বসিরহাট, 5 অগস্ট : ভ্যাকসিন হয়রানি অব্যাহত উত্তর 24 পরগনায় ৷ বসিরহাটের টাকি পৌরসভা (Taki municipality)-য় রাত জেগে লাইন দিয়েও ভ্যাকসিন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রাপকরা ৷ অভিযোগ, ভ্যাকসিনেশন (Vaccination) সেন্টরে ভ্যাকসিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ৷ ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের লাইনে ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় পুলিশ বাহিনীকে ৷ এমনকি ব়্যাফ পর্যন্ত নামাতে হয় প্রশাসনকে ৷ গোটা ঘটনায় পৌর প্রশাসনের অব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন ভ্যাকসিন নিতে আসা সাধারণ মানুষ ৷ অভিযোগ, পৌরসভার ভ্যাকসিনেশন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নেই ৷ যার ফলে দিনের পর দিন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েও সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না ৷ হয়ারানির শিকার হচ্ছেন টাকি পৌরসভা এলাকার বাসিন্দারা ৷ তবে, আজকের এই বিশৃঙ্খলার জন্য টিকার অপ্রতুলতা এবং অতিরিক্ত ভিড়কে কাঠগড়ায় তুলেছে টাকি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ৷
করোনার সংক্রমণ রুখতে এবং ছড়ানো বন্ধ করতে সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা বলছে কেন্দ্র ও রাজ্য ৷ কিন্তু, সেই ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ ৷ ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য দিনের পর দিন রাত জেগে লাইন দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না লোকজন ৷ হাড়োয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিনের লাইনে লোকজনকে মশারি টাঙিয়ে রাত কাটাতে দেখা গিয়েছিল ৷ যে ছবি সংবাদ মাধ্য়মে প্রকাশের পর হইচই পড়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু, তার পরও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি ৷ আজ বসিরহাটের টাকি পৌরসভায় 18-44 বছরের বয়সীদের এদিন ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার কথা ছিল ৷ জানা গিয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে মোট 900টি কোভিশিল্ড (Covishield)-র ভায়েল টাকি পৌরসভায় পাঠানো হয়েছে ৷
কিন্তু, আজকে ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে শুরু করে ৷ এই পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় ৷ অভিযোগ কে আগে ভ্যাকসিন নেবে এ নিয়ে লাইনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় ৷ এমনকি একে অপরকে ধাক্কাও মারেন লোকজন ৷ বিশৃঙ্খলার জেরে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া লাটে উঠে যায় ৷ এই পরিস্থিতি পৌরসভা ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করে দেয় ৷ তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায়, পুলিশে খবর দেয় টাকি পৌর কর্তৃপক্ষ ৷ অভিযোগ পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে, তাদের উপরেও চড়াও হয় কয়েকজন ৷ এর পরেই পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে ৷ একসময় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে বাধ্য হয়ে ব়্যাফ নামাতে হয় পুলিশকে ৷
এই ঘটনায় ভ্যাকসিন নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় ৷ মিতালি বিশ্বাস নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘ভ্যাকসিনের আশায় দিনের পর দিন ঘুরে যাচ্ছি । কিন্তু, লাইনে দাঁড়িয়েও পাচ্ছি না । এদিনও এসেছি ভ্যাকসিন নিতে । কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে অসুস্থ না হয়ে পড়ি ৷ আমরা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ । এভাবে আর কতদিন ঘুরব ! ভিড় এড়াতে ওয়ার্ড ভিত্তিক ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত পৌর কর্তৃপক্ষের । তাহলে এত হয়রানি পোহাতে হবে না বাসিন্দাদের ৷’’
কল্পনা মণ্ডল নামে আরেক মহিলা অভিযোগ করেছেন, ‘‘ছেলেরা জোর করে মেয়েদের লাইনে ঢুকে পড়ছে । যার ফলে চূড়ান্ত অব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে । কোনও পরিকল্পনা নেই পৌরসভার । কুপন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে হয়ত এই বিশৃঙ্খলা এড়ানো যেত ! কিন্তু তা নিয়েও কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি ৷’’
ভ্যাকসিন নিয়ে এই চূড়ান্ত হয়রানি ও গন্ডগোলের জন্য টিকার অপ্রতুলতাকেই দায়ী করেছেন পৌরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক শিশির মণ্ডল । তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজের জন্য আটশো ভ্যাকসিন এবং দ্বিতীয় ডোজের জন্য আরও একশো ভ্যাকসিন হাতে রয়েছে আমাদের ।’’ তা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনের অভাব রয়েছে ৷ যে সংখ্যক মানুষের ভিড় রয়েছে পৌরসভা চত্বরে, তাতে সবাইকে যে টিকা দেওয়া কার্যত অসম্ভব তা এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন পৌরসভার ওই স্বাস্থ্য আধিকারিক ।