শাসন (উত্তর 24 পরগনা), 1 এপ্রিল : এলাকার দখলদারি ঘিরে দুষ্কৃতীদের রাতভর বোমাবাজিতে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর 24 পরগনার শাসন (Bombing at TMC Workers House in North 24 Parganas) । মুহুর্মুহু বোমাবাজির জেরে রীতিমতো আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা । ঘটনার পিছনে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল (TMC Inner Clash at Sasan) রয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের একাংশের ।
জানা গিয়েছে, বোমাবাজিতে প্রভাস ঘোষ, দিলীপ ঘোষ, সঞ্জিত ঘোষ এবং হাকিম মোড়ল নামে চার তৃণমূল কর্মীর বাড়ির একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । বাড়ির জানলা থেকে শুরু করে রান্নাঘরের গ্রিল ভেঙে গিয়েছে বোমার সপ্লিন্টার ছিটকে । তবে, হতাহতের কোনও খবর নেই । ঘটনায় নাম জড়িয়েছে স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা মোতালেব আলি ও গফফার আলির । অভিযোগ, তাদের নেতৃত্বেই দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় ওই চার তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে । ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্তরা । পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শাসনের তেহাটা গ্রামে বাড়ি ওই চার তৃণমূল কর্মীর । অভিযুক্ত ওই দুই নেতার বাড়িও একই গ্রামে । এলাকার দখলদারি ঘিরে শাসকদলের দু'পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই বিরোধ চলছিল । একপক্ষ চাইছিলেন এলাকার কর্তৃত্ব নিজেদের দিকে রাখতে । অন্যপক্ষ তার প্রতিবাদ করছিলেন ।
অভিযোগ, সম্প্রতি স্থানীয় তৃণমূল নেতা মোতালেব আলি ও গফফার আলির দাদাগিরি এবং তোলাবাজির বিরুদ্ধে সরব হন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর ওই চার তৃণমূল কর্মী । সেখান থেকেই বিরোধ আরও চরমে ওঠে । তারই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে দুই তৃণমূল নেতার দলবল অতর্কিতে হামলা চালায় চার তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে । ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না তাঁরা । পরিবার লোকজন সেই কথা জানাতেই বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি শুরু হয় বলে অভিযোগ । মুহুর্মুহু বোমাবাজিতে কেঁপে উঠে তেহাটার ঘোষপাড়া এলাকা ৷ অভিযোগ, রাতভর এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় দুষ্কৃতীরা । খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই চম্পট দেয় তারা । ঘটনা ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় তেহাটা গ্রামে ।
এদিকে, বোমাবাজির ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকালেও এলাকার পরিস্থিতি যথেষ্ট থমথমে । আতঙ্কে কার্যত সিঁটিয়ে রয়েছে গোটা গ্রাম । যদিও, ঘটনার পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব মানতে চাননি তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান এবং বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম (TMC Denies Inner Clash Allegation in Sasan Bombing Case) । তিনি বলেন, "ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই । এটা একেবারে দুষ্কৃতী দলের কাজ । পুলিশকে বলা হয়েছে যারাই যুক্ত থাকুক, তাদের যেন অবিলম্বে গ্রেফতার করা হয় । পুলিশ প্রশাসনই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে । তবে, এই ঘটনা না ঘটলেই ভাল হত । শাসনে আমরা শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ৷"
অন্যদিকে, এই ঘটনায় শাসকদলকে নিশানা করেছে গেরুয়া শিবির (BJP Criticises TMC on Sasan Bombing Case) । বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার পর্যবেক্ষক শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "তৃণমূলের সিন্ডিকেট, তোলাবাজি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে । মানুষ শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলে তিতিবিরক্ত । রামপুরহাটে আমরা দেখেছি সিন্ডিকেটের জেরে এক তৃণমূল নেতাকে প্রাণ দিতে হল । শাসনেও আদি এবং নব্য তৃণমূলীদের গন্ডগোল শুরু হয়েছে । বোমাবাজি হচ্ছে । আর পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না । এই বাংলা দেখতে চাইনি রাজ্যের মানুষ । আমরা শাসনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি ৷"
আরও পড়ুন : Attack on Matua in Barasat : মতুয়াদের বাস থামিয়ে বেধড়ক মারধর, গুরুতর আহত 2 ; ক্ষুব্ধ শান্তনু