বারাসত, 14 মার্চ: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এসএসসি গ্রুপ-সি’র চাকরি খুইয়েছেন আগেই (Suman Mondal Lost His Group-C Job) ৷ চাকরি যেতেই এবার কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মী সুমন মণ্ডল সম্পর্কে বেরিয়ে এল নতুন তথ্য ৷ তোলাবাজি থেকে দাদাগিরি, ব্যবসায়ীদের হুমকি-সহ নানান অভিযোগ উঠে এসেছে তাঁর বিরুদ্ধে (Suman Mondal Collects Extortion) ৷ অভিযোগ, এলাকায় সুমনের দাপট এতটাই ছিল যে, সাধারণ মানুষজন তাঁকে সমঝে চলত ৷
কান পাতলেই তাঁর সম্পর্কে নানান কথা বর্তমানে সামনে আসতে শুরু করেছে ৷ অভিযোগ সুমন মণ্ডলের পিছনে শাসকদলের প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের একাংশের হাত রয়েছে ৷ তাই সাহস করে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেনি কোনওদিন ৷ তবে, আদালতের নির্দেশে তাঁর চাকরি যেতেই তৃণমূলের এই কর্মীর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন স্থানীয়রা ৷ অধিকাংশই স্বীকার করে নিয়েছেন সুমন মণ্ডলের অনৈতিক কাজকর্মের কথা ৷ তাঁর কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসতেই তেড়েফুড়ে মাঠে নেমে পড়েছে বিরোধীরা ৷
উত্তর 24 পরগনার বারাসতের 1 নম্বর গীতাঞ্জলি পল্লিতে বাস এসএসসি গ্রুপ-সি’র চাকরিহারা সুমন মণ্ডলের ৷ এলাকাটি পৌরসভার 3 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ৷ এসএসসি গ্রুপ সি পদের চাকরি পাওয়ার আগে অবশ্য ক্যাজুয়াল হিসেবে কাজ করতেন পৌরসভাতে ৷ বছর দেড়েক কাজ করেছিলেন সেখানে ৷ এরপর হঠাৎই তিনি চাকরি পেয়ে যান বিশরপাড়ার একটি স্কুলে ৷ সেই চাকরি নিয়ে সকলের মনে অজস্র প্রশ্ন থাকলেও, কেউ সাহস করে তা বলতে পারেনি ৷ এমনকি তাঁর চাকরির রহস্য উন্মোচন হয়নি ৷
সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে সুমন মণ্ডলের চাকরি বাতিল হতেই, যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর মিলতে শুরু করেছে ৷ অন্যান্য চাকরি প্রাপকদের মতো তাঁরও ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছিল তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে ৷ যার জেরে গ্রুপ-সি পদের চাকরি খোয়াতে হয়েছে এই তৃণমূল কর্মীকে ৷ নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে জানা গিয়েছে, পরীক্ষায় তিনি সবমিলিয়ে মোট ন'টি প্রশ্নের উত্তর দিলেও মাত্র এক নম্বর পেয়েছিলেন ৷ সেই নম্বরই পরবর্তী সময়ে এসএসসি-র ওয়েবসাইটে বাড়িয়ে করে দেওয়া হয়েছে 54 ৷
এসবের মধ্যে এবার চাকরিহারা তৃণমূল কর্মী সুমন মণ্ডলের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে তোলাবাজি, হুমকি, দাদাগিরির মতো মারাত্মক অভিযোগ ৷ সূত্রের খবর, 2013 সাল থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত সুমন ৷ আগে প্রয়াত তৃণমূল কাউন্সিলর প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ বর্তমানে প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্যের স্ত্রী স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মৌমিতা ভট্টাচার্যের আস্থাভাজন সুমন ৷ তাঁর হয়ে পৌরসভা নির্বাচনে দাপটের সঙ্গে এলাকায় প্রচারও করতে দেখা গিয়েছে ৷
শুধু মৌমিতা কেন ! পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গেও সুমনের ঘনিষ্ঠতার ছবি সামনে এসেছে ইতিমধ্যে ৷ তাঁদের প্রশ্রয়ে সুমন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াত বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ কখনও মন্ত্রীর নাম করে তোলাবাজি, আবার কখনও তৃণমূল নেতাদের একাংশের নাম ভাঙিয়ে চমকানো ৷ সবটাই সে করতেন নিজের মতো করে ৷ এখন এসএসসি গ্রুপ-সি’র চাকরি হারিয়ে জোর চর্চায় সেই সুমন মণ্ডল ৷
সুমন মণ্ডলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ সামনে আসায়, তার সত্যতার অনুসদ্ধানে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর এলাকাতে ৷ সেখানেই এলাকার বাসিন্দা প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় সুমনের সব কীর্তির কথা তুলে ধরলেন ৷ তিনি বলেন, "স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান ৷ সকলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই সুমন মণ্ডল ৷ তাঁর নামে এলাকায় বহু অভিযোগ রয়েছে ৷ তোলাবাজি, দাদাগিরি, হুমকি দিয়ে নিজের আখেড় গুছিয়ে নেওয়া ৷ সবটাই যেন বাঁ হাতের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর ৷ আমরা চাই, এসব অভিযোগ এখন খতিয়ে দেখা হোক ৷"
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতিতে ফের মুখ পুড়ল শাসকদলের, এবার চাকরি খোয়ালেন তৃণমূল বিধায়কের মেয়ে
বিষয়টি নিয়ে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরাও ৷ এই বিষয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতা দীপ্ত কুমার লস্কর জানিয়েছেন, সুমন মণ্ডলের অনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা অবহিত ৷ কিন্তু, শাসকদলের একজন সক্রিয় কর্মী এবং তাঁর মাথায় প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে ৷ তাই সুমনের যাবতীয় অন্যায়ের ন্যায় বিচার সাধারণ মানুষ পায়নি ৷ আর সুমন মণ্ডলের মতো এমন অনেকে বারাসত-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ ৷
অন্যদিকে, যার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ সেই সুমন মণ্ডলকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি ৷ ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি ৷ তাঁর পরিবারে কেউ সংবাদমাধ্য়মের সঙ্গে কথা বলেনি ৷ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মৌমিতা ভট্টাচার্যও ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হননি ৷ তবে, ফোন করা হলে তিনি বলেন, "সুমনের মতো অনেকেই আমার কাছের ৷ তাই তাঁর চাকরি যাওয়া না যাওয়া, আমার কোনও ব্যাক্তিগত বিষয় হতে পারে না ৷ ওর সম্পর্কে কোনও অভিযোগ পাইনি ৷ কী করে বলব সেই সমস্ত অভিযোগ আদৌও সঠিক কিনা ?’’
বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আইন আইনের মতো করে চলবে ৷ কোনও মানুষ যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী তাঁর শাস্তি হবে ৷ সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না বলে দাবি করেছেন অশনি মুখোপাধ্যায় ৷ তবে, সমুন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ওঠা তোলাবাজি ও দাদাগিরি অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যানের ৷ তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন ৷