গাইঘাটা, 27 নভেম্বর: লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের একবার মতুয়া অস্ত্রে শান বিজেপির । রবিবার মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি । ঠাকুরবাড়ি থেকে শান্তনু ঠাকুরের স্বাক্ষর করা মতুয়া পরিচয়পত্রে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার কথাও এদিন ঘোষণা করেন মন্ত্রী । যদিও মন্ত্রীর মন্তব্যের পিছনে ভোটের রাজনীতি দেখছে তৃণমূল ।
রবিবার রাস উৎসব উপলক্ষে উত্তর 24 পরগনার ঠাকুরনগরেব মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি । দুপুরে হরিচাঁদ মন্দিরে পুজো দিয়ে মতুয়াদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মতুয়াদের আরাধ্যা ঠাকুর হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের কর্মজীবনী তুলে ধরে তার প্রশংসা করেন । এখনও পর্যন্ত মতুয়াদের নাগরিকত্ব না দিতে পারার ক্ষেত্রে বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে মন্ত্রী বলেন, "তাদের সরকার মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি । কিন্তু নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর বিরোধীরা অশান্তি সৃষ্টি করছে ৷ সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা করেছে । তবে আপনাদের চিন্তার কোনও কারণ নেই । তাদের পক্ষ থেকে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে সুপ্রিম কোর্ট থেকে CAA লাগু করার নির্দেশ নিয়ে আসা হবে । সকল মতুয়ারা নাগরিকত্ব পাবে । তার জন্য কোনও নথি দরকার হবে না । যাদের কাছে 31 ডিসেম্বর 2014 সালে আগে ভারতে আসার নথি আছে তারা নাগরিকত্ব পাবে । আর যাদের কাছে কোন নথি নেই তারাও নাগরিকত্ব পাবে ।"
মন্ত্রীর কথায়, "অনেক মতুয়ারা বাইরে যেতে ভয় পান ৷ যদি তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসা করে কোথা থেকে এসেছেন এই ভয়ে । যতদিন না নাগরিকত্ব মতুয়ারা পাচ্ছেন ততদিন শান্তনু ঠাকুরের দেওয়া অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের আইডেন্টিটি কার্ড নিয়ে তারা সারা দেশে ঘুরতে পারবে ।"
মন্ত্রীর বক্তব্যে শান্তনু ঠাকুরের ব্যাখ্যা, "অনেক ক্ষেত্রে মতুয়ারা পুলিশ প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশি হিসাবে হয়রানি হন । এবার থেকে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের দেওয়া আইডেন্টিটি কার্ড কাছে থাকলে সেই হয়রানি আর হতে হবে না । এটা মতুয়াদের কাছে অনেক বড় পাওনা ।"
এই বিষয়ে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "এমনটা হয় নাকি ? যে একজন মন্ত্রী কোনও একটা আইন করে দিতে পারে ? এরা মানুষকে মূর্খ মনে করছে । এই ভাঁওতা দিয়ে 2019 এ ভোটে জিতেছিল । সেই ভাঁওতা দিয়ে আবার ভাবছে 2024 এর ভোট বৈতরণী পার হবে । লোকসভা ভোটে গদি হারানোর ভয়ে ওদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে । মতুয়াদের নাগরিকত্ব নেওয়ার ওদের ক্ষমতা নেই ।"
প্রসঙ্গত, 2019 এর লোকসভা ভোটের আগে ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন । তারপরে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করে বিজেপি । কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের সেই সমীকরণ অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে । বনগাঁ লোকসভায় অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই ধরাশায়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির । দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নাগরিকত্ব না পেয়ে মতুয়াদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল । রাজনৈতিক মহলের মতে 2014 এর লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়াদের মন পেতে ফের নাগরিকত্ব অস্ত্রে শান দিচ্ছে বিজেপি ।
আরও পড়ুন :
1 সিপিএমে আইডেন্টিটি পলিটিক্স ! মতুয়া-কুড়মি-এসসি-ওবিসিদের ভোট টানতে উদ্যোগী আলিমুদ্দিন স্ট্রিট
2 ঠাকুরবাড়িতে তৃণমূল-বিজেপি মতভেদ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি মতুয়া ভক্তরা
3 বিজেপি বলছে মন্দিরে যেতে অ্যাপয়নমেন্ট নিতে হবে, ঠাকুরবাড়ির ঘটনা নিয়ে মন্তব্য অভিষেকের