বারাসত, 12 অক্টোবর: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডি-সিবিআই যখন একাধিক পৌরসভায় সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে । তখন এ নিয়ে থরহরি কম্প শুরু হয়েছে বারাসত পৌরসভাতে । এর নেপথ্যে অবশ্য রয়েছে সিবিআইয়ের একটি চিঠি ! যে চিঠিতে মূলত 2012 সাল থেকে 2023 সাল পর্যন্ত এই পৌরসভায় কারা কারা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন । তাঁদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর-সহ যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই । স্বভাবতই এই চিঠি ঘিরে চলছে জোর চর্চা । তাহলে কি পৌর নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের রেশ এবার জেলার সদর শহর বারাসতেও এসে পৌঁছল? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে । তবে চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করলেও এর সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন পৌরসভার চেয়ারম্যান । আর হাতে গরম ইস্যু নিয়ে এ নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত বারাসত পৌরসভাকে বিঁধতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির ।
পৌর নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে শিখরে পৌঁছতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি-সিবিআই । মূলত অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজোনের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে একাধিক পৌরসভায় যেভাবে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি'র চাকরি বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । সেই বেআইনি নিয়োগের পিছনে তৃণমূলের প্রাক্তন এবং বর্তমান চেয়ারম্যানদের ভূমিকা ঠিক কী ছিল ! তা খতিয়ে দেখতে ও তথ্য জোগাড় করতে তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমেছে কেন্দ্রীয় দুই তদন্তকারী সংস্থা । সেই সূত্রে মধ্যমগ্রাম পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের মাইকেল নগরের বাড়িতেও হানা দিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকরা ।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দিয়ে মন্ত্রীর বাড়ি ঘিরে রেখে প্রায় সাড়ে উনিশ ঘণ্টা তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিলেন তাঁরা । তল্লাশিতে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেশকিছু তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে খবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে । যদিও রথীন ঘোষের দাবি ছিল, কোনও নথিই বাজেয়াপ্ত করা হয়নি তাঁর বাড়ি থেকে । শুধু মন্ত্রীর বাড়িই নয় । রথীন ঘোষের খাস মধ্যমগ্রাম পৌরসভাতেও ইতিমধ্যে দু-দু'বার হানা দিয়েছে ইডি-সিবিআই । সিবিআইয়ের আধিকারিকদের জেরার মুখেও পড়তে হয়েছে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মধ্যমগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষকে । এরই মধ্যে এবার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত ঢুকে পড়ল বারাসত পৌরসভাতে ।
আরও পড়ুন: মধ্যমগ্রাম পৌরসভাতেও হানা দিল ইডি, খাদ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বাড়ল কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা
সম্প্রতি ইমেল মারফত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের চিঠি সেখানে এসে পৌঁছেছে বলে খবর পৌরসভা সূত্রে । যা ঘিরেই এখন সরগরম হয়ে উঠেছে জেলাসদর বারাসতের রাজনীতি । এই বিষয়ে বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন,"সিবিআই ইমেল মারফত যে চিঠি পাঠিয়েছে পৌরসভার কাছে । সেই চিঠির উত্তরও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের কাছে । মূলত তাঁরা জানতে চেয়েছে 2012 সাল থেকে 2023 সাল । এই 11 বছরে পৌরসভায় কারা কারা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন । তাঁদের নাম,ঠিকানা-সহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে বলেছিল । সেটা আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি ওদের কাছে । কেন পাঠাতে বলেছে সেটা আমার পক্ষে বলা অসম্ভব । ভালো বলতে পারবে সিবিআই আধিকারিকরাই । হতে পারে তদন্তের স্বার্থে তাঁরা জানতে চেয়েছে এসব ৷"
আরও পড়ুন: পৌর নিয়োগ দুর্নীতিতে মধ্যমগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআইয়ের
এদিকে, অয়ন শীলের সংস্থার মাধ্যমে পৌরসভায় কোনও নিয়োগ হয়নি বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের এই চেয়ারম্যান । অন্যদিকে, এবিএস ইনফোজোনের মাধ্যমে যদি এখানে নিয়োগ নাই হয়ে থাকে,তাহলে কেন চিঠি পাঠাতে গেল সিবিআই? এর সদুত্তর না মিললেও মনে করা হচ্ছে বেআইনি নিয়োগের কোনও না কোনও সংযোগ রয়েছে সেখানে !তা না হলে শুধু শুধু কেন পৌরসভায় চিঠি পাঠাতে যাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা !তেমনটাই মনে করছেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র । তিনি বলেন,"পৌর নিয়োগে একাধিক পৌরসভায় যে বেনিয়ম হয়েছে । এটা এখন ধ্রুব সত্য । বারাসত পৌরসভাও তার ব্যাতিক্রম নয় !চেয়ারম্যান কী বলব তাতে কিছু আসে যায় না । অনিয়ম হয়েছে না হয়নি তা তদন্ত হলেই বোঝা যাবে । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে । দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও না কোনও পদক্ষেপ নেবে ইডি-সিবিআই । সেই নিবেদন করছি আমরা ৷"