পানিহাটি, 1 নভেম্বর: পার্টি অফিস তুমি কার ! এই কথাই যেন আরও একবার বড় করে দেখা দিল শাসকদলের দুই কাউন্সিলরের ক্ষেত্রে । পার্টি অফিসের দখল কার হাতে থাকবে ! এই নিয়ে দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের বিবাদ এবং হাতাহাতিতে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হল উত্তর 24 পরগনার পানিহাটির মহেন্দ্র নগরে (TMC Factionalism in Panihati) । সংঘর্ষে জড়ালেন দুই কাউন্সিলরের অনুগামীরাও । তার জেরে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে ঘোলা থানা থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসতে হয় বিশাল পুলিশবাহিনীকে । শেষে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে দু'পক্ষকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় ।
তবে চাপা উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এলাকায় । দু'পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা এবং পালটা হামলার অভিযোগ এনেছে । সংঘর্ষ, মারধরে উভয়পক্ষের কয়েকজন জখম হয়েছেন বলে দাবি বিবাদমান দুই কাউন্সিলরের (Clash between two TMC councillor about party office) । গোটা ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে শাসক শিবির । যদিও এই নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ।
জানা গিয়েছে, শাসকদলের দুই কাউন্সিলর স্বপন কুণ্ডু ও টুলুরানী দাসের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের । প্রথমজন পানিহাটি পৌরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর । অপরজন একই পৌরসভার 21 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর । আগে এই 20 নম্বর ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর ছিলেন টুলুরানী দাস । এবারে 21 নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত আসন হয়ে যাওয়ায় বিগত কাউন্সিলর স্বপন কুণ্ডুকে পাশের 20 নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয় ।
একইভাবে 20 নম্বর ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে বিগত কাউন্সিলর টুলুরানী দাসকে পাশের 21 নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে প্রার্থী করে শাসকদল । ভোটে জিতে দু'জনেই আবারও কাউন্সিলর নির্বাচিত হন । কিন্তু তাতে দ্বন্দ্ব কিংবা বিবাদ কোনওটাই মেটেনি । উল্টে এলাকার কর্তৃত্ব এবং পার্টি অফিসের দখলদারি নিয়ে দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের বিবাদ আরও বেড়েছে । সেই বিবাদই সোমবার রাতে চরম আকার নেয় বলে অভিযোগ ।
দুই কাউন্সিলরের বচসা, তর্কাতর্কি চলে আসে একেবারে প্রকাশ্য রাস্তায় । বাদ যায়নি আঙুল উঁচিয়ে একে অপরকে হুমকি দেওয়াও । কার্যত এই ঘটনায় সম্মুখ সমরে দেখা যায় দুই কাউন্সিলর স্বপন কুণ্ডু এবং টুলুরানী দাসকে । তারই মধ্যে দুই কাউন্সিলরের অনুগামীরা জড়িয়ে পড়েন সংঘর্ষে । একে অপরকে মারধর, মহিলা কাউন্সিলরকে হেনস্থা কিছুই বাদ যায়নি । যার পরিণতিতে শেষে দলীয় পার্টি অফিসে তালা মারতে বাধ্য হন পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ।
এদিকে ঘটনার পরই তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর একে অপরকে দোষারোপ করেছে । স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন কুণ্ডুর অভিযোগ, "ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েও তিনি পার্টি অফিসে বসতে পারছেন না । অস্থায়ী কার্যালয় করে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পরিষেবা দিতে হচ্ছে তাঁকে । তার ফলে পরিষেবা পেতে গিয়ে কখনও কখনও হয়রানির শিকারও হচ্ছেন সাধারণ মানুষ । এদিন সেই বিষয়ে কথা বলতেই পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম । তখনই কাউন্সিলর টুলুরানী দাসের দলবল হামলা চালায় দলের কয়েকজন কর্মীর ওপর । আমি চাই এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হোক ।"
আরও পড়ুন: নৈহাটিকাণ্ডে পুলিশের জালে মূল অভিযুক্ত-সহ 3
যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি 21 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর টুলুরানী দাস । তাঁর কথায়, "20 নম্বর ওয়ার্ডের মহেন্দ্র নগরের পার্টি অফিসটি গড়তে আমি দিনরাত এক করেছি । সেই পার্টি অফিসই এখন দখল নিতে চাইছেন কাউন্সিলর স্বপন কুণ্ডু । তার প্রতিবাদ করাতেই আমাকে মারধর এবং হেনস্থা করা হয় । বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন আরও কয়েকজন ।" অন্যদিকে স্বপন কুণ্ডুর বিরুদ্ধে পৌর ভোটে রিগিং এবং এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টির মারাত্মক অভিযোগও করেছেন কাউন্সিলর টুলুরানী দাস ।