বনগাঁ, 29 অগস্ট : পরিবারের অর্থিক অনটনে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি । তবে মন থেকে মুছে যায়নি সবুজ মাঠ ৷ সেই টানেই স্কোরারের কাজ শুরু করেন । আইপিএল-এ স্কোরবোর্ড সামলানোর পর এবার টি-20 বিশ্বকাপে স্কোরার হিসেবে ডাক পেয়েছেন বনগাঁর ছেলে তনয় পান্তি ৷ বিশ্বকাপে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডে স্কোরিং করবেন 32 বছরের তনয় । বিশ্বকাপের মেগা ইভেন্টে খেলোয়াড়দের রান সংখ্যা দর্শকরা জানতে পারবেন তাঁর এক ক্লিকে ।
সীমান্ত শহর বনগাঁর তিন নম্বর স্টেডিয়াম গেট এলাকার বাসিন্দা তনয় পান্তি । বাবা জীবন পান্তি দিনমজুর ৷ মা রেবা দেবী গৃহবধূ । দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে মেজ তনয় । ছোটবেলা থেকে তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল । দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন ৷ কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি । দিনমজুর বাবার ক্ষমতা ছিল না তনয়কে ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার । তবে ক্রিকেট মাঠ কোনদিনও ছাড়তে পারেননি তিনি ৷ ব্যাট বল ছেড়ে মাত্র 14 বছর বয়সে বনগাঁর মাঠে স্কোরিং-এর কাজ শুরু করেন তনয় । দীর্ঘদিন মহকুমা লেভেলে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় স্কোরিং করেছেন । প্রশংসা কুড়িয়েছেন, পুরস্কার পেয়েছেন ৷ সিএবি স্কোরার গৌতম রায়ের নজরে পড়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে তনয়ের । বনগাঁ থেকে পাড়ি দেন কলকাতায় । গৌতম রায়ের হাত ধরে সিএবিতে প্রশিক্ষণ নেন । পরবর্তীতে পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফল করে সিএবির স্কোরার হয়ে ওঠেন তনয় । ক্রিকেটার হতে না পারলেও ক্রিকেট মাঠের সঙ্গে সম্পর্ক পাকা হয় তাঁর ।
এভাবেই গতবছর আইপিএলে স্কোরিং করার ডাক পান তনয় । বিদেশের মাঠে স্কোরিং করার সেটাই প্রথম সুযোগ ৷ সেখানে ভাল কাজের পুরস্কার হিসেবে টি-20 বিশ্বকাপে স্কোরারের কাজের ডাক পেয়েছেন । সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও ওমানে 17 অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে টি-20 বিশ্বকাপ ৷ চলবে 15 নভেম্বর পর্যন্ত । সেখানে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডে স্কোরিং-এর দায়িত্বে থাকবেন তনয় । তার আগে আইপিলে স্কোরিং-এর দায়িত্ব সামলাবেন তিনি । সেপ্টেম্বরের 4 তারিখ বাড়ি থেকে দুবাইয়ে উদ্দেশে রওনা দেবেন তনয় । ইতিমধ্যে কাগজ ও ব্যাগপত্র গোছাতে শুরু করেছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Tokyo Paralympics 2020 : হাই জাম্পে রুপো জয় নিশাদ কুমারের
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার তাঁকে ক্রিকেটারে পরিণত হতে সাহায্য করতে পারেনি ৷ কিন্তু তনয়ের বর্তমান কাজে পরিবারের লোকজনের যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে ৷ তনয় বলছেন, "ক্রিকেটার না হওয়ার দুঃখটা ভুলে থাকার জন্য স্কোরার হওয়া ৷ পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা না থাকায় বিশ্বকাপে পৌঁছানো আমার পক্ষে সম্ভব হত না ।" ছেলে এত বড় প্রতিযোগিতায় স্কোরিং করবে শুনে উচ্ছ্বসিত তনয়ের মা রেবা পান্তি ৷ তিনি বলছেন, "অর্থিক অনটনে ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি । ও নিজের ইচ্ছায় আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে । ছেলে এত বড় খেলায় স্কোরিং করবে শুনেই খুব ভাল লাগছে । ও যা করবে আমরা সবসময় ওর পাশে আছি ।"
বিশ্বকাপ টি-20-তে স্কোরারের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত তনয় । চোখের সামনে দেশি-বিদেশি একাধিক নামজাদা ক্রিকেটার ৷ কাজের চাপে তাদের সঙ্গে ছবি তোলা বা কথা বলার সুযোগ না হওয়ায় কিছুটা মন খারাপ তাঁর । তবে আইপিএল-এ স্কোরিং করার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তার পিঠ চাপড়ে উৎসাহিত করে ছিলেন । আনন্দে আপ্লুতও হয়ে গিয়েছিলেন । সিএবিতে স্কোরারের কাজ করে বছরে লাখ খানেক টাকার বেশি রোজগার হয় না । তাই ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তনয়কে ।
আরও পড়ুন : Tokyo Paralympics 2020 : জাতীয় ক্রীড়া দিবসে 3নং পদক, ডিসকাস থ্রোয়ে ব্রোঞ্জ জয় বিনোদ কুমারের
তনয়ের ইচ্ছে ভবিষ্যতে বিসিসিআই-এর স্কোরার হওয়ার । বোর্ডের আয়োজিত টুর্নামেন্টে স্কোরিংয়ের কাজ করার ৷ তাই টি-20 বিশ্বকাপ শেষে বিসিসিআইয়ের স্কোরার-এর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চান । এতে পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য আসবে ৷