বসিরহাট, 20 মে : আমফানের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও টাটকা সুন্দরবনের মানুষের মনে । একবছর আগের সেই দগদগে ঘা এখনও বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের । তারই মধ্যে ফের ঘূর্ণিঝড় যশ-এর ভ্রুকুটি । যা রীতিমতো চিন্তা বাড়িয়েছে উত্তর এবং দক্ষিণ 24 পরগনার সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দাদের । যশ-এর আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের । আতঙ্কিত বাসিন্দাদের একটাই শঙ্কা, যশ-এর জেরে তাঁদের ঘরবাড়ির ক্ষতি হবে না তো ? কোনও প্রভাব পড়বে না তো জীবনযাত্রায় ? নাকি ঘরবাড়ি খুইয়ে আবারও তাঁদের আশ্রয় নিতে হবে সেই সরকারি কোনও স্কুল কিংবা শেল্টারে ? এরকমই নানা প্রশ্ন তাড়া করে বেড়াচ্ছে বসিরহাটের সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দাদের মনে ।
লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই গত বছর বিধ্বংসী আমফান ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে । তারিখটা ছিল 20 মে । যার একবছর পূর্ণ হল আজ । সেদিন সুপার সাইক্লোন আমফানের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা । ঘরবাড়ি, চাষাবাদ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল । ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নদী তীরবর্তী বাঁধের । বাদ যায়নি প্রাণহানিও । রীতিমতো সেদিন ঘূর্ণিঝড় আমফান ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল উত্তর এবং দক্ষিণ 24 পরগনার সুন্দরবন অঞ্চলে । আমফানের জেরে সুন্দরবন ঘেঁষা বসিরহাট মহকুমার, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁ, হাড়োয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল । ঘরবাড়ি হারিয়ে বহু মানুষকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল সরকারি কোনও স্কুল কিংবা শেল্টারে । বিদ্যাধরী, রায়মঙ্গল, ইছামতি, কালিন্দী, বেতনী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল একের পর এক পঞ্চায়েত এলাকা । নোনা জল ঢুকে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল কৃষিজমিরও । শেষে সরকারি সহায়তায় ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা । তারই মধ্যে ফের ঘূর্ণিঝড় যশ-এর ভ্রুকুটি । এবারও সেই করোনা আবহে । গত বছরের থেকে এবার কোভিড আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে । সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধও জারি হয়েছে রাজ্যে । এসবের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসনের ।
আরও পড়ুন, বছর ঘুরে আমফানের স্মৃতি এখনও টাটকা, চোখ রাঙাচ্ছে যশ
একই সুর শোনা গিয়েছে রাম বাগ নামে আরেক বাসিন্দার গলাতেও । তিনি বলেন, "আমফান ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু তছনছ হয়ে গিয়েছিল । সেই দুঃসময় কাটিয়ে আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলাম । আবার এক বছরের মাথায় ঘূর্ণিঝড় যশ-এর পূর্বাভাস। যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছি আমরা ৷"
ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় তাঁরা সব রকমভাবে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত বিশ্বাস । তিনি বলেন, "আমফানের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম । এবারও সেরকম কিছু হলে আমরা সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াব । রাজ্য সরকার যেরকম নির্দেশ দেবে সেভাবে আমরা চলব ৷ "
প্রসঙ্গত,বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত ঘূর্ণিঝড় যশ আগামী 26 মে আছড়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলে । যার প্রভাবে দু-একদিন আগে থেকেই ভারী বৃষ্টি শুরু হবে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে । তবে ঝড়ের গতিবেগ কত হবে, ঠিক কোথায় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে, তা নিয়ে এখনও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি আবহাওয়া অফিসের তরফে। মনে করা হচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা উপকূল কিংবা সুন্দরবনের উপকূল এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে যশ। তার মোকাবিলায় ইতিমধ্যে সবরকমের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার । উপকূলবর্তী তিন জেলা প্রশাসনকে যাবতীয় প্রস্তুতি এবং পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । মৎস্যজীবীদেরও সমুদ্র কিংবা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ।