বারাসত, 13 সেপ্টেম্বর: উৎকণ্ঠা, স্বস্তির পর এল সুখবর ৷ প্রথম ভারতীয় হিসেবে একসঙ্গে হিমাচলের 'মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা' শৃঙ্গ জয় করলেন চার বাঙালি পর্বতারোহী (Bengal Mountaineers Climb Up Mount Ali Ratni Tibba)। নিখোঁজ হওয়ার আগেই চিন্ময় মণ্ডল, অভিজিৎ বণিক, দিবস দাস ও বিনয় দাস নামে বাংলার চার অভিযাত্রী দুর্গম এই পর্বত শৃঙ্গ সফলভাবে আরোহণ করেছেন ৷ কোনওরকম গাইড কিংবা বিশদ উপকরণ ছাড়া 'আল্পাইন স্টাইল' পদ্ধতিতে এল এই সাফল্য। যা বাংলার পর্বতারোহণের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেই মনে করছে পর্বতারোহী মহল ।
7 সেপ্টেম্বর হিমাচল প্রদেশের কুলুর বেসক্যাম্প থেকে সামিটের দিকে রওনা হওয়ার পর থেকেই খোঁজ মিলছিল না চার বাঙালি পর্বতারোহী অভিজিৎ বণিক, চিন্ময় মণ্ডল, বিনয় দাস এবং দিবস দাসের । 24 ঘণ্টা পরও তাঁদের বেসক্যাম্পের দিকে ফিরতে না-দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান শেরপা। বিপদের আঁচ পেয়ে তিনি বাকি দুই পর্বতারোহীকে সঙ্গে নিয়ে কুলুর মালানার কাছে ওয়াচেম নামে একটি গ্রামে পৌঁছে যোগাযোগ করেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে । তারপরই সামনে আসে ওই চার পর্বতারোহীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি। এরপর তাঁদের হদিশ পেতে কুলুর জেলা প্রশাসন অটল বিহারী মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সাহায্য নিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে ।
আরও পড়ুন : এভারেস্টের পর এবার লোৎসে, অক্সিজেন ছাড়া চতুর্থ উচ্চতম শৃঙ্গ জয় পিয়ালীর
তবে উদ্ধারকারী দলের তরফে সেই সময় তেমন কোনও অগ্রগতি না-হওয়ায় শেষে বায়ুসেনার সাহায্য নেওয়া হয় ৷ সাফল্য আসে রবিবার। সেদিনই নিখোঁজ চার বাঙালি পর্বতারোহীকে সুস্থ অবস্থায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায় বায়ুসেনার উদ্ধারকারী দল। সোমবার তাঁদের বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে নিয়ে যাওয়া হয় কুলুর বেসক্যাম্পে। উদ্ধারের পর ওই চার পর্বতারোহীর 'মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা' শৃঙ্গজয়ের বিষয়টি সামনে আনেন তাঁরা ।
পর্বতারোহীদের কথায় জানা গিয়েছে, 7 সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটা নাগাদ যখন তাঁরা দুর্গম এই শৃঙ্গের দিকে এগোচ্ছেন তখনও শৃঙ্গের মাথা প্রায় 200 মিটার উঁচুতে । এই অবস্থায় 5 হাজার 300 মিটার উচ্চতা সম্পন্ন 'মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা' শৃঙ্গে কোনও স্লিপিং ব্যাগ, তাঁবু এবং স্নো-বুট ছাড়াই একটি পাথরের গর্তে রাত কাটান চার পর্বতারোহী । সেই রাতেই লাইট সিগন্যালিং করে সামিট ক্যাম্পে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টাও করেন তাঁরা । কিন্তু আলো বেস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছয়নি । ওয়াকি টকিও কাজ করা বন্ধ করে দেয় । তবে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও হাল ছাড়েননি পর্বতারোহীরা । পরের দিন সকালে ফের পর্বতারোহণ শুরু করেন তাঁরা । অবশেষে সাড়ে আটটা নাগাদ 'মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা' শৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছান চার পর্বতারোহী । কোনও গাইড ছাড়াই এরকম টেকনিক্যাল পিক সামিট ছোঁয়া অত্যন্ত কৃতিত্বের বলেই মনে করছে পর্বতারোহী মহল ।
আরও পড়ুন : হিমালয়ের অন্যতম দুই শৃঙ্গ জয় চুঁচুড়ার সাঁতার প্রশিক্ষকের
আরও জানা গিয়েছে, সেফটি গিয়ার খুলে ফের দড়ির সাহায্যে র্যাপলিং করে নামতে নামতে ওই চার পর্বতারোহীর সন্ধ্যা হয়ে যায় । ততক্ষণে বেসক্যাম্প খালি । এদিকে, 8 সেপ্টেম্বর দুপুরেই পর্বতারোহীদের সম্পর্কে অ্যালার্ট জারি করা হয় কুলুর জেলা প্রশাসনের তরফে । ক্লান্ত হয়ে 9 সেপ্টেম্বর সামিট ক্যাম্পেই বিশ্রাম নেন চারজন । ওইদিন ভোরে শেরপা নিচে নেমে এসে তাঁদের নিখোঁজের সংবাদ দেন । সেদিনই উদ্ধারকারী দল চার পর্বতারোহীর খোঁজে রওনা দেয় বেসক্যাম্পের উদ্দেশ্যে । তারপরই খোঁজ পাওয়া যায় তাঁদের ৷
এই চার পর্বতারোহীর শৃঙ্গ জয়ের কৃতিত্বে গর্বিত পরিবারের লোকেরা । আনন্দে আত্মহারা বারাসতের (Barasat News) চিন্ময় মণ্ডলের পরিবারও । এখন ছেলের হৃদয়পুরের বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় মা প্রমিলা মণ্ডল। চিন্ময়ের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে চান পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ।
আরও পড়ুন : ট্রেকিংয়ে গিয়ে নিখোঁজ চার বাঙালি পর্বতারোহীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার বায়ুসেনার