স্বরূপনগর, 8মে : মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তাই সার ৷ ভোট পরবর্তী হিংসা অব্যাহত উত্তর 24 পরগনায় । এবার বিজেপি নেতার কাঠের গুদামঘরে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে । ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে স্বরূপনগরের গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের গুন্ডরাজপুর গ্রামে । আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে কাঠের ওই গুদামঘর । ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন স্বরূপনগর কেন্দ্রের বিজেপি নেতা বৃন্দাবন সরকার । যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা ঘটনার জন্য বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলকেই দায়ী করেছে শাসক শিবির । অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে স্বরূপনগর বিধানসভা এলাকায় ।
স্বরূপনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এবার বিজেপির প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ে নেমেছিলেন বৃন্দাবন সরকার । তরুণ মুখকে প্রার্থী করে গেরুয়া শিবির এই কেন্দ্রে পদ্মফুল ফোটানোর চেষ্টা করেছিল । কিন্তু সেই চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ে তাদের । ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, তৃণমূল প্রার্থীর কাছে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী বৃন্দাবন সরকার । জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে তৃতীয়বারের জন্য বিধায়ক নির্বাচিত হন তৃণমূলের বীণা মণ্ডল । ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরই রাজনৈতিক হিংসা লেগে রয়েছে উত্তর 24 পরগনার স্বরূপনগরে । দু'দিন আগেই স্বরূপনগরের পাড়ুই গ্রামে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঙ্গীতা করের গাড়ি আটকে তাকে প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে । হয় গাড়ি ভাঙচুর । তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির নিরাপত্তারক্ষীও । সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে বিজেপি প্রার্থী বৃন্দাবন সরকারের বাড়ির কাঠের গুদামঘরে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে ।
জানা গিয়েছে, বৃন্দাবন সরকারের অবর্তমানে শুক্রবার গভীর রাতে গুন্ডরাজপুরের গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা । বাড়ি সংলগ্ন কাঠের গুদাম ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা । প্রতিবেশীদের নজরে আসতেই শুরু হয় চিৎকার চেঁচামেচি । ঘুম ভেঙে যায় বৃন্দাবনবাবুর ভাইয়ের । কিন্তু কিছু করার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে ফেলে গুদামঘর । ভস্মীভূত হয়ে যায় কাঠের গুদামঘরটি । রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা । এদিকে,খবর পেয়ে শনিবার সকালে গ্রামের বাড়িতে আসেন বিজেপি প্রার্থী বৃন্দাবন সরকার । ঘটনার পরই শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি ।
বৃন্দাবন সরকার বলেন, "এর আগেও আমার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা হয়েছিল । কিন্তু, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি । গতকাল মা অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় । বাবাও সেখানে ছিলেন । বাড়িতে একা ছিল ছোট ভাই । সেই সুযোগে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়ে বাড়ির কাঠের গুদামে আগুন লাগিয়ে দেয় । পুড়ে গিয়েছে গুদামের যাবতীয় জিনিস ৷" তাঁর অভিযোগ, হামলা হতে পারে সেই আশঙ্কার কথা পুলিশকে জানানো হয়েছিল । কিন্তু, দু'জন সিভিক ভলেন্টিয়ার পাঠানো ছাড়া পুলিশ আর কিছুই করেনি । হাত গুটিয়ে বসে ছিল । রাজ্যে কোনও আইনের শাসন নেই । অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত ৷ সন্ত্রাস পরিস্থিতিতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করারও দাবি তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী ।
আরও পড়ুন : অশোকনগরে তৈরি হবে মিনিটে ৫০০ লিটার অক্সিজেন উৎপাদনের প্লান্ট
যদিও, ঘটনার সঙ্গে দলের সম্পর্ক উড়িয়ে দিয়েছেন গোবিন্দপুর অঞ্চলের যুব তৃণমূলের সভাপতি আব্দুল হাকিম মিস্ত্রি । তিনি বলেন, "পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির উপর হামলার নজর ঘোড়াতেই বিজেপি প্রার্থীর গুদামঘরে আগুন লাগিয়েছেন তাদের দলের লোকজনই । আমরা হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই । দলনেত্রীর দেখানো শান্তির পথেই আমরা তৃণমূল দলটা করি । তাই বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না ৷" অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে স্বরূপনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে । দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে ৷