্দিত হতেন, যদি ঠাকুরনগরের জল, মাটি গ্রহণের ছবি-সহ প্রমাণ তুলে ধরা হত । আসলে শান্তনু ঠাকুর মতুয়াদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন ।"
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিনিধিরা ফিরে যাওয়ার পর তৃণমূল প্রভাবিত মতুয়ারা ঠাকুরবাড়ি থেকে ঠাকুরনগর বাজার পর্যন্ত মিছিল করেন । সেখানে তাঁরা একটা প্রতিবাদ সভাও করেন । মতুয়ারা ডঙ্কা, লাল নিশান নিয়ে সেই মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় সামিল হন ।