বারাসত, 20 নভেম্বর: অবৈধভাবে নয়, বৈধভাবেই তৃণমূল নেতার দাদার (TMC leader brother house) সরকারি প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে পুকুরের ধারে শালী জমিতে । পুলিশের তদন্তের আগেই ইটিভি ভারতের সামনে এমন দাবি করে কার্যত তাতে বৈধতার সিলমোহর দিয়ে দিলেন বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান (Barasat Municipality Chairman) তথা তৃণমূল নেতা অশনি মুখোপাধ্যায় । দাবির সময় জমির যাবতীয় নথিপত্রও তিনি তুলে ধরেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে । যা ঘিরে নতুন করে দেখা দিয়েছে বিতর্ক ।
যদিও চেয়ারম্যানের দাবিকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ । সরকারি নথিতে জমির চরিত্র শ্রেণি পুকুর হিসেবে দেখানো রয়েছে বলে দাবি তাঁদের । সেই নথি সমেত অবৈধ নির্মাণ হওয়ার যাবতীয় কাগজপত্র ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জমাও দিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা । অভিযোগও দায়ের হয়েছে বারাসত থানায় । পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে । কিন্তু, তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই বৈধ নির্মাণ বলে চেয়ারম্যান সিলমোহর দিয়ে দেওয়ায় হতবাক সকলে (Controversy over illegal construction on Barasat) ।
প্রসঙ্গত, পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণপুর এলাকায় পুকুরের মধ্যে সরকারি আবাস যোজনা প্রকল্পের বাড়ি তৈরি করছেন ওখানকারই যুব তৃণমূল সভাপতির দাদা জয়দীপ পাল । যা ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক । কীভাবে পুকুরের মধ্যেই সরকারি প্রকল্পের বসতবাড়ি নির্মিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যেমন সরব হয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ (Illegal Construction) । তেমনই পৌরসভা এবং শাসকদলের স্থানীয় চিকিৎসক কাউন্সিলরের ভূমিকাও সন্দেহের উর্ধ্বে রাখছেন না তাঁরা ।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, "কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠ ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ পাল ক্ষমতার জোরে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে নিজের দাদাকে সরকারি বাড়ি পাইয়ে দিয়েছেন । আর সেই বাড়িই নির্মাণ করা হচ্ছে পুকুরের একধারে । কোনওরকম আইন না মেনে ।" যার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা । অবৈধ নির্মাণে মদত দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি কাউন্সিলর সুমিত সাহার নামে পোস্টারও পড়ে ওয়ার্ডে । এসবের মধ্যেই এবার কাউন্সিলরের পাশে দাঁড়িয়ে ওই বাড়ি নির্মাণের স্বপক্ষে তথ্য দিয়ে যাবতীয় অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা করলেন বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় ।
এই বিষয়ে ইটিভি ভারতের সামনে তিনি দাবি করে বলেন, "2018-19 আর্থিক বর্ষে ওই সরকারি প্রকল্পের বাড়িটি অনুমোদন পেয়েছিল । বাড়িটি তৃণমূল নেতা প্রদীপ পালের নয় । নির্মিত হচ্ছে তাঁর দাদা জয়দীপ পালের নামে । পুকুরের মধ্যে অবৈধ নির্মাণের যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ঠিক নয় । আমাদের কাছে যে নথিপত্র রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে পুকুরের ধারে 0.01 একর শালী জমির মধ্যেই সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে সরকারি প্রকল্পের বাড়িটি নির্মিত হচ্ছে । সেই জমির অংশ হস্তান্তর হয়েছিল 2008 সালে । তখন নবনীল বন্দোপাধ্যায় নামে এক ব্যাক্তির কাছ থেকে তা কিনেছিলেন প্রদীপ পাল-সহ তাঁর চার ভাই । ব্লু প্রিন্ট, জমির দলিল, প্লট নম্বর সবকিছুতেই তা শালী জমি হিসেবে রয়েছে ।"
এরপরও কীভাবে তা নিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন পৌরসভার চেয়ারম্যান । যদিও, তাঁর দাবির সঙ্গে সহমত নন রামকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ । এই বিষয়ে বিশ্বজিৎ চৌধুরী নামে এক বাসিন্দা বলেন, "অসত্য দাবি করছেন চেয়ারম্যান । বিপদে পড়ে উনি এখন ওঁনার দলের নেতাকে বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছেন । আমাদের কাছে সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে । সবচেয়ে বড় কথা,সরকারি নথিতেই সেটি শ্রেণি পুকুর হিসেবে দেখানো রয়েছে । এরপরও তিনি কি করে দাবি করেন, সেটি শালী জমি ! আমরা চাই পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করে এই অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করার ব্যবস্থা করুক ।"
আরও পড়ুন: ইটিভি ভারতের খবরের জের, অবৈধ নির্মাণে তৃণমূল নেতাকে থানায় তলব
এদিকে, চেয়ারম্যানের দাবির পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে বলে মনে করছেন গেরুয়া শিবিরও । এই বিষয়ে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, "উনি কোথা থেকে কি তথ্য পেলেন তা আমরা জানি না । এটুকু জানি, ওখানকার বাসিন্দারাই এই অবৈধ নির্মাণ নিয়ে আন্দোলন করছে । তাঁদের কাছে তার প্রমানপত্রও রয়েছে । এখন রাতারাতি সেটি শালি জমি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে । বোঝাই যাচ্ছে ডাল মে কুছ কালা হ্যায় ! সঠিকভাবে তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে ।"