ঠাকুরনগর, 10 জুলাই : মতুয়া ধর্মগুরু গুরুচাঁদ ঠাকুর বলেছিলেন, "যে জাতির রাজা নেই, সেই জাতি তাজা নেই ।" এই দিব্য বাণীর এক শতাব্দী পর মোদির মন্ত্রিসভায় রাষ্টমন্ত্রী হয়েছেন সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur) । নেতৃত্বে রাজশক্তি পেয়েছেন মতুয়ারা । তবে, এর আগেও ঠাকুর বাড়ি থেকে রাজ্যের মন্ত্রী সভায় গিয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রমথরঞ্জন ঠাকুর (PR Thakur) ৷ মন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদের বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরও (Manjul Krishna Thakur) । কিন্তু তাঁরা কেউই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন না ৷ তাছাড়া নিজের সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করতে পারছেন না, এই অভিযোগে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে ছিলেন দু'জনেই । আশা ভঙ্গ হয়েছিল মতুয়াদের । এবার শান্তনু ঠাকুর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে মতুয়া সম্প্রদায়ের অগণিত মানুষ ।
বিভিন্ন সময় অভিযোগ ওঠে, রাজনৈতিক দলগুলি মতুয়াদের শুধুমাত্র ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করেছে । মতুয়া ভোটের দৌলতে ঠাকুর বাড়ি থেকে তিনবার সাংসদ এবং দু'বার বিধায়ক মিললেও এই অভিযোগ রয়েই গিয়েছে ৷ মতুয়াদের একাংশের মতে, এরপরও পূরণ হয়নি মৌলিক চাহিদা । 1962 সালে শান্তনু ঠাকুরের ঠাকুরদা ব্যারিস্টার পিআর ঠাকুর নবদ্বীপ লোকসভার হাঁসখালি বিধানসভা থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক হন ৷ বিধান রায়ের মন্ত্রিসভার সমাজকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি । বিধান রায়ের মৃত্যুর পর অজয় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয় । 1964 সালে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন ব্যারিস্টার ঠাকুর ৷ তাঁর মনে হয়েছিল, কংগ্রেস মতুয়াদের যথার্থ গুরুত্ব দিচ্ছে না ৷ এর বহু বছর পর 2011 সালে গাইঘাটা বিধানসভা থেকে তৃণমূলের বিধায়ক হন পিআর ঠাকুর ও বীণাপাণি ঠাকুরের ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর । মতুয়াদের প্রতিনিধি হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী করেন । কিন্তু মন্ত্রী হয়েও মতুয়াদের জন্য ও আপামর মানুষের জন্য কাজ করতে পারছেন না, এই অভিযোগ তুলে 2015 সালে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন । যদিও সে সময় তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করে, বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে তৃণমূল ছেড়েছেন মঞ্জুলকৃষ্ণ ।
সবচেয়ে বড় কথা, দুটি ভিন্ন সময়ে পিআর ঠাকুর ও মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের মন্ত্রিত্ব ত্যাগে হতাশাগ্রস্ত হন মতুয়ারা ৷ কারণ কিছুতেই তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না ৷ বর্তমানে ঠাকুরবাড়িতে বিজেপির একজন বিধায়ক ও একজন সাংসদ রয়েছেন । 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে বনগাঁ লোকসভায় জয়ী হয়ে সাংসদ হন শান্তনু ঠাকুর । 2021-এর বিধানসভায় নির্বাচনে জিতে বিজেপি বিধায়ক হন তাঁর দাদা সুব্রত ঠাকুর । এর পর গত বুধবার মোদির মন্ত্রিসভায় রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন শান্তনু ঠাকুর । তিনি জাহাজ রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ।
শান্তনু ঠাকুর শপথ নেওয়ার আগে থেকেই ডঙ্কা-কাশি নিয়ে আনন্দে মেতে ছিলেন মতুয়া ভক্তরা । কারণ, মতুয়া সম্প্রদায় তথা ঠাকুর বাড়ি থেকে এই প্রথম কেউ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন । ফলে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে মতুয়ারা ।
আরও পড়ুন: মতুয়া ভোটে কর্তৃত্বই কি শান্তনুর মন্ত্রিত্বের চাবিকাঠি ?
মতুয়াদের মনে হচ্ছে, তাঁদের দীর্ঘদিনের নাগরিকত্বের দাবি এবার শান্তনু ঠাকুরের হাত ধরে পুরণ হতে চলেছে । নাগরিকত্ব সহ মতুয়াদের 11 দফা দাবি রয়েছে । যা নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন তাঁরা । সেইসব দাবিও এবার পূরণ হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে তাঁদের । তবে মতুয়া ধর্ম গবেষক নন্দ দুলাল মহন্ত বিষয়টি নিয়ে সন্দিগ্ধ ৷
নন্দ দুলাল মহন্ত বলেন, "শান্তনু ঠাকুরের মন্ত্রী হওয়াটা আনন্দের বিষয় ৷ তবে মতুয়াদের আশা পূরণ কতটা হবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে । বিশ্বাস করি, যদি ঠিক করে কাজ করতে চান তাহলে অনেক কাজ করতে পারবেন শান্তনু । বিশেষত মতুয়ারা যখন নাগরিকত্ব নিয়ে দোলাচলে ভুগছেন । তবু, শান্তনু ঠাকুর মন্ত্রী হওয়ায় কতটা সমাধান হবে সমস্যার তা যথেষ্ট চিন্তার বিষয় । কারণ, দলীয় স্বার্থের প্রসঙ্গটিও রয়েছে ।"