কামারহাটি, 15 এপ্রিল : নির্বাচনের উত্তপ্ত আবহে ভোট পাখি হয়ে ঘুরে বেড়ানোর দলে তাকে ফেলা যাবে না । ফেললে অন্যায় হবে । অশীতিপর মানুষটি আদর্শ নীতির টানে সবকিছু ছেড়ে সেই যে কবে ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিলেন তার বদল হয়নি । দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পালাবদল দেখেছেন । অংশ নিয়েছেন । এই উপত্যকার প্রতিটি ঘাস তার চেনা । কার্যত নিজেই হয়ে উঠেছেন চলমান এনসাইক্লোপিডিয়া ।
রাজ্য এবং দেশের নির্বাচনের অঙ্ক হাতের তালুর থেকে বেশি চেনেন । তাই কোন চালে বিরোধীকে পিছনে ফেলা যাবে সেই অঙ্ক তার ঠোঁটের ডগায় । অনিল বিশ্বাস পরবর্তী আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে একমাত্র সিধুজ্যাঠা বিমান বসু । পক্ককেশ, মাঝারি উচ্চতা, পরনে দুধ সাদা ধুতি পাঞ্জাবিতে বিমান বসু বাঙালির রাজনৈতিক অঙ্গের শেষ ধারক-বাহক । দাবদাহে যখন প্রায় সকলেরই চাতক পাখির দশা । একটু ছায়ার খোঁজে সবাই, তখন অক্লান্ত বিমান বসু । বুধবার সকালে কামারহাটি কেন্দ্রের প্রার্থী সায়নদেব মিত্রের প্রচারে রোড শো করলেন হুডখোলা জিপে চড়ে । তখনও করোনা পরিস্থিতিতে বড়ো সভা রোড শো "না" করার সিদ্ধান্ত সিপিএম নেয়নি । দুপুরে রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর বৈঠকে নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেই ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান । হয়তো তাঁর পরামর্শে এবং পরিস্থিতি বিচার করেই দল প্রচারে রাশ টেনেছে ।
সংযুক্ত মোর্চার প্রচারকের তালিকায় তাঁর নাম তারকার বন্ধনীতে । মিনাক্ষী, সৃজন, শতরূপ, মধুজারা প্রচারে ঝড় তুললেও মানুষের আগ্রহ আজও বিমান বসুকে ঘিরে । করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভোট হচ্ছে । লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমন । কয়েক সপ্তাহ আগে প্রথম কোনও রাজনৈতিক নেতা তার সাংবাদিক সম্মেলন শুরু করেছিলেন কোভিড বিধিনিষেধ মনে করিয়ে । সাংবাদিকদের সচেতন করেছিলেন । তাদের কোভিড পরিস্থিতিতে সামনে থাকা যোদ্ধা হিসেবে সম্মানিত করেছিলেন । পাশাপাশি সামাগ্রিক দুশ্চিন্তা লুকিয়ে রাখেননি ।
আরও পড়ুন : মোদি-মমতা মিথ্যে কথায় ডক্টরেট, ইস্তাহার প্রকাশ করে বললেন বিমান বসু
কয়েকদিন আগে ঢাকুরিয়া থেকে গড়িয়া রাখতে রোড শোতে প্রবীন মানুষটি চেনা অচেনা ব্যক্তিকে মাস্ক ব্যবহারের উপদেশ দিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন, প্রয়োজনে বকাও দিয়েছেন । বুধবার কামারহাটিতে রোড শোতে এসেই মাস্কহীন স্থানীয় নেতাদের ভৎর্সনা করলেন । অবহেলা করলে করোনা ভাইরাস কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেকথা মনে করিয়ে দিলেন । আসলে প্রচারকের দায়িত্ব সেরেই থেমে যাচ্ছেন না । তাঁর প্রচারের বাস্তবায়ন হল কি না তাও কড়া নজরে রাখছেন ।
রোড শোয়ে তাকে দেখতে উপচে পড়া ভিড়, বহুতলে অপেক্ষমান জনতার হাতজোড় করে শুভেচ্ছা বিনিময়ে সাড়া দিলেন । এলাকার প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে ভোট প্রার্থনা করলেন অশীতিপর মানুষটি । এই মাটির স্পন্দন তাঁর চেনা ।তাঁকে দেখতে বাড়তি ভিড় ।
নিজেকে আড়ালে রেখে নতুনদের এগিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে । আগাগোড়া তা করে এসেছেন । চলতি নির্বাচনে তার ব্যতিক্রম নেই । কুকথার ওড়, শীতলকুচি এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সব দেখছেন । বললেন,"প্রথম থেকে প্ররোচনা মূল কথা হয়েছে । প্ররোচনা মুলক কথায় মানুষের মনে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে । তারপরে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করা হয়েছে ৷ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রচেষ্টা চলছে । এর বিরুদ্ধে মানুষকে রায় দিতে হবে ।"
ছোট্ট অথচ প্রাসঙ্গিক বার্তা দিয়ে বিমান বসুর গাড়ি এগিয়ে চলে । অন্য দল যখন রিলের গ্ল্যামারে আস্থা রাখেন তখন নির্বাচন যুদ্ধে পোড়খাওয়া মানুষটির অক্লান্ত হেঁটে চলা নতুনদের উদ্বুদ্ধ করে । তারুণ্যের তেজেও তাই বাম শিবিরের আজও আস্থা ভরসার প্রতীক বিমান বসু । স্নেহ-শাসনে তিনি সেরা ক্রাউডপুলার ।